কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা সদর থেকে ২কি.মি উত্তরে আচমিতা ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামে ৫শ’ বছরের স্মৃতি বিজড়িত প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত কোটামন দীঘি অবস্থিত। জনশ্রুতি রয়েছে, ষোড়শ শতকে চারিপাড়া সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার প্রিয়তমা পত্নীর স্মৃতি রক্ষার্থে এই বিশাল দীঘিটি খনন করেন। স্ত্রী কোটামন দেবীর নামানুসারে দীঘিটির নামকরণ হয় কোটামন দীঘি। প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই দীঘিটি।
ঐতিহাসিক কেদার নাথ মজুমদার রচিত গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ঈশাখার সমসাময়িক তালুক আমির খাঁ রাজা নবরঙ্গ রায়ের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। যুদ্ধে রাজা নবরঙ্গ রায় সপরিবারে নিহত হন। রাজার ১৩তম বংশধর দীগেন্দ্র রায় চৌধুরীর কোন সন্তানাদী না থাকায় সর্বশেষ দত্তক বংশধর ছিলেন স্বদেশ রঞ্জন রায় রনু চৌধুরী। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি ছিলেন নবরঙ্গ রায়ের রাজবাড়ি ও কোটামন দীঘির মালিক। ১৯৮২ সালে তিনি বিশিষ্ট শিল্পপতি সিআইপি আশরাফ উদ্দিন আহমেদের (মেনু মিয়া) কাছে রাজবাড়ি ও দীঘি বিক্রি করে ভারত চলে যান। আশরাফ উদ্দিন আহমেদ রাজবাড়ি ও কোটামন দীঘির সৌন্দর্যবর্ধন করেন। রাজবাড়িটি ৬ একর ভূমির উপর নির্মিত। রাজবাড়ির সামনেই কোটামন দীঘি। দীঘির চারপাশে ফুল, আম ও লেবু বাগান রয়েছে। কোটামন দীঘির মাঝখানে রয়েছে বাগান ও বিনোদন পার্ক। সেখানে বিভিন্ন জীবজন্তুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিদিন বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং দেশের নানা স্থান থেকে প্রচুর দর্শনার্থী কোটামন দীঘি পরিদর্শনে আসেন। আসেন অনেক বিদেশি পর্যটকও। বর্তমানে ক্রয় সূত্রে মালিক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ মেনু মিয়া বললেন, রাজবাড়ি ও দীঘিটি ক্রয় করে এর ঐতিহ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছি। প্রাচীন ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে রাজবাড়ি ও দীঘির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখেছি।
রাজা নবরঙ্গ রায়ের বংশধর সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক সুব্রত ভৌমিক বলেন, আমি অবশ্যই রাজবাড়িটি দেখতে যাব। কারণ এটা আমার মায়ের পূর্বপুরুষের ভিটা।
লিখেছেনঃ ব্রজগোপাল বণিক, কটিয়াদী