প্রবীণ বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদিন একদিন ভরদুপুরে একটি অচেনা ফুল দেখাতে নিয়ে গেলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের উত্তর পাশের দেয়াল-লাগোয়া শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের পেছনে গিয়ে দেখা মিলল ফুলগুলোর। ফুলগুলো এতটাই আড়ালে যে তাঁর অনুসন্ধানের প্রশংসা না করে উপায় নেই। চিনতে কষ্ট হলো না,এগুলো লাল ঝুমকা। বছর খানেক আগে মিরপুর উদ্ভিদ উদ্যানে দেখেছি। এই লতাও সেখান থেকে সংগৃহীত। তুলনামূলকভাবে দুর্লভ। আর কোথাও চোখে পড়েনি। তবে ঝুমকালতার আরও তিনটি প্রকরণ দেখেছি বিভিন্ন স্থানে। যে প্রকরণটি থেকে ট্যাং ফল হয়, সেটি দেখেছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে। সব প্রকরণের ফুল গড়নের দিক থেকে প্রায় একই রকম হলেও টক স্বাদের ফলওয়ালা প্রজাতিটি এ ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রমী। ফলের রস থেকে শরবত বানানো যায় বলেই এমন নামকরণ। আর বেগুনি রঙের প্যাসিফ্লোরা সেরুলিয়া প্রকরণটির (ঝুমকালতা নামেই পরিচিত) ফুলগুলো প্রায় সারা দেশেই দেখা যায়, ফোটে বর্ষায়। নওয়াজেশ আহমদ ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার্স অব বাংলাদেশ গ্রন্থে জংলি ঝুমকা নামের আরেকটি ফুলের সন্ধান দিয়েছেন। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সহজলভ্য। এরা একই প্রজাতির ফুল হলেও পাতার রকমফের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
বসন্তের মাঝামাঝি সময় ঢাকায় মিরপুর উদ্ভিদ উদ্যান কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে গেলে এই ফুল পাবেন। তত দিনে উদাল, মাধবী, রামডালুর মৌসুম শেষ; গ্লিরিসিডিয়াও রং হারিয়ে বিবর্ণপ্রায়। এই শূন্যতা ঘোচাতে সেখানে চারপাশ আলোকিত করে ফোটে লাল ঝুমকা ফুল (Passiflora coccinea)। একটি-দুটি নয়, অনেকগুলো। চারপাশে নিবিড় সবুজের ভেতর হঠাৎ লাল রঙের বর্ণিল উচ্ছ্বাস সত্যিই মনোহর। এই চটকদার রঙে আকৃষ্ট হয়ে আসে মৌমাছি, প্রজাপতি আর পাখিরা। পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৫০ রকম ঝুমকালতার ফুল রয়েছে। সে তুলনায় আমাদের দেশেরগুলো হাতেগোনা। এখানে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুলগুলো। পাহাড়ি প্রজাতিটি সমতলে খুব একটা দেখা যায় না। প্যাসিফ্লোরা বা প্যাশন ফ্লাওয়ার নামের এই ফুল এখন পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ইংরেজি নাম স্কারলেট প্যাশন ফ্লাওয়ার এবং রেড প্যাশন ফ্লাওয়ার। আলোচ্য লাল ঝুমকা পাতার গড়নে অন্যান্য ঝুমকা থেকে অনেকটাই আলাদা।
বহুবর্ষজীবী লতানো গাছ, পাতা পুরু, লম্বা আয়তাকার, কিনারা অগভীরভাবে কাটা কাটা। ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। গাঢ় লাল রঙের লম্বাটে পাপড়িগুলো ওপর-নিচে দুই স্তরে সুসজ্জিত থাকে। মাঝখানের একগুচ্ছ পরাগকেশর সাদা ও কালো রঙের। একসঙ্গে অসংখ্য ফুল ফোটে বলে অনেক দূর থেকেই আমাদের নজর কাড়ে। বর্ণবৈচিত্র্য তৈরির জন্য অন্যান্য বাগানেও প্রচুর পরিমাণে রোপণ করা প্রয়োজন। আদি আবাস আমাজনের ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া অঞ্চল।সুত্রঃ মোকারম হোসেন