বেবুধ রাজার পুকুরটি এগারসিন্ধুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই পুকুরকে ঘিরে আছে নানা ধরণের কৌতুহলী কল্প কাহিনী। এগারসিন্দুরের রাজা এই পুকুরটি খন করেছিল তার প্রজাদের সুবিধার্তে। পরে যখন পুকুর খনন করার পর পানি আসে না তখন রাজাকে সপ্নে দেখে যে তার স্ত্রীকে এই পুকুরে নামালে এবং তাকে দিয়ে দিলে পুকুরে পানি উঠবে তখন রাজা তাই করল এবং স্ত্রীকে পুকুরে নামাল এবং পানি উঠতে থাকে পাতাল থেকে এই ভাবেই পুকুরটি পানি বরাট হয়ে উঠে।

আরো জানা যায় যে, ঐ সময় রানীর একটি ছোট বাচ্চা ছিল সে সময় মতো বাচ্চাকে ধুদ পান করাত পুকুর ঘাটে ছেলেকে দিয়ে আসলে। এই ভাবে চলতে থাকে অনেক দিন। তার পর রাজা একদিন তার স্ত্রীকে সম্পর্শ করতে যায় তখন যে রাণী পানিতে ডোব দেয় আর কোন দিন দেখা যায়নি। এই পুকুরের এই রকম পরিষ্কার পরিচন্ন ছিল যে, একটি পাতা পানিতে পড়লে সেই পাতাটি পানির উপরে নিয়ে আসা হতো অলৌকিক ভাবে।  এবং মাঝে মাঝে রাণীকে দেখা যেত সোনার ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে পানিতে বাসতে। এই সব কল্প কাহিনী লোক মূখে শোনা যায়।

এগারসিন্দুরের সামান্তরাজ রাজা আজাহাবাকে এক যুদ্ধে পরাস্থ করে অপর একজন কুচ সামন্ত বেবুদ রাজা নগর হাজরাদী এলাকায় তার করায়ত্বে আনার পর এগারসিন্দুর নামক এলকাকে তার রাজত্বের রাজধানী করে এগারসিন্দুরের ব্যপক উন্নতি সাধন করেন। যতদূর জানা যায় তিনি তার রাজপ্রাসাদের সন্নিকটে একটি বিশাল আকারের পুকুর খনন করেন। অবিশ্বাষ্য জনক ঘটনা এই যে, পুকুর খনন করার পর পুকুর থেকে আর পানি উঠে নি। বেবুদ রাজার স্ত্রী একদিন স্বপ্নে দেখতে পান যে, গঙ্গাদেবী রাণীকে তার কাছে আহ্বান জানিয়ে বলছেন যে, “তুমি আমার কথা মত চিরতরে আমার কাছে চলে আসার জন্য জলশূন্য পুকুরে কলসি কাঁকে নিয়ে এসে পুকুরের তলদেশে তোমার পদস্পর্শ করলে পুকুরে পানি উঠবে। রাণী মা জিজ্ঞাসা করছিলেন যে, আমি চলে গেলে আমার শিশু বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবে কে? উত্তরে তিনি জানান যে, তোমার বাম হাতের তর্জনীতে থাকা সোনার আংটি জল স্পর্শ করে তোমাকে ডাকলে, তুমি মানব আকৃতিতে তোমার সন্তানকে দুধ খাওয়ানো সহ তাকে আদর সেবা করতে পারবে। পরদিন তার স্বপ্নের কথা রাজাকে জানালে রাজা স্বপ্নের বর্ণনানুযায়ী পুকুরের ঘাটে এসে রানীর বাম তর্জনীর আংটিটি রাজার হাতে দিয়ে কলসি কাঁকে পুকুরের তলায় পদস্পর্শ করার সাথে সাথেই পুকুরে পানি উঠে ভরে যায়- আর সেই সাথে রানী নিখুঁজ হয়ে যায়।

স্বপ্নের বর্ণানুযায়ী যখনই রাজার সন্তান খাবারের জন্য কান্না করত তখন রাজা ঐ আংটিটি হাতে নিয়ে ঘাটে এসে জল স্পর্শ করে ডাক দিলেই রানী মানব আকৃতিতেই উঠে আসতেন এবং তার সন্তানকে দুধ খাইয়ে আবার চলে যেতেন। বেবুদ রাজার এক ঘনিষ্ট সহচর বন্ধু ছিল ; যার কাছে তিনি আত্মবিশ্বাস্যের তার প্রকাশ্য গোপন সকল কথা বলে মনটাকে হালকা করতেন। রাণী পানিতে অন্তধান ও তার আংটির রহস্যময় জাদুঘরি কর্মের কথা তার কাছে বললে, সে বাস্তবে তার প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি পূর্ব নিয়মে রাণীকে পানি থেকে স্ব- শরীরে উঠে আসার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সে কুমতলবে রাজার হাত থেকে কৌশলে আংটিটি চুরি করে নিয়ে যায়। বেশী দূর যেতে পারে নি। অল্প কিছু দূর গেলে আংটিটি তার হাত থেকে পড়ে যায় এবং পূর্ব রূপে এই এলাকা মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয় এবং পানিতে একাকার হয়ে যায়। আংটি চুরির ফলে সৃষ্ট এ জলাশয়টিই হল আংটি চুরার বিল। আংটি হারিয়ে রাজা আর পুকুর ঘাটে এসে রাণীকে শত ডেকেও আর রাণীর দেখা পাননি। রাণীকে হারিয়ে রাজা একাকিত্বে দুঃখ কষ্টে ক্রমেই দূবরল হয়ে পড়েন। গায়েবীভাবে পুকুরে পানি উঠার কারণে আজো মানুষের বেবুদ রাজার পুকুর পাড়ে গিয়ে কি যেন এক অজানা ভয়ে শহিরিয়াহ উঠে।

যেতে হলেঃ ঢাকার মহাখালি বাস কাউন্টার থেকে কিশোরগঞ্জ গামী বাসে এগারসিন্ধুর নামক স্থানে নামতে হবে।