পাখিশিকারিদের সীমাহীন লোভ-লালসা এবং গ্রামের পথঘাট ও হাটবাজারের প্রাচীন বট-পাকুড় গাছ কমে যাওয়ায় খাদ্যের অভাবে গ্রামাঞ্চলে বটকলদের সংখ্যা একবারেই কমে গেছে। বহুদিন পর ২০১০-এর ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) গিয়ে পুরোনো সেই স্মৃতি মনে পড়ল। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সেই দিঘির পাড়ের পুরোনো বটগাছটির কাছে চলে গেলাম, কিন্তু কোনো বটকলের দেখা পেলাম না। আশপাশে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর বটগাছের উল্টো দিকের একটি গাছে সদ্য ঘুমভাঙা ২৪টি বটকলের একটি ঝাঁক দেখলাম। ওদের দেখে মন খুশিতে নেচে উঠল।

বটকল এ দেশে হরিতাল, বড় হরিয়াল, হলদে পা হরিয়াল বা হলদে পা সবুজ কপোত নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম Yellow-footed বা Yellow-legged Green Pigeon। বৈজ্ঞানিক নাম Treron phoenicoptera। এদের পাঁচটি উপ-প্রজাতির মধ্যে এ দেশে শুধু Treron phoenicoptera phoenicoptera উপ-প্রজাতিটির দেখা মেলে।

বটকল বড় আকারের জংলি কবুতর। লম্বায় ৩৩ সেন্টিমিটার। এদের দেহের ওপরের অংশের রং হালকা ধূসর-সবুজ। তবে মাথা ধূসর, কপাল ও গলা হালকা সবজে-হলুদ। ঘাড়ে লালচে ছোপ ও ডানায় সবুজাভ কালোর ওপর হলদে টান রয়েছে। বুকের নিচের অংশ, পেট ও তলপেট ধূসর। কাঁধে এক ফালি হালকা বেগুনি রং। লেজের ওপরের অংশের গোড়ায় জলপাই-হলদে বলয় থাকে। চোখের আইরিশের ভেতরের বলয়টি নীল ও বাইরেরটি গোলাপি। ঠোঁটের রং হালকা সবুজাভ। পা ও পায়ের আঙুল চকচকে হলুদ। পুরুষগুলো স্ত্রীগুলোর চেয়ে কিছুটা বড় ও উজ্জ্বল। বাচ্চারা দেখতে অনেকটা বড়দের মতো। তবে বড়গুলোর মতো কাঁধের বেগুনি রঙের ফালি চোখে পড়ে না।

এরা মূলত আর্দ্র পাতাঝরা বন, কৃষিজমি, বাগান প্রভৃতি এলাকায়, যেখানে ছোট ছোট নরম ফলের গাছ, যেমন-বট, পাকুড়, খোকসা, জগডুমুর, উড়ি আম, বকুল, বউলা গোটা ও এজাতীয় গাছ আছে সেখানে বাস করে। সাধারণত ৫-২০টির ঝাঁকে দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে এদের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। এরা সকাল ও সূর্যাস্তের সময় খাদ্য সংগ্রহে বেশ তৎপর থাকে।

মার্চ থেকে জুন বটকলদের প্রজননকাল। বনের ঘন পাতা সন্নিবেশিত গাছে ও গ্রামের ঘন গাছপূর্ণ এলাকার গাছে কয়েকটি কাঠিকুঠি জড়ো করে ছোট্ট ও হালকা ধরনের বাসা বানায়। পায়রী তাতে চকচকে সাদাটে দুটো ডিম পাড়ে। ডিমে পুরুষ-স্ত্রী উভয়েই তা দেয়। বাচ্চা ফুটলে পুরুষ-স্ত্রী দুজনেরই গলার নিচের থলিতে (Crop) উৎপন্ন ‘পায়রার দুধ (Pigeon Milk)’ খাইয়ে এদের বড় করে তোলে।

-Prothom Alo