নিশ্চিতভাবেই বুয়েন্স আয়ার্সে আজ উৎসব হবে। গোটা আর্জেন্টিনাতেও। একটু আনমনা কষ্ট নিয়ে ফ্রান্সের ছোট্ট শহর ব্রেস্টও কি দুলে উঠবে না? খুব উঠবে… ওখানেই যে গঞ্জালো হিগুয়াইনের জন্ম। জোহানেসবার্গের সকার সিটিতে সবাইকে ছাপিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে যিনি আর্জেন্টাইন ফুটবলের সেরা বিজ্ঞাপন। স্রেফ তার অবিশ্বাস্য হ্যাটট্রিকের কারণেই কেবল আর্জেন্টিনা নয়… লাতিন আমেরিকা থেকে ইউরোপ… এশিয়া থেকে আফ্রিকা… আসলে গোটা পৃথিবীর উজ্জ্বলতম রঙ এখন আকাশি-নীল। আর এ রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার কারিগর হিগুয়াইন। আফ্রিকান বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান হিগুয়ানই। যিনি জন্মগতভাবে আর্জেন্টাইন না হয়েও ম্যারাডোনা, মেসি, তেভেজকে ছাপিয়ে গভীরভাবে আর্জেন্টাইন।
যে কোনো হ্যাটট্রিকই বিরল। সেই অর্থে বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক বিরলতম। আর দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হিগুয়াইনের হ্যাটট্রিক সবকিছু ছাপিয়ে অনন্য। কেন… তা বোঝার জন্য পরিসংখ্যানের ধূসর পাতায় একবার চোখ বোলানো যাক।
শেষবারের মতো বিশ্বকাপ হ্যাটট্রিক প্রত্যক্ষ করেছে এশিয়া। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানের যৌথ আয়োজনে সংগঠিত সেই বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পর্তুগালের পোলেতা। সেই ম্যাচে তার প্রতিপক্ষ ছিল পোল্যান্ড। এশিয়ার পর বিশ্বকাপের আসর বসেছে ইউরোপে। নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখেছে পৃথিবী। কিন্তু হ্যাটট্রিকের দেখা মেলেনি। হ্যাট্রিক হবে হতে পারে এমন প্রত্যাশায় শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০০৬-এর জার্মান বিশ্বকাপ। মধ্য পর্বের সেই আসরের অপ্রাপ্তি কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা মিলল হ্যাটট্রিকের। আট বছরের দীর্ঘ বিরতির পর বিরল এ কীর্তি গড়লেন গঞ্জালো হিগুয়াইন। রিয়াল মাদ্রিদে খেলা এ আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের আগে আকাশি-নীল জার্সি গায়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন গুইলারমো স্ট্যাবিল। বিশ্বকাপের আদি পর্বে ১৯৩০ সালে করা সেই হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল মেক্সিকো। তারপর মাত্র দু’টি বিশ্বকাপ হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়তে পেরেছে কোনো আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়। তিনি বাতিগোলখ্যাত স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। ‘৯৪’র বিশ্বকাপে করা তার হ্যাটট্রিকে প্রতিপক্ষ ছিল গ্রিস। আর ‘৯৮-এ তিনি দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিক করেন জ্যামাইকার বিপক্ষে। হিগুয়াইন দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে তৃতীয় আর্জেন্টাইন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেলেন।
গতকাল সকার সিটি স্টেডিয়াম যখন ভুভুজেলার শব্দে কম্পমান তখন কী ভাবছিলেন ইতিহাস নির্মাতা হিগুয়াইন। জানার উপায় নেই। তবে আন্দাজ করা যায়। হয়তো মেসি-ম্যারাডোনার তারকা দ্যুতির আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথাই ভাবছিলেন তিনি। ভাবনাটা যখন সকার সিটির সবুজ আয়তক্ষেত্রে বাস্তবায়নের সময় এলো তখন আর সামান্য ভুলও করেননি। ৩৩ মিনিটে রদ্রিগুয়েজের পাস থেকে প্রথম গোল। সুযোগসন্ধানী যে গোলে বাতিস্তুতার স্পষ্ট ছায়া। এরপর ৭৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোল এলো হিগুয়াইনের পা থেকে। আর ৮০ মিনিটের মাথায় তৃতীয় গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন তিনি। ঢেউয়ের মতো আক্রমণে ৪-১ গোলে ভেসে গেল দক্ষিণ কোরিয়া।
হিগুয়াইন এমন কীর্তি গড়তে পারেন এর কোনো পূর্বাভাস কী ছিল তার স্প্যানিশ লীগের পারফরম্যান্সে। রেকর্ড দেখলে আপনি বলবেন ছিল। মেসির পর স্প্যানিশ লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। করেছেন ২৯টি। সেই ফর্ম টেনে এনেছেন দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। এ বিশ্বকাপ তার পা থেকে আরও ম্যাজিক
গোল দেখার প্রত্যাশা করতেই পারে