ভবঘুরে পাখি ‘নীল-লালগির্দি’ (Blue-fronted Redstart)। অনেকে ‘নীল-কপালি গির্দি’ নামেও ডাকে। এর কোনো স্থানীয় বা আঞ্চলিক নাম নেই। আমি ওর নাম দিয়েছি নীল-কপালি লালগির্দি। বাংলাদেশ এটি অনিয়মিত (Vagrant) পরিযায়ী পাখি হিসেবে বিবেচিত। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Phoenicurus frontalis। নীল-লাল গির্দি চড়ুই আকারের পাখি। লম্বায় ১৫ সে.মি. ও ওজনে ১৭ গ্রাম। পুরুষটির কপাল উজ্জ্বল নীল। মাথা ও পিঠের পালক গাঢ় নীল। গলা, বুক এবং ডানাও গাঢ় নীল। ডানার পালক-ডাকনির কিনারা কালচে। দেহের নিচের অংশ কমলা-বাদামি।
কোমা ও পেট কমলা-লাল। লেজের কিনারা কালচে। স্ত্রী-পুরুষের দেহের রঙে বেশ পার্থক্য। স্ত্রীর দেহের ওপরটা জলপাই-বাদামি, অন্যান্য প্রজাতির গির্দির তুলনায় বেশি গাঢ়। দেহের নিচের অংশ জলপাই-বাদামি থেকে কমলা-বাদামি। কোমর কমলা-লাল; পেট ও লেজের নিচে কমলার আভা। চোখের চারদিকে রয়েছে সাদা বলয়। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলোর ডানার পালক-ডাকনির কিনারা সাদা বা হালকা কমলা।
পরিযায়ী এ পাখি শীতে চারণভূমি, ঝোপঝাড়, মাঠ ও খোলা বনে চরতে পছন্দ করে। পোকাখোর হলেও রসাল ফল এবং বীজেও অরুচি নেই। গাছের ডাল বা ঝোপঝাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে পোকা ধরে। পোকা ধরার জন্য গাছ থেকে লাফিয়ে মাটিতে নামে; অনেক সময় শূন্য থেকেও ধরে। মূলত একাকী বিচরণ করলেও প্রজননের পর ও পরিযায়নের সময় ছোট দলেও দেখা যায়। সাধরণত ‘টিক’ বা ‘প্রিট’ করে এক শব্দে ডাকে। তবে ভয় পেলে ‘ইটিট-ইটিট-ইটিট’ বা ‘টট-টট-টট’ স্বরে বিরামহীন ডাকতে থাকে। জুনের মাঝামাঝি এদেরকে সুমধুর স্বরে গান গাইতেও দেখা যায়।
মে থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। জমির আইল, দুই পাথরের ফাঁক বা গাছের খোঁড়লে মস বা শেওলা দিয়ে ছোট্ট বাটি আকারের বাসা বানায়। বাসা বানাতে গাছের ছোট্ট শিকড়, চুল, পালক ইত্যাদি ব্যবহার করে। স্ত্রী গির্দি তিন বা চারটি হালকা গোলাপি-ধূসর বা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে, যার ওপর থাকে হালকা লালচে দাগ।
-Prothom alo