হোসেনপুর থেকে : পৃথিবীর আলো তিনি কোনো দিনই দেখেননি, হয়ত আর কোনো দিন দেখবেন না। নাম তার আবুল কাসেম, জন্ম থেকেই অন্ধ। শুধু বেঁচে থাকার জন্যই তার জন্ম, এ জগতের রং মায়াময় বৈচিত্র্য তার কাছে অধরা অন্যের কাছে যা জানতে শুনতে পারে এটুকুই তার জগৎ। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের বড়য়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ৪ ছেলের মধ্যে সবার ছোট জন্মান্ধ আবুল কাসেমকে (৪৫) নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। অন্ধত্ব তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অন্য ১০ জন অন্ধের মতো হাত পেতে জীবিকা তার পছন্দ নয়। জীবন ধারণের জন্য তিনি কারও দ্বারস্থ না হয়ে বেছে নিয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ছাঁটাইয়ের মতো পেশা।

পৈতৃক সূত্রে বসত ভিটাসহ ২ কাটা জমির মালিক হতদরিদ্র কাসেমের অভাবের সংসারে স্ত্রী ২ সন্তান নিয়ে ৪ সদস্যর পরিবারের ভরন পোষণের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিদিনই জীবিকার সন্ধানে দা-দড়ি নিয়ে বেড় হতে হয় তাকে। আলাপচারিতায় কেন এ পেশায় বেছে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, ছোট সময়ে তাদের বাড়িতে থেকে এক লোক গাছ ছাঁটাইয়ের কাজ করত, তার কাছে গাছে উঠার কৌশল শিখতে ব্যর্থ হয়ে জেদেরবশে একাই গাছে চড়ার চেষ্টা করতে করতে এক সময় কারও সাহায্য ছাড়াই সে দক্ষ হয়ে উঠে। অন্ধত্বের কারণে অন্য কোনো কাজ করতে না পারায় অভাবের সংসারে পেটের তাগিদে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

তার স্ত্রী রাজিয়া জানান, প্রতিদিন ১০০/২০০ টাকা আয় হয়, কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে না ফেরা পর্যন্ত তিনি টেনশনে থাকেন। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার গাছ থেকে পড়ে গিয়েও বেঁচে গেছেন। বর্তমানে অসুস্থতা নিয়েও কাশেম জীবিকার তাগিতে গাছ ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। সুত্রঃ ইনকিলাব