বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম সেমিফাইনালে ৫ উইকেটে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে ফাইনাল খেলছে উপমহাদেশের দুই দেশ।

মোহালিতে বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিজয়ী দল খেলবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। খেলাটি হবে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, ২ এপ্রিল।

এ জয়ের ফলে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে গতবারের রানার্সআপরা। এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে নিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

অন্যদিকে সেমিফাইনাল থেকে ষষ্ঠবারের মতো বিদায় নিতে হলো নিউজিল্যান্ডকে।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে রান তাড়া করতে গিয়ে তিলকারতেœ দিলশান ও দলনায়ক কুমার সাঙ্গাকারার অর্ধশতকের সুবাদে ৪৭ ওভার ৫ বলে জয়ের লক্ষ্য ২১৮ টপকে ২২০ রানে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কট স্টাইরিসের অর্ধশতকের পরও ৪৮ ওভার ৫ বলে ২১৭ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালোই শুরু করে শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধনী জুটিতে ৪০ রান করে উপুল থারাঙ্গা ও দিলশান চমৎকার সূচনা এনে দেন দলকে। থারাঙ্গা বিদায় নেন ৩০ রান করে। তার ৩১ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও একটি ছক্কা রয়েছে।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দিলশান ও সাঙ্গাকারা দলের সঙ্গে ১২০ রান যোগ করলে খেলার পাল্লা হেলে যায় শ্রীলঙ্কার দিকে। দলীয় ১৬০ রানের মাথায় সাজঘরের পথ ধরার আগে দিলশান ৯৩ বলে করেন ৭৩। তিনি তার ইনিংসটি সাজান ১০টি চার ও ১টি ছক্কা দিয়ে। এটি বিশ্বকাপে তার তৃতীয় অর্ধশতক। একদিনের ক্রিকেটে ২২তম।

এরপরই হোঁচট খায় শ্রীলঙ্কা। ১৬১ রানের মাথায় মাহেলা জয়াবর্ধনে (১), ১৬৯ রানের মাথায় সাঙ্গাকারা (৫৪) ও ১৮৫ রানের মাথায় চামারা সিলভা (১২) বিদায় নিলে জয়ের পথটা একটু কঠিন হয়ে যায়। তবে মুখ থুবড়ে পড়েনি।

সাঙ্গাকারার ৭৯ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ১টি ছক্কা রয়েছে। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে তার সপ্তম অর্ধশতক। একদিনের ক্রিকেটে ৬২তম।

এরপর আর শ্রীলঙ্কাকে পেছন ফিরে তাকাতে দেননি থিলান সামরাবীরা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৫ রান করে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের ঠিকানায়।

শেষ পর্যন্ত সামারাবীরা ২৩ ও ম্যাথিউস ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।

নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টিম সাউদি ৩ উইকেট নেন ৫৭ রানে।

প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একেবারে খারাপ করেনি নিউজিল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে ৩২ রানের মোটামুটি মানের একটা ভিত্তি গড়ে দেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্টিন গুপটিল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

তবে শ্রীলঙ্কার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে ওভার প্রতি রান তোলার হার কখনোই ভালো ছিল না নিউজিল্যান্ডের। দলীয় ৬৯ রানের মাথায় ম্যাককালাম ও ৮৪ রানের মাথায় গুপটিল বিদায় নেন। তখনো রান তোলার হার ছিল ৪-এর নিচে।

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (২১ বলে ১৩ রান), জেসি রাইডার (৩৪ বলে ১৯ রান) ও মার্টিন গুপটিল (৬৫ বলে ৩৯ রান), তিনজনই শুরুটা ভালোই করেন। কিন্তু কেউই তাদের ইনিংসকে যেমন বড় করতে পারেননি, তেমনি ওভার প্রতি দ্রুত রানও তুলতে পারেননি তারা। গুপটিলের স্ট্রাইক রেট ৬০, ম্যাককালামের ৬১.৯০ ও রাইডারের ৫৫.৮৮।

তবে ২৫ ওভার খেলা হওয়ার পর রান তোলার গতি বাড়ানোর দিকে নজর দেন রস টেলর ও স্কট স্টাইরিস। কিন্তু বোলারদের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ের মুখে সুবিধা করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। রান তোলার হার ৪ কিংবা এর আশপাশেই ঘুরপাক খেতে থাকে।

রানের হার বাড়াতে গিয়ে ১৬১ রানের মাথায় চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে অজন্তা মেন্ডিসের বলে উপুল থারাঙ্গার হাতে ধরা পড়ার আগে টেলর করেন ৫৫ বলে ৩৬। স্ট্রইক রেট ৬৫.৪৫।

তবে খেলে যেতে থাকেন স্টাইরিস। অন্য ব্যাটসম্যানদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি মারমুখী ছিলেন তিনি। আদায় করে নেন বিশ্বকাপে তার ষষ্ঠ অর্ধশতক। ৭৭ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। চার মারেন ৫টি। স্ট্রাইক রেট ৭৪.০২। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি বিদায় নেন ২১৩ রানের মাথায়।

এর আগে ১৯২ রানের মাথায় কেন উইলিয়ামসনের (১৬ বলে ২২ রান) বিদায়ের পর পাঁচ ব্যাটসম্যান ফিরে যান ২৫ রানের মধ্যে।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে ৩ উইকেট নেন অজন্তা মেন্ডিস ও লাসিথ মালিঙ্গা। এ জন্য মেন্ডিস রান দেন ৩৫। মালিঙ্গা ৫৫।

গ্র”প পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে ১১২ রানের বড় ব্যবধানে হার মানে নিউজল্যান্ড।

বিডি নিউজ-