বৌলাই সাহেব বাড়ীটি মুলত বাগদাদ থেকে আগত সুবে বাংলায় তাঁর পূর্ব পুরুষ আনুমানিক  ১৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে বাদশাহ জাহাঙ্গীরের আমলে দিল্লি হয়ে এই সুবে বাংলায় আগমন করেন ।সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয় দশকে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আদেশে মুঘল নৌবাহিনির আমীর হয়ে এদেশে আসেন পরিবারটি পূর্বপুরুষ (করিম খান) আমিরুল বহর । তখন বাংলাদেশে পর্তুগীজ জলদস্যুদের অনাচার কিছু কিছু শুরু হয়েছে ।বারো ভুইয়া প্রধান ঈসা খার পুত্র মুসা খাও নদী প্রধান পূর্ব বাংলায় মুঘল-আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধব্জা উড়িয়ে দিয়েছেন ।মুসা খার তৎপরতা প্রধানত নৌযুদ্ধে সীমাবদ্ধ ছিল বলে,ভাটি অঞ্চলের মুখে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা  নরসুন্দার পারে অবস্থিত জঙ্গল বর্তি দূর্গই ছিল মুসা খার প্রধান ঘাটি ।সেই কারনে নরসুন্দার অপর পারে পুরান বৌলাইয়ে স্থাপিত হয়,আমীর করিম খার অধীনে মুঘল নৌঘাটি ।আমলে সদর থানাধীন বৌ্লাই ইউনিয়নে বৌ্লাই সাহেব বাড়ীর অবস্হান কালের আবর্তে বিখ্যাত পরিবারটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেও তাঁদের আবাস ভাটির ভগ্নদশা,প্রাচীন পুকুর,গোরস্হান, মসজিদ আজো পুরনো দিনের প্রাচুর্য্যের কথা মনে করিয়ে দেয় ।এই পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য কবি লেখক ও রাজনীতিতে প্রতখ্য অংশ গ্রহন উল্লেখযোগ্য ।এই পরিবারের মওলানা আবদুল হাই  আখতার উর্দু-আরবি-ফারসি ফেকাহ শাস্ত্রে ৫৫খানা বই লিখেছিলেন ।তার পুত্র মাহমুদূর রব কবি খালেদ বাঙালি উপমহাদেশের একজন বিশিষ্ট উর্দু কবি  ।তার সমসাময়িক কবি ছিলেন দিলগির,আকবরাবাদি ,যোশ মালিহা বাদি প্রমুখ ।এদের মধ্যে আরো ছিলেন কবি মুহিউদ্দীন মাহমুদ ও সৈয়দ হাবিবুল হক ।বৌলাই  বাড়িতে খালেদ বাঙ্গালির নেত্রিতের প্রায়শই মাহফিলে মুশায়রা (কবিতা পাঠের আসর)বসত ।বৌলাই বাড়িতে আরেক জন খ্যাতিমান সদস্য হলেন কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ যিনি ইরানের মহাকবি ফেরদৌসির মহাকাব্য শাহনামার কাব্যটি ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন তাছাড়া তিনি আরো অনেক বই লিখেছেন । কবি খালেদ বাঙ্গালির সম্পাদনায় আখতার নামে একটি মাসিক সাময়িকি প্রকাশিত হয়েছিল ।কবি খালেদ বাঙ্গালির এক মাত্র পুত্র জাহিদ সিদ্দিকী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন উদু সংবাদ পাঠক ও সংগঠক ভুমিকা পালন করেন ।এই পরিবারে মুক্তিযুদ্ধ অংশ গ্রহনকারী অন্যানদের মধ্যে নাজিম কবির ও ইফতেখার আহমেদ খসরু অন্যতম । শাহনামার অনুবাদক কবি মনির উদ্দীন ইউসুফ তিনিও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখেন ।

 

সংগ্রহঃআমার জীবন আমার অবিজ্ঞতা ,প্র.সং.১৯৯২