ইতিহাসখ্যাত বিদ্রোহী বারভূঁইয়ার নেতা মসনদে আলা ঈশা খাঁ আর বীরাঙ্গনা সখিনার স্মৃতিবিজড়িত, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, নরসুন্দা, ঘোড়াউত্রা, ধেনু, ধলেশ্বরী এবং কালী নদীবিধৌত কিশোরগঞ্জে রয়েছে অনেক দর্শনীয় কীর্তি ও স্থান।

ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানীখ্যাত জঙ্গলবাড়ির দুর্গ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে করিমগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। সেখানে রয়েছে ঈশা খাঁর বসতবাড়ি, দরবার হল, মসজিদ, দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, বিশাল পুকুর এবং স্থাপনা সুরক্ষায় তৈরি করা পরিখার অবশেষসমূহ। এছাড়া জিন্দা বিবির মাজার এবং তদানিন্তন সময়ের কবরস্থান। এখানে বর্তমানে ঈশা খাঁর শেষ বংশধর বলে দাবিদার আমিন দাদ খাঁ ও তাঁর পরিবার বসবাসরত। ভ্রমণার্থীগণ তাঁদের কাছ থেকে পান আন্তরিক আতিথেয়তা ও ঐতিহাসিক বিবরণ। অপরদিকে পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুরে রয়েছে ঈশা খাঁর দখলকৃত দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। এখান থেকেই তিনি মোগলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে লিপ্ত হন। এর সঙ্গে রয়েছে শাহ মাহমুদের প্রাচীন মসজিদসহ বালাখানা, বেবুদ রাজার দীঘি। অন্যদিকে জেলা কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর মঠ ও তাঁর পিতা প্রথম মনসা মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা দ্বিজবংশী দাসের মন্দির এবং পরবর্তী বংশধরদের বাড়ি।

এছাড়া জেলার হাওড়াঞ্চলে রয়েছে আরও বিভিন্ন স্পট। এর মধ্যে ইটনা উপজেলার বিখ্যাত গুপ্ত বাড়ি ও দেওয়ান বাড়ি। মিঠামইনের দিল্লীর আখড়া, অষ্টগ্রামের প্রাচীন মসজিদ, নিকলীর সোয়াইজানি নদীর তীরবর্তী আখড়া প্রভৃতি বিশেষভাবে উলেস্নখ্য। তাছাড়া বর্ষাকালে হাওড়ে নৌকা ভ্রমণের ব্যতিক্রমী পরিবেশ তো অবারিত রয়েছেই। আগ্রহীরা ঘুরে ফিরে আরও দেখতে পারেন উপমহাদেশখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব পুরুষের বাস্তুভিটা। স্মৃতিবিজড়িত উক্ত ভিটাবাড়ির সামনেই রয়েছে বিশাল হাতির পুকুর, বিশাল খেলার মাঠ এবং স্কুল।

এসব দেখতে পাবেন কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া গ্রামে। অপরদিকে কুলিয়ারচর উপজেলায় পাওয়া যাবে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী মহারাজ ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তীর বাস্তুভিটা। মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য সদর উপজেলার যশোদল বীরদামপাড়া গ্রাম। গ্রামে রয়েছে তাঁর পৈত্রিক বাড়ি এবং তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্রের স্মৃতি নিদর্শন। এসবের বাইরে জেলা শহরে দর্শনাথর্ী পর্যটকদের জন্য রয়েছে ইতিহাসখ্যাত মসলিন শিল্পী প্রামাণিকের বিশাল দীঘি, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদ, শহীদী মসজিদ, দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, হয়বতনগর সাহেব বাড়ি প্রভৃতি। জেলা শহরের অদূরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বড়ইতলার গণহত্যাস্থল ও অন্যারকাল বধ্যভূমি। এসব স্পট ও নিদর্শন ছাড়াও বেড়ানো, চিত্তবিনোদন এবং দর্শনীয় অনেক কিছুই রয়েছে কিশোরগঞ্জে।

রাজধানী ঢাকা থেকে এগারসিন্দুর ট্রেন বা বাসে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টার পথ। পর্যটকদের থাকার জন্য জেলা শহরে রয়েছে সুবন্দোবস্ত। সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো, এলজিইডির রেস্টহাউস প্রভৃতি সরকারী ব্যবস্থার পাশাপাশি পল্লী বিদ্যুত সমিতির বাংলোসহ অভিজাত আবাসিক বিভিন্ন গেস্টহাউস। থাকা খাওয়ার মান ও দাম মোটামুটি লোভনীয়।

লিখেছেনঃ মাজহার মান্না