সন্নিবেশিত রচনাগুলো সাম্প্রতিক বিতর্কের একটি ফসল। আমরা আশাবাদী যে, এই সংকলনভুক্ত লেখাগুলোর মনোযোগী পাঠ থেকে এ কথাটি সহজেই বোঝা যাবে যে টিপাইমুখ বাংলাদেশের পক্ষে লাভজনক না ক্ষতিকর। বলাবাহুল্য, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ কাজটি ভারত সরকার হালে শুরু করেছে এবং এর পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী একটি দৈনিক পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশ করলে তার পাল্টা বক্তব্য আসতে থাকে।
সমালোচকেরা ড. রিজভীর লেখায় অনেক ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। ড. রিজভী এসব সমালোচনার দৃশ্যত কোনও জবাব দেননি, তবে তার স্বপক্ষে একটি লেখা বেরুয়, আমরা এখানে সেই লেখাটি সংযুক্ত করিনি দুটি কারণে, প্রথমত স্থানসংকুলানের অভাব, দ্বিতীয়ত মূল তথা ড. রিজভীর লেখাটি অনত্দর্ভুক্ত থাকায়।
টিপাইমুখ বাংলাদেশের কি ক্ষতি করবে?
এর জবাবে টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলনকারীলা একটি কথা বলছেন যে, আমরা আমাদের হাওড়গুলোর নিয়ন্ত্রণ অন্য দেশের ওপর ছেড়ে দিতে পারি না। বস্তুতপক্ষে, এটি একটি মূল্যবান কথা। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি যে, ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হওয়ার পর পদ্মা নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে চলে গেছে। তিসত্দার ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটছে। তথা আমাদের নদীর নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। তাছাড়া সম্প্রতি ভারতের অভ্যন্তরে সিলেটের সারী নদীর ওপর বাঁধ নির্মিত হয়েছে এবং ভারতীয় পরিকল্পনা যে, অভিন্ন সবগুলো নদীর পানিই তারা বাঁধ এবং ব্যারেজ বানিয়ে আটকে রাখবে।
চীন যখন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বাঁধ দেয় ভারত তখন তার প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে ঠিক উল্টো আচরণ করে। প্রকৃতপক্ষে ভারত চীনের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপারে ন্যায্য হিস্যা এবং নদীকে হত্যা না করার যে দাবি জানায়, আমরা ভারতের কাছে সেই একই আহ্বান জানাচ্ছি: নদী হত্যা করবেন না, তাকে স্বাভাবিকভাবে বইতে দিন। এতে করেই আমাদের ভাটির দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
এদেশে টিপাইমুখ সমর্থকরা একটি কথা বলে থাকেন যে, টিপাইমুখ কোনও ব্যারেজ নয়, এটি একটি ড্যাম বা বাঁধ, ফলে পানি আটকানো হবে না। এক্ষেত্রে আমরা স্পষ্ট জানি যে, শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্মিত বাঁধ হলেও বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্যই সবসময় এক-তৃতীয়াংশ পানি আটকে রাখতে হবে। এরফলে নদীতে সারা বছরই একতৃতীয়াংশ পানি কম আসবে। তাছাড়া নিম্নঅববাহিকায় কোনও বৃহৎ বাঁধের যে কুফল, তার সবক’টিই আমাদের ওপর পড়বে। সাধারণভাবে আমরা মনে করি যে, টিপাইমুখে বাংলাদেশের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে এবং বিশেষত ভাটি অঞ্চলের সাতটি জেলার মানুষকেও দলমত নির্বিশেষে জোরদার আন্দোলনে গড়ে তুলতে হবে। এ কাজটি নিজেদের স্বার্থেই করা দরকার। কারণ হাওড়ের অস্তিত্ব এবং আমাদের অস্তিত্ব একসূত্রে গাঁথা।
লিংক সমূহঃ
১# টিপাইমুখ বাঁধ
২# আমরা হাওড়অঞ্চলবাসীর অবস্থানপত্র
৩# এ সমস্যা সংকটের হিমশৈলের ভাসমান চূড়ামাত্র /আকবর আলি খান
৪# টিপাইমুখ: যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক আলোচনার অনুরোধ /গওহর রিজভী
৫# টিপাইমুখ ড্যাম: বাংলাদেশের ক্ষতিই করবে /ম. ইনামুল হক
৬# বাংলাদেশের জন্য কি মরণফাঁদ হবে? /আসাদউল্লাহ খান
৭# টিপাইমুখ প্রসঙ্গ: ড. রিজভীর বক্তব্যের জবাব /ইনাম আহমদ চৌধুরী
৮# ‘জরুরি টিপাইমুখে কীটপতঙ্গের দাঙ্গা’ /নাহরীন আই খান
৯# টিপাইমুখ বাঁধের ভূমিকম্প ঝুঁকি /মো. আলী আকবর মল্লিক
১০# বাংলাদেশের জেগে ওঠার সময় /দিলারা চৌধুরী
১১# টিপাইমুখ বাঁধ কেন নয় /মো.খালেকুজ্জামান
১২# টিপাইমুখ বাঁধ ও ভবিষ্যৎ করণীয় /ডা. মো. আব্দুল মতিন
১৩# বাঁধ নির্মাণের রাজনীতি ও টিপাইমুখ /তারিক মাহমুদ
১৪# টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ স্থগিত রাখুন /একটি যৌথ লেখা
প্রকাশকঃ
হাওড় অঞ্চলবাসীর পক্ষে এডভোকেট ফরিদ আহম্মদ ও হাবিব রাজা