বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ । আমরা যেমন মায়ের গর্ভ থেকে জন্মলাভ করেছি বাংলাদেশ তেমনি নদীর গর্ভ থেকে জন্মলাভ করেছে । নদীর গর্ভ থেকে জন্ম নেয়ায় এ দেশের গাছপালা, পশুপাখি, লতাপাতা, বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্র সবকিছুর সাথে নদী ও পানির যোগাযোগ অনেক গভীর । বাংলাদেশের আর এক নাম ভাটির দেশ, আমরা ভাটিতে, আমাদের উজানে আছে ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন আর ভাটিতে বঙ্গোপসাগর। আমাদের প্রধান প্রধান নদীগুলির প্রায় সবগুলির উৎপত্তিই আমাদের উজানের দেশ ভারত, নেপাল কিংবা চীনে আর আমাদের অভ্যন্তরীন নদীসমুহের প্রবাহের প্রধান উৎস হলো সেইসব প্রধান প্রধান নদী । ফলে আমাদের নদী ও পানি প্রবাহের প্রায় পুরোটাই আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহের উপর নির্ভরশীল ।
এইসব অভিন্ন নদী অববাহিকার দেশ গুলির মধ্যে আমাদের উজানের দেশসমুহের ভূপ্রাকৃতিক গঠন অনেকটা খাড়া, হিমালয় পর্ব্বতমালা থেকে ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে এসেছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশ বলতে যে অংশটিকে বোঝায় তার শুরু থেকে প্রায় সমতলভাবে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে । আমাদের দেশের ভাটিতে সমুদ্র থাকায় আর ভুমি গড়ন সমতল হওয়ায় নদীর ন্যুনতম প্রবাহ বা তলানি প্রবাহ হিসাবে যে পরিমান পানি প্রবাহ উজানদেশের নদীসমুহের জন্য যথেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতে পারে , আমাদের নদীসমুহের বেলায় তা নয় । কারন আমাদের কৃষি, শিল্প, মৎস্য, নৌপথ,গৃহস্থালী, বাস্তুতন্ত্র, জৈববৈচিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ছাড়াও সমুদ্রের লবনাক্ততাকে রুখতে আমাদের স্রোতস্বতী নদী প্রয়োজন। বিশ্ব উষতাবৃদ্বির ফলশ্রুতিতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্বির সঙ্গে সঙ্গতিপুর্ণভাবে আমাদের ভু-স্তর পরিগঠনের জন্যও বাধ-ব্যারাজ-ড্যামহীন পলিবাহী স্রোতধারা আমাদের একান্ত আবশ্যক ।
উপরোক্ত বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের নদীর পানির প্রয়োজন যখন ক্রমশ বাড়ছে বাস্তবে পানির সরবরাহ তখন আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ভারত তার নিজদেশের কৃষি, সেচ ও জলবিদ্যূৎ এর প্রয়োজন দেখিয়ে যে নদী ও পানি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের গদক্ষেপ গ্রহন করেছে তার মধ্যে সবচাইতে বিপজজনক উদ্যোগ হলো আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প ,যা নামে নদী সংযোগ প্রকল্প কিন্ত প্রকৃতপক্ষে বেসিন সংযোগ প্রকল্প । স্বীকৃত মতেই এ প্রকল্প’ হিমালয়ান বেসিনে”র নদীগুলির সাথে ’পেনিনসুলার বেসিনে”র নদীসমুহের সংযোগ ঘটাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মাধ্যমে পানি ব্যবহারের যত উদ্যোগের নজীর আছে তার সবই একই বেসিন বা একই অববাহিকার মধ্যে সীমাবদ্ব । এক অববাহিকা থেকে অন্য অববাহিকায় পানি সরিযে নেয়ার কোন নজীর ইতিহাসে না থাকায় পানি বা নদী বিষয়ক আর্ন্তজাতিক আইনে এ বিষয়ক কোন বিধি বিধান ও নাই । এ উদ্যোগ যে প্রকৃতির বিরুদ্বে এক অভুতপুর্ব অপরাধ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই । এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হিমালয় অঞ্চলের নদী সমুহের পানি, যা বাংলাদেশের নদ-নদীর পানিপ্রবাহের অন্যতম প্রধান উৎস, তা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায়, বাংলাদেশ যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা বলাই বাহুল্য।
ভারত তার উন্নয়নের দোহাই দিয়ে জলবিদ্যূৎ উৎপাদনের জন্য সারা দেশের নদ-নদীর উপরই বাধ নির্মান করেছে তবে এক্ষেত্রে তাদের সবচাইতে পছন্দের এলাকা হলো বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুষিত উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং এইসব বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলির মধ্যে সবচাইতে আলোচিত প্রকল্প হলো ’ টিপাইমুখ ড্যাম’।. আর্ন্তজাতিক আইন ও রীতিনীতি উপেক্ষা করে নির্মিতব্য এ ড্যামের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ ব্যাপক প্রতিবাদ ও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে ।
টিপাইমুখ ড্যাম বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত থাকা অবস্থাতেই ভারত তিস্তার উপর নির্মিত ’গজলডোবা ব্যারাজে’ পানি আটকে মহানন্দা নদী দিয়ে বিহারের মেচি নদীতে সেই পানি তারা সরিয়ে নিচ্ছে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প ( প্রকৃতপক্ষে বেসিন সংযোগ প্রকল্প ) যে ৩০টি সংযোগ খাল খননের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে তার একটি সম্পন্ন করা হচ্ছে । বর্তমানে আমাদের দেশে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার আন্দোলন দেশের নদী ও পানি সমস্যার অনেক দিককেই সামনে এনেছে সত্য,কিন্তু তিস্তার পানি সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ভারত যে প্রকৃতি বিধ্বংসী কথিত আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের ( বেসিন সংযোগ প্রকল্প ) প্রথম পর্ব বাস্তবায়ন শুরু করেছে সেই বিষয়টি আন্দোলনকারীদের নজরে তেমনভাবে আসেনি ।
তিস্তা ও টিপাই মুখের সমস্যার চাইতেও পুরনো কিন্তু ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যে সমস্যা তার নাম ফারাক্কা বাধ সমস্যা । ফারাক্কা বাধের মাধ্যমে ভারতের নিয়মিত পানি প্রত্যাহারের কারনে বাংলাদেশের এককালের প্রমত্তা পদ্মা বর্তমানে মরাগাঙে পরিনত হয়েছে । পদ্মার উপর নির্ভরশীল অপরাপর নদীও মরতে শুরু করেছে । নদী মরলে কৃষি ,সেচ, মৎস্য সম্পদ, নৌপথ , ভু-গর্ভস্থ পানি স্তর নীচে নেমে যাওয়াসহ প্রকৃতি, পরিবেশ ও জৈব-বৈচিত্রের যে ক্ষয়-ক্ষতি সাধারনভাবে হয়, বাংলাদেশেরও তা হয়েছে এবং হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ার কারণে এর সাথে বিশেষভাবে যুক্ত হয়েছে উপকুলের লবনাক্ততা । উপকুলীয় লবণাক্ততার কারনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন আজ মারাত্মক হুমকীর মুখে । এই লবণাক্ততা থেকে বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকা রক্ষা করার জন্য আমাদের নদী সমুহকে শুধুমাত্র ন্যুনতম প্রবাহ দিয়ে বাচিয়ে রাখলেই চলবে না আমাদের প্রয়োজন হলো স্রোতস্বতী নদী । সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার কারনে উপকুলে যে লবন পানি প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে নদী তার স্রোতের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রন করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে সেইক্ষেত্রে স্রোতস্বতী নদীর প্রয়োজনও উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে ।
ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসমুহঃ
ভারতের সাথে আর্ন্তজাতিক নদীসমুহের পানিপ্রবাহ নিয়ে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ঊভয় দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি যৌথ নদী কমিশন রয়েছে । ১৯৭২ সালের ২৪ নভেম্বরে উভয় দেশের মধ্যে সম্পাদিত মোট ৯টি ধারা সম্বলিত এ চুক্তিটিতে সংক্ষেপে দুইটি বন্ধুরাষ্ট্র তাদের অভিন্ন নদী সমুহকে উভয় রাষ্ঠ্রের জনগনের জন্য কল্যানকর ব্যাবহারের উদ্দ্যেশের কথা ঘোষনা করেছে । চুক্তিটিতে প্রধানত যদিও বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপর জোড় দেয়া হযেছে তবে সেখানে উভয় দেশের সরকার একমত হলে পানি-নদী বিষয়ক অন্য যে কোন সমস্যাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার সুযোগও রাখা হয়েছে । কমিশনের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ঠ হলো কমিশনের দুই পক্ষের মধ্যে মতদ্বৈততা দেখা দিলে উভয় দেশের সরকার পর্য্যায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করার বিধান রাখা হয়েছে । এ চুক্তিরও আগে ১৯৭২সালের ১৯মার্চে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী যে’ মৈত্রী চুক্তি’ সম্পাদিত হয়েছিলো তার ৬নং দফায়ও উভয় দেশ বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নদী অববাহিকা, জলবিদ্যুৎ ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য যৌথ গবেষনা ও পদক্ষেপ গ্রহনে সম্মত হয়েছিলো ।
১৯৭৫ সালে ভারত ফারাক্কা বাধ নির্মাণ সম্পন্ন করে । পুর্ব থেকে চলে আসা আলোচনা সম্পন্ন হওয়ার আগেই বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতিতে একটি যৌথ প্রেস রিলিজ জারী হয় । ভারত পরীক্ষামুলকভাবে ২১এপ্রিল থেকে ৩১ মে অর্থাৎ ৪১দিন সময়কালের জন্য ১১০০ কিউসেক থেকে ১৬০০ কিউসেক পানি পরীক্ষামুলকভাবে প্রত্যাহারের সুযোগ পায় । পরবর্তীতে ভারত কোন চুক্তিতে আসা ছাড়াই পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে । দ্বিপক্ষীয় সমাধানে ব্যার্থ বাংলাদেশ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘে উত্থাপন করতে বাধ্য হয় । পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে মুরারজী দেশাই এবং জিয়াউর রহমান সরকারের মধ্যে ৫বছর মেয়াদী একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয় । ৫বছর মেয়াদী এ চুক্তিটি ১৯৮২ সালে সমাপ্ত হওয়ার পর ভারত আর তা নবায়নে রাজী হয়নি । বাংলাদেশে এ সময় ক্ষমতাসীন এরশাদ সরকার ভারতের সাথে একটি ” মেমোরেন্ডাম অব আনাডারস্ট্যডিং” সম্পাদন করে এবং পরবর্তী দুইবার তা নবায়ন করে । কোনরকম চুক্তির অবর্তমানে ভারত একতরফাভাবে ইচ্ছামত পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশ এইসময়কালে সবচেয়ে কম পানি পেয়েছে । শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এ বিষয়ে পুনরায় উদ্যোগ গ্রহন করা হয় এবং ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে ভারতের দেব গৌরা সরকারের সাথে ৩০ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি সম্পাদন সম্পন্ন হয় । ১২টি অনুচ্ছেদ ও দুইটি তফসিলযুক্ত এ চুক্তির ৯নং অনুচ্ছেদে ” অপরের ক্ষতি না করা এবং ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ততার” নীতির ভিত্তিতে গঙ্গার পানিবন্টন এবং অপরাপর অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের ক্ষেত্রেও অনুরুপ চুক্তি সম্পানের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
বর্তমানেও ভারতের সাথে বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশন এবং ফারাক্কা চুক্তি বহাল আছে এবং এই সমস্ত চুক্তি অনুযায়ী প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর কমপক্ষে একবার নদী কমিশনের বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে , উভয়দেশ পানি ব্যবস্থাপনায় অন্যের ক্ষতি না করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছে কিšতু বাস্তবে ভারত সেইসব শর্তের কোনটিই মানছেনা । প্রকৃতপক্ষে ভারত টিপাইমুখ প্রকল্প কিংবা তাদের ভাষায় আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প সম্পর্কে বাংলাদেশের মতামত গ্রহন, কিংবা এসব প্রকল্প গ্রহনের পুর্বে যৌথ সমীক্ষা তো দুরের কথা এইসব প্রকল্প সম্পর্কে বাংলাদেশকে কোন তথ্যই সরবরাহ করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে ।
আর্ন্তজাতিক কনভেনশন প্রসঙ্গ :
উপরোক্ত বাস্তবতার মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে ”কনভেনশন অন দ্যা ল অব দ্যা নন-নেভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার কোর্সেস’ বা ”আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন” কে অনুসমর্থন করার দাবী করছি । এ দাবীটি আমরা কেন করছি এ বিষয়ে আলেচনায় প্রবেশের পূর্বে এ আইন প্রণয়ণের সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট ও আইনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সামান্য কয়েকটি বিষয় দেখে নিতে পারি।
১৯৬৬ সালে গৃহীত ”হেলসিঙকি রুলে’ ভু-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের বিষয়ে কোন নীতিমালার উল্লেখ না থাকার বিষয়টি জাতিসংঘ’র নজরে আসার পর ১৯৭০ সালে পানিপ্রবাহ সংক্রান্ত একটি পুর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরীর জন্য ’ইন্টারন্যাশনাল ল কমিশন”কে দায়িত্ব দেয়া হয় । কমিশন ১৯৯৪ সালে তাদের প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার পর, জাতিসংঘের ষস্ট কমিটি উপরোক্ত কনভেনশনের খসড়া প্রস্তুত করেন এবং ১৯৯৭ সালের ২১ মে প্রস্তাবটি জাতিসংঘ সাধারন পরিষদ কর্তৃক ১০৬ ভোটে গৃহীত হয়, প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়ে তিনটি , ভারত ও পাকিস্তান ভোট প্রদানে বিরত থাকে , বলাবাহুল্য বাংলাদেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
একটি অনবদ্য ভুমিকা, ৩৭টি অনুচ্ছেদ এবং আরবিট্রেশনের পদ্ধতিসহ একটি পরিশিষ্ঠ সম্বলিত এ কনভেনশনের ৩৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ৩৫টি সদস্য দেশের অনুসমর্থনের (”র্যাটিফিকেশন, একসেপটেনস, এপ্রোভাল বা একসেসনস ” ) ৯০দিনের অব্যবহিত পর থেকে এটি কার্যকর হবে । গত ১৯ মে ভিয়েতনাম ৩৫তম দেশ হিসেবে এ কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে । নিয়মানুযায়ী জাতিসংঘ মহাসচিব কনভেনশনটি পরবর্তী ৯০ দিবসের মধ্যে কার্যকর হবে ঘোষনা করেছেন কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হলো বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত কনভেনশনটিকে র্যাটিফাই বা অনুসমর্থণ করেনি ।
আর্ন্তজাতিক পরিসরে পানি ও পরিবেশ বিষয়ে যেইসব বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে এবং সেইসব সমস্যার সমাধানে যেইসব আইন-কানুন ইতিমধ্যে তৈরী হয়েছে সেইসব বিষয়কে বিবেচনায় রেখে পানির আর্ন্তজাতিক ন্যায্য ব্যবহার জাতিসংঘের মূলনীতির আলোকে সমাধান করার লক্ষ্য নিয়ে এ আইনটি তৈরী করা হয়েছে বলে প্রস্তাবনায় দাবী করা হয়েছে । প্রস্তাবনার বাইরে কনভেনশনটিকে ছয়টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ১ থেকে ৪নং অনুচ্ছেদ নিয়ে গঠিত প্রথম ভাগে কনভেনশনের আওতা, টার্মসের ব্যাবহার, পানিপ্রবাহ চুক্তিসমুহ এবং চুক্তির পক্ষসমুহের বিষয়ে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগ হলো সাধারন নীতিমালা । এইভাগে অনুচ্ছেদ ৫ থেকে ১০ এর মধ্যে পানিপ্রবাহের” ন্যায়ানুগ এবং যুক্তিসঙ্গত ও অংশগ্রহনমুলক ব্যাবহার”, এইসব ব্যাবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপুর্ন উপাদানসমুহ, অন্যের গুবুতর ক্ষতি না করার দায়িত্ব , সহযোগিতা মুলক আচরনের সাধারন নীতিমালা ,নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাবহারের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । চুক্তির তৃতীয় ভাগ হলো পরিকল্পিত পদক্ষেপ সংক্রান্ত। অনুচ্ছেদ ১১ থেকে ১৯ পর্যন্ত বিস্তৃত এ অধ্যায়ে কোন বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহন প্রয়োজন হলে অপর পক্ষকে জানানো, এইসব পদক্ষেপের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আগাম সতর্কতা, জবাবদানের সম্ভাব্য সময়সুচী , পদক্ষেপ গ্রহনকারী পক্ষের অর্ন্তবতীকালীন আচরন, জবাবদানকারীদের জবাবদান ,পক্ষসমুহের মধ্যে পরামর্শ ও মতভেদহ্রাস ,নোটিশ প্রদান না করা হলে সে ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের উপায় এবং জরুরী অবস্থায় পদক্ষেপ গ্রহন করার ক্ষেত্রে কি ধরনের ব্যাবস্থা নিতে হবে সেইসব বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে । পাচ নং অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ২০ থেকে ২৬ এর মধ্যে মুলত আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহের সংরক্ষন, রক্ষন ,দূষন নিয়ন্ত্রন, দূষণ হ্রাসকরন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিক্ষর কোন নতুন প্রাণী ঐসব প্রবাহে অর্ন্তভুক্ত না করানো , সমুদ্র ও উপকুলের পরিবেশ রক্ষা করার ব্যাবস্থা গ্রহন, পানিপ্রবাহের ব্যাবস্থাপনা , প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়ন, এবং প্রয়োজনীয় স্থাপনা গড়ে তোলার বিষয়সমুহ নির্ধারন করা হয়েছে । ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের দুইটি অনুচ্ছেদে ক্ষতিকর পরিস্থিতি হ্রাস কিংবা বন্ধ এবং জরুরী পরিস্থিতি বিষয়ক করনীয় নির্ধারন করা হয়েছে । ৭ম অধ্যায় হলো বিবিধ । এ অধ্যায়ে যুদ্ধকালীন সময়ে আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহ ব্যাবস্থাপনা ,পরোক্ষ পদ্ধতি, জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ঠ তথ্যাবলী, বৈষম্যমূলক আচরণ রোধ, বিরোধ নিস্পত্তি ইত্যাদির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে । সবশেষে সাক্ষর , অনুসমর্থন, কার্যকরিতা শুরু ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে ।
উপরোক্ত বিষয়সমূহের সকল দিক নিয়ে এ পরিসরে আলোচনার সুযোগ নাই তবে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নে সংক্ষেপে হলেও কিছুটা আলোকপাত প্রয়োজন । পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে কনভেনশনের ২য় অধ্যায় হলো সাধারন নীতিমালা সংক্রান্ত । এ অধ্যায়ের ৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ; কোন দেশ আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহের যে অংশ তার ভু-খন্ডের মধ্যে পড়েছে সে অংশের ব্যাবহারের ক্ষেত্রে ”ন্যায়ানুগ ও য়ুক্তিযুক্ততার নীতি”কে মেনে চলবে । নির্দিষ্ঠ করে বলা যায় একটি আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহ এমনভাবে ব্যাবহার করতে হবে যাতে সংশ্লিষ্ঠ দেশ সমুহ সর্বোচ্চ উপকার পায় এবং একইসাথে পানিপ্রবাহটি যথেষ্ঠ সুরক্ষা পায় । অনূচ্ছেদ ৬তে বলা হয়েছে পানিপ্রবাহের ব্যাবহারে ৫নং অনুচ্ছেদে ঘোষিত ” ন্যায়ানুগ ও যুক্তিযুক্ততার নীতি” মানা হচ্ছে কিনা তা নিরুপনে যে সব বিষয়কে বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো :
১) সংশ্লিষ্ঠ দেশের ভু-প্রকৃতি , জলসম্পদ, জলধারা, জলবায়ু , বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য আরও যা যা বিবেচেনাযোগ্য ;
২) সংশ্লিষ্ঠ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা ;
৩) আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহের উপর নির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ ;
৪) সংশ্লিষ্ঠ দেশসমুহের মধ্যে একদেশের ব্যাবহারের কারনে অন্যদেশের উপর তার প্রতিক্রিয়া ;
৫) বিদ্যমান ব্যাবহার এবং সম্ভাব্য ব্যবহারের উপযোগীতা ;
৬) সংশ্লিষ্ঠ পানিপ্রবাহটিকে অক্ষত রাখা, সুরক্ষা করা এবং এর উন্নয়নের জন্য খরচ এবং এর ব্যবহারের অর্থনীতিক মুল্য এবং উপরোক্ত ক্ষেত্রে যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার অর্থমুল্য ;এবং
৭) বিদ্যমান ব্যবহার বা সম্ভাব্য ব্যবহারের বিকল্প আছে কিনা তা দেখা এবং থাকলে তার তুলনীয়
মুল্যমান :
উপরোক্ত সব গুলি উপাদানকে একসাথে বিবেচনা করতে হবে, এবং এইসব উপাদানের তলনামুলক আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্তে পৌছতে হবে।
উপর্যুক্ত ৫ ও ৬ নং ধারা দুইটি আমাদের খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে । এবং এই দুইটি ধারার আলোকে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদী সমুহের পানিপ্রবাহের বিদ্যমান ব্যবহার এবং পানির প্রাপ্যতা ,ভারতের গৃহীত পদক্ষেপ সমুহের প্রতিক্রিয়া কি হচ্ছে এবং তার ঘোষিত এবং অ-ঘোষিত সম্ভাব্য পদক্ষেপসমুহের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে , তা পর্য্যালোচনা করা একান্ত আবশ্যক । এইসবের নির্মোহ ,বস্তুনিষ্ঠ এবং অর্ন্তজাতিক মহল কতৃক স্বীকৃতিযোগ্য পর্য্যালোচনার ফলাফল থেকেই বুঝতে হবে ভারতের সাথে পানি প্রবাহ নিয়ে বিদ্যমান দর কষাকষিতে সম্ভাব্য পানি প্রবাহ আইন আমাদের সহায়ক হবে কিনা।
উপরোক্ত ধারা সমুহের সাথে আর যে যে ধারাসমুহ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তার একটি হলো ৭নং ধারা এতে বলা হয়েছে : আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহ ব্যবহারকারী কোন একটি দেশ তার নিজের এলাকায় বহমান অংশটি যখন ব্যবহার করবে তখন অপর দেশটির যাতে ”উল্লেখযোগ্য ” ক্ষতি না হয় তার জন্য সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে । যেক্ষেত্রে এরকম ক্ষতি সংঘটিত হয়েছে সেক্ষেত্রে ৫ও ৬ নং ধারার উল্লেখিত নীতিমালার আলোকে তা দুর করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে , উপযুক্ত ক্ষেত্রে ক্ষতিপুরনের আলোচনা করতে হবে ।
আমাদের অধিকতর গুরুত্বপুর্ণ দুইটি ধারা হলো ২০ ও ২৩ নং ধারা , ২০ নং ধারায় বলা হয়েছে , আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহকে আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহের বাস্তুতন্ত্র ( ”ইকোসিস্টেম ” ) কে রক্ষা করতে হবে । ২৩নং ধারায় বলা হয়েছে ’আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহ সংশ্লিষ্ট দেশসমুহকে, এককভাবে , প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যৌথভাবে কোন আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহ , যা সমুদ্র এবং উপকুলের পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয়, তা রক্ষায় আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত বিধিবিধান এবং মানদন্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে ।”
আলোচিত দুইটি ধারার সাথে ২৭নং ধারাটিও আমাদের জন্য গুরুত্ব পুর্ণ এই কারনে যে, এই ধারায় সংশ্লিষ্ঠ দেশসমুহকে একক বা যৌথভাবে আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহকে সেই সমস্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহন করতে বলা হয়েছে যা প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ঠ কারনে বন্যা, খরা, ভুমি-ভরাট, ভুমি-ক্ষয়, লবন পানির অনুপ্রবেশ , মরুকরন বা পানি বাহিত রোগ সৃষ্ঠি করতে পারে ।
আমাদের দেশের ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত আশংকাজনকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে, তার অর্থ হলো সেচ, খাবার পানি বা অন্যান্য প্রয়োজনে যে পরিমান পানি আমাদের চাহিদা মেটাতে উত্তোলন করতে হচ্ছে তুলনামুলকভাবে তার পুণর্ভরন হচ্ছেনা । আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্ঠি করার কারনে আমাদের ভু-গর্ভস্থ পানি পুণর্ভরন প্রক্রিয়া যে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপনের অধিকার এ আইনেই অনুচ্ছেদ ২এ প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করা হয়েছে ।
আমাদের জন্য এ কনভেনশনে আর একটি গুরুত্বপুর্ন অধ্যায় হলো ৩৩নং ধারায় বর্ণিত বিরোধ নিস্পত্তির পদ্ধতি । এই ধারায় ৩৩(২)তে বলা হয়েছে যদি পক্ষসমুহ নিজেরা কোন বিরোধীয় বিষয় নিস্পত্তি করতে ব্যর্থ হয় তবে তারা বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী আরবিট্রেশন অথবা আর্ন্তজাতিক আদালতের স্মরনাপন্ন হতে পারবে । কনভেনশনের পরিশিষ্ঠ হিসেবে ১৪টি অর্টিকেল সম্বলিত একটি আরবিট্রেশন গাইডলাইনও দেয়া হয়েছে , যা প্রস্তাবিত আইনটিকে পূর্ণতা দিয়েছে বলা যায় ।
আলোচ্য কনভেনশনের যেসব অনুচ্ছেদ ভারতের সাথে পানি বিরোধ নিস্পত্তিতে বিশেষভাবে আমাদের কাজে আসতে পারে বলে আমাদের মনে হয়েছে সংক্ষেপে সেইসব দিকই এখানে তুলে ধরা হয়েছে । কিন্তু এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন বর্তমান প্রেক্ষাপটে কম গুরুত্বপুর্ণ মনে হওয়ায় যেসব বিষয় আমরা এ পর্য্যাযে আলোচনা করি নাই সেইসব বিষয় আসলে সর্বসময়ের জন্যই কম গুরুত্বপুর্ণ এরকম নাও হতে পারে। এখানে উদারণ হিসেবে ২১ অনুচ্ছেদের কথাই বলা যেতে পারে; অনুচ্ছেদটিতে আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহকে দুষনের হাত থেকে রক্ষা করার দায়-দায়িত্বের বিষয় নির্ধারন করা হয়েছে । পানির তীব্র সংকটের কারণে বর্তমানে আমাদের সকল দাবী-দাওয়া ভারতের কাছ থেকে আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিন্তু অদুর ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় আমাদের উজানের দেশসমূহ হতে যে পানি আমাদের নদীতে আসছে তা মারাত্মক দুষিত ,তখন কিন্তু ২১ অনুচ্ছেদই আমাদের জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠতে পারে ।
সাধারনভাবে বাংলাদেশ পানিপ্রবাহ নিয়ে ভারতের যে ধরনের অন্যায্য আচরনের শিকার হচ্ছে এবং যেসব সমস্যার সমাধান দৃশ্যত আমাদের আওতা বহির্ভূত বলে মনে হচ্ছিলো , উপরোক্ত কনভেনশন সে ক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটি বড় আশ্রয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে । এ কনভেনশন শুধূ ভু-উপরিস্থ আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহের উপর সংশ্লিষ্ঠ দেশসমুহের অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি ভু-গর্ভস্থ পানি প্রবাহকেও আওতার মধ্যে নিয়েছে ।
উপসংহারের পরিবর্তেঃ
সার্বিক বিবেচনায় আলোচ্য কনভেনশনটি আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহের উপর ভাটির দেশের অধিকারের একটি রক্ষাকবচ । আর্ন্তজাতিক আইনে নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বের প্রাচীন ধারনার সমর্থকরা আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহের উপর একচেটিয়া কর্তৃত্বের যে অযৌক্তিক ধারা বজায় রেখে ভাটির দেশসমুহকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায় ,আলোচ্য কনভেনশনটি তার বিরুদ্ধে আধুনিক বিশ্ববিবেকের এক সম্মিলিত প্রতিবাদ।
আমাদের এ কনভেনশন অবিলম্বে অনুসমর্থন করা উচিত প্রথমত এ জন্য যে, এটি ন্যায্য । দ্বিতীয়ত এজন্য যে ,এটি প্রকৃতিকে রক্ষার পক্ষে। তৃতীয়ত এ জন্য যে আধূনিক বিশ্বচেতনা এর পক্ষে । এবং শেষ পর্যন্ত এ জন্য যে , এটি আমাদের দেশ , দেশের মানুষ, গাছপালা, লতাপাতা পশুপাখি, ঝোপজঙ্গল , খালবিল , নদীনালা , আউলবাউল , জারী- সারী – ভাটিয়ালী সকল কিছুর একান্ত পক্ষে ।
এ কনভেনশন কার্যকর হলেই আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে কিংবা বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক আদালতে পৌছে যাবে কিংবা আর্ন্তজাতিক আদালতে বিষয়টি উত্থাপন করা গেলেই আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যার পক্ষে রায় পেয়ে যাবো বিষয়টি মোটেও সে রকম নয় । তবে ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য আমাদের যে সুকঠিন লড়াই অব্যাহতভাবে চালিয়ে নিতে হবে সেই লড়াইয়ে যে সব হাতিয়ার আমাদের শক্তি যোগাতে পারে নি:সন্দেহে আলোচ্য কনভেনশন হতে পারে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো , জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আমরা যতটা সরব এবং সক্রিয়, আলোচ্য কনভেনশনটি নিয়ে আমরা রহস্যজনকভাবে সে মাত্রায়ই নীরব এবং নিস্ক্রীয় ।
বাংলাদেশ এলডিসি ( লোয়ার ডেভেলপ কান্ট্রিজ ) গ্রুপে যেমন নেতৃত্বদানকারী অবস্থানে আছে , জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিবেশ বিপর্যয় প্রশ্নে যেমন উচ্চকন্ঠ অবস্থান নিয়েছে, আসন্ন বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে “আর্ন্তজাতিক পানিপ্রবাহ” প্রশ্নে তার চাইতেও সক্রিয় ভুমিকা নিতে হবে । আর সে ভুমিকা নেয়ার দিকে প্রথম পদক্ষেপ হলো আলোচ্য কনভেনশন অনতিবিলম্বে অনুসমর্থন করা ।
লিখেছেন –
এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম
সমন্বয়ক, হাওরাঞ্চলবাসী