মা কে নিয়ে লেখা, কিভাবে শুরু করব? মা-কে নিয়ে পৃথীবির অনেক লেখক, কবি ও সাহিত্যকরা অনেক লেখা লিখছে । পৃথিবীতে অনেক গুণীজন আছেন যারা মাকে নিয়ে অনেক ভাল ভাল লেখা লিখিছেন। আমার সীমিত জ্ঞানে লিখার যে সাহস করেছি তা অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে। তাই সকল বন্ধুদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, এবং আমার এ অল্প জ্ঞানে যতটুকু লিখেছি দয়াকরে ধৈর্য সহকারে পরবেন।

যদি আমার এ লেখা পরে কারো মনে একটু হলেও মায়ের প্রতি ভালবাসার উদয় হয় তাহলে আমার এ শ্রম সার্থক হবে। সকলের কাছে আমার অনুরোধ মা নামের এই অমূল্য রত্নটিকে কেউ অবহেলা করবেন না, তাহলে ইহজনম ও পরজনমে কখনও সুখী হতে পারবেন না। মা -কে নিয়ে লেখার সাহস আমি কোন দিন পাইনি, আজ অনেকটা সাহস নিয়ে লিখতে বসলাম। অতি ছোট্ট একটি শব্দ, পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর এবং মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবকিছুর উধ্ধে যে সে মা, তার নেই কোন উপমা, তুলনা। মা মানে সততা, মা মানে নিশ্চয়তা, মা মানে নিরাপত্তা, মা মানে অস্তিত্ব, মা মানে আশ্রয়, মা মানে একরাশ অন্ধকারে এক বুক ভালবাসা, মা মানে সুন্দর জীবন, মা মানে সুন্দর জাতির উপহার। মা এমনই এক মমতাময়ী, চিরসুন্দর, চির শাশ্বত; যার নেই কোন সংজ্ঞা। মধু মিশ্রিত এক মহৌষধের নাম মা। মায়ের কাছে এলে মুহূর্তেই যেন সকল রোগ সেরে যায়। সবচেয়ে প্রিয় ‘মা’ শব্দটি সাময়িক মোহ বা অন্য কিছু, হয়ত এ শব্দটির চেয়েও অন্য কোনো শব্দকে খানিকটা প্রিয় করে তোলে, কিন্তু অচিরেই তা বড় ‘ভুল’ প্রমানিত হয়। মা, মা, এবং মা। প্রিয় শব্দ একটিই, এবং একটিই। শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন – মা। প্রিয় অনুভূতি -মা।

মায়ের ভালবাসাঃ
একজন মা ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধারণ করে সমস্ত যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে জন্ম দেয় সন্তান। সত-সহস্র কষ্টে লালন পালন করে সেই সন্তানটিকে, আস্তে আস্তে তাকে বড় করে। কেননা মাতৃসত্ত্বা হচ্ছে একজন মায়ের নিকট সবচেয়ে বড় সত্ত্বা। মাতৃত্ব তাই নারীর অহংকার ও গর্ব। সব মায়ের ভালোবাসাই অকৃতিম ও এক। প্রতিটি মানুষের কাছে তার মা তুলনাহীনা ও অনন্যা। মা কখনও পুরানো হয় না, ঠিক আকাশের মতো। যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় সবচেয়ে বড় সুখ কিসে? নিশ্চই তার জাবাব হবে মায়ের বুকে। মায়ের কাছে গেলে কখনও অপ্রাপ্তি থাকে না। তাই হয়ত কখনও কখনও প্রাপ্ত বয়স্ক কোন সন্তানও নবজাতকের মতো অসহায় হয়ে যায় মাকে ছাড়া। মায়ের বুক হচ্ছে সন্তানের জন্য নিরাপদ আশ্রয়। মায়ের ভালবাসা হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে নির্ভেজাল এবং স্বার্থহীন ভালবাসা। মায়ের এই স্বার্থহীন ভালবাসার দুটি উদাহরণ গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরছিঃ

০১। একদা এক লোক তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতো। সে তার মাকেও ভালোবাসতো কিন্তু মায়ের ভালবাসা যেরূপ প্রাপ্য সেরুপ নয়। লোকটির স্ত্রী এবং তার মার সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল না। তাই তার স্ত্রী সব সময় ভাবত কীভাবে তার শাশুড়িকে বাড়ী থেকে চির বিদায় করা যায়। একদিন লোকটির স্ত্রী মনে মনে বুদ্ধি আঁটল এবং লোকটিকে বলল, এই যে, শুন একটি কথা, কি আর বলব লজ্জার কথা, তোমার মা এই বৃদ্ধা বয়সে বিয়ে করতে চায়। এমন লজ্জার কথা যদি কেও শুনে তাহলে কি আর আমাদের মানসম্মান থাকবে । লোকটি চিন্তা করল তাইতো লোকজনে যদি এই কথা শুনে তাহলে আমি মুখ দেখাব কি করে। তাই সে মনে মনে একটি বুদ্ধি আঁটল। মাকে বলল মা কে বলল মা তুমাকে আজ বেড়াতে নিয়ে যাব। মা বলল নারে বাবা আমি এই বৃদ্ধা বয়সে কোথায় বেরেতে যাব। ছেলে বলল তুমি বেশী বুঝ না তো মা, আমি যা বলি তাই শুন। মা আর বেশী কথা না বলে ছেলের সাথে রওনা হল। ছেলে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী মাকে এক জঙ্গলের ধারে ফেলে চলে আসতে লাগল এবং ভাবল একটু পড়েই সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসবে, বাঘ এসে জঞ্জালটিকে খেয়ে ফেললেই আমি বেচে যাই। সমাজের মানুষের নিকট আমাকে আর অসম্মানিত হতে হবে না, কিন্তু বিধির কি অপূর্ব লীলা ঠিক ফেলে আসার মুহূর্তেই প্রচণ্ড ঝড় উঠে এলো। মা খুব চিন্তায় পরে গেলেন, আল্লাহ্‌র নিকট হাত তুলে দোয়া করতে লাগলেন এই প্রচণ্ড ঝড়ে আমার ছেলের না জানি কোন বিপদ হয়, হে আল্লাহ্‌ তুমি আমার জীবনের বিনিময়ে আমার ছেলেকে নিরাপদে বাড়ীতে পৌঁছে দাও। ছেলে মায়ের দোয়া শুনে চমকে গেল। সে ভাবল যে মাকে আমি ফেলে চলে আসলাম সেই মা যদি আমার জন্য দোয়া করতে পারে, এই মা আমার জন্য কখনো অমঙ্গল বা অসম্মান চাইতে পারে না। সে মাকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে গেল, আসল কারণ বের করে তার স্ত্রীকে উপযুক্ত শাস্তি দিল।

০২। ছেলের নাম এরিক । ওর মায়ের এক চোখঅন্ধ। এটা নিয়ে স্কুলের বন্ধুদের সামনে এরিক খুবই বিব্রত হয়। একবার ওর মা খাবার নিয়ে স্কুলে গেলে এরিক চিৎকার করে বললো ” তুমি মরে যাও না কেন ? তাহলে বন্ধুদের কাছে আমাকে লজ্জা পেতে হয় না। ছিঃ, কি বিশ্রি দেখা যায় একটা চোখে যখন তাকাও! “এরিক খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে, কারণ যত দ্রুত সম্ভব প্রতিষ্ঠা পেয়ে এই বাড়ী থেকে সে চলে যেতে চায় ।

খুব ভালো রেজাল্ট করলো এরিক, সেই সাথে প্রতিষ্ঠা! তার নিজের বাড়ি, গাড়ি, বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার! একচোখা অন্ধমায়ের কোন চিহ্নই নেই তার জীবনে। এদিকে বৃদ্ধা মা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। কিন্তু মরবার আগে একটি বারের জন্য নাতিগুলোর মুখ দেখার লোভ সামলাতে না পেরে ঠিকানা খুঁজে খুঁজে চলে এলেন ছেলের বাড়ি। বৃদ্ধাকে দরজায় দেখে এরিক হুংকার দিলো, “কোন সাহসে এসেছো এখানে? দেখছনা, তোমাকে দেখে আমার বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে? এখনি দূর হও এখান থেকে”।

এর কয়েক বছর পরে স্কুলের পূর্ণমিলনীতে বিশেষ অতিথী হয়ে গেলো এরিক! অনুষ্ঠান
শেষে কি মনে করে যেন বৃদ্ধাকে দেখতে গেলো সে। প্রতিবেশী অপর বৃদ্ধা জানালো, বছর দুই আগেই তিনি গত হয়েছেন আর যাবার আগে এরিকের জন্য রেখে গেছেন একটি চিঠিঃ

আমার সোনামনি এরিক,

জানি, তুমি তোমার মা’কে অনেক ঘৃণা করো। আমি তোমাকে জীবনে কিছুই দিতে পারিনি,
দিয়েছি শুধু লজ্জা। মা হিসেবে আমি ব্যর্থ। এ জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী।
ছোটবেলায় তোমার একটা এ্যাক্সিডেন্ট হয়ে তোমার একটা চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তুমি সারাজীবন একচোখ দিয়ে দেখবে, মা হিসেবে এটা আমি মেনে নিতে পারিনি, তাই নিজেই বাকি জীবন একচোখ দিয়ে দেখবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আজ তুমি দু’চোখ দিয়ে দেখতে পারছো, আমার কাছে এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কিছু নেই। তুমি ভালো থেকো বাবা!!!

ইতি,
তোমার ব্যর্থ মা!

মাকে নিয়ে আল্লাহ্‌র বানীঃ
০১.
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থে, বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম। (আল আহক্বাফ: ১৫)
০২.
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। (বনী ইসরাইল: ২৩)

০৩.
আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। (লোকমান: ১৪)

মা সারা জীবন যে মায়া তিনি করে এসেছেন, তার কিঞ্চিৎ তাঁকে ফেরৎ দিলেই তিনি খুশী। তার চাহিদা আমাদের মতো এত বড় নয়। তিনি প্রতিদান চান না, তিনি প্রাপ্য চান না, অধিকার নিয়ে কোনো কথা বলেন না তিনি। শুধু একটু মায়া চান। তার ঋণ তো আমরা কখনো শোধ করতে পারবনা।
তাইতো মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম পাপুস বানাইয়া দিলে, ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদী ভবে কেও হবে না আমার মা গো ।

মাকে নিয়ে হাদিসের বানীঃ
০১. এক ব্যক্তি নবীজীর স. কাছে এসে বলল, সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার বেশি কোন মানুষের? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপর তোমার বাবা। -বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী

০২. রাসূলে খোদা (সা) বলেছেনঃ বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

০৩. রাসূলে কারিম (সা) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর,আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ )

০৪. রাসূলুল্লাহ স. বলেন, সন্তান কোনো ভাবেই পিতা-মাতাকে প্রতিদান দিতে পারে না। তবে যদি পিতা-মাতা গোলাম হয়, তখন তাকে ক্রয় করে আজাদ করে দিলে হয়ত প্রতিদান হয়। -তিরমিযী

হে মহান সৃষ্টিকর্তা, বাবা মা আমাদের যে দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করে আমাদের লালন পালন করেছে, তাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করার তৌফিক দান কর।

লোককথায় ‘মা’এর ইতিহাসঃ
ঈশ্বর যখন ‘মা’ তৈরী করেন তখন তিনি লাগাতার ছয় দিন ধরে কাজ করেন। এটা দেখে এক দেবদূত এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ঈশ্বর আপনি একটি জিনিসের পিছনে কেন এত সময় ব্যায় করেন?’’ ঈশ্বর জবাবে বললেন, ‘‘তাঁর কি কি জিনিস থাকবে তুমি কি সেই কাজটা দেখেছো? তাঁকে একাই ১০ জনের কাজ করতে হবে।

তিনি কালো কফি এবং উচ্ছিষ্ট খেয়েই চলতে পারবেন। তাঁর কোলে তিনটি পর্যন্ত শিশু এক সঙ্গে থাকতে পারবে। আর তাঁর লাগবে ছয় জোড়া হাত।’’ একটি জিনিসের জন্য এত কিছুর প্রয়োজন দেখে দেবদূতের চোখ কঁপালে উঠলো, ‘‘ছয় জোড়া হাত! কিন্তু কি ভাবে সম্ভব! ঈশ্বর বললেন হাত দিয়েতো কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে তিন জোড়া চোখ নিয়ে। ‘‘এই মডেলের মধ্যেই তিন জোড়া চোখ থাকবে?’’ জিজ্ঞেস করলেন দেবদূত। ঈশ্বর মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন, ‘‘হ্যাঁ, যখন সন্তান চোখের সামনে থাকবে তখন তিনি তাদের দেখে রাখবেন এক জোড়াচোখ দিয়ে। যখন দূরে চলে যাবেন তখনও দেখে রাখবেন আর এক জোড়া চোখ দিয়ে এবং ঐ দ্বিতীয় জোড়া চোখ দিয়ে সন্তান যা গোপন করে বা করতে চায় তাও জেনে যাবেন তিনি। আর তৃতীয় জোড়া চোখ দিয়ে সন্তানদের চোখের দিকে তাকিয়ে কোন কথা না বলেই তিনি জানিয়ে দিতে পারবেন সন্তানের মনের কথা।’’

দেবদূত বললেন,‘‘ ঠিক আছে চলুন আজকের মতো কাজ থামিয়ে ঘুমোতে যাই।’’ ‘‘কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব নয়’’ ঈশ্বর বললেন, ‘‘আমি আমার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের একটি জিনিস তৈরীর একেবারে শেষ পর্যায়ে। উনি যখন অসুস্থ্য হবেন তখন নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারবেন। এক পাউন্ড হ্যামবার্গার দিয়ে ছয় জনের একটি পরিবারকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারবেন।’’ দেবদূত এবার কাছাকাছি এসে নারীটিকে স্পর্শ করলেন,‘‘ কিন্তু আপনি তাঁকে এত নরম করে তৈরী করছেন কেন?’’ দেবদূত একমত হলেন,‘‘ সে নরম কিন্তু আমি তাঁকে কঠিন করেও বানিয়েছি। তোমার কোন ধারণাই নাই যে তাঁর পক্ষে কি করা সম্ভব।’’ এবার দেবদূত প্রশ্ন কররেন, ‘‘সে কি চিন্তা করতে পারবেন?’’ শুধু সে চিন্তা করতে পারবেন তা-ই নয়, সে হবে যুক্তি পরায়ন এবং পরামর্শদাতাও।” কিছু একটা দেখে দেবদূত নারীটির কাছে এসে তার গাল স্পর্শ করলেন,” মনে হচ্ছে এই মডেলটিতে একটি ত্র“টি রয়েছে। আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম যে, একটি জিনিসের ভিতর এত বেশী কিছু দেওয়ার দরকার নেই।” “ওটা ত্র“টির কারণে নয়।” বললেন ঈশ্বর, “ওটি হচ্ছে অশ্র“।” দেবদূত বললেন, “কিন্তু অশ্র“ কি জন্য। “ঈশ্বর বললেন, “অশ্র“ই হচ্ছে তাঁর আনন্দ, দুঃখ, হতাশা, কষ্ট, একাকিত্ব এবং তাঁর গর্ব প্রকাশের উপায়।” এবার মুগ্ধ হয়ে দেবদূত বললেন, “আপনি সত্যি সত্যিই প্রতিভাবান। আপনি সব কিছু চিন্তা করে রেখেছেন; আর মায়েরা সত্যি সত্যিই বিশ্বয়কর!”
(এই কথাগুলি ইন্টারনেট এর বিভিন্ন লোককথা থেকে সংগৃহীত। মুসলিম মতে এটি গৃহীত নয় )

মা দিবসের ইতিহাসঃ
১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্টে সর্বপ্রথম মা দিবস পালন করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে অনেক উৎসাহ নিয়ে পালন করার জন্য সরকারী ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। গত ক’বছর ধরে বাংলাদেশে এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করা হচ্ছে। একজন সন্তান হয়ে মায়ের প্রতি ভালবাসার দিন প্রতিদিন এবং প্রতিমূহুর্ত। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা চিরন্তন।

বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুল শিক্ষিকা এ্যানা জারবিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে দারুন মর্মাহত হন। মায়ের প্রতি সন্তানদের অযত্ন, অবহেলা দেখে তিনি ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন তিনি ভাবলেন মায়ের জন্য একটি বিশেষ দিবস পালন করে সন্তানদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায় কিনা। কিন্তু তাঁর সেই ভাবনা বাস্তবায়নের পূর্বেই ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে এ্যানা এম জারবিস মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। মা হারানোর অনুভুতি তিনি তীব্রভাবে অনুভব করেন। শেষ পর্যন্ত মায়ের শেষ ইচ্ছা মা দিবস পালনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য উঠেপড়ে লাগেন। অবশেষে ১৯০৮ সালে এ্যানা এম জারবিস তাঁর মা এ্যানা জারবিস ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় গিয়ে উপাসনা করতেন সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের যাত্রা শুরু করেন।

আবার অনেকে মনে করেন অ্যানা জারভিসের পূর্বে এবং ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জুলিয়া ওয়ার্ড হোউই-এর পরে ১৯৮৭ সালের দিকে মেরী টাওলাস সাসসিন নামে একজন স্কুল শিক্ষক মাদার্স ডে উদ্যাপনের আয়োজন করে। ১৯০৪ সালে ফ্রান্স মাদার ডে নিয়ে প্রচারাভিযান শুরু করেন। এরপর তিন বছর পর অ্যানা জারভিস জাতীয় ভাবে মাদার্স ডে পালনের উদ্যোগ নেন। তিনি মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মাদার্স ডে হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯১০ সালে পূর্ব ভার্জিনিয়াতে সেই দেশের সরকার প্রধান আনুষ্ঠানিক ভাবে মা দিবসের ঘোষণা দেন। ১৯১১ সাল থেকে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই মা দিবস পালিত হয়ে আসছে। আর্ন্তাতিক মা দিবস সংগঠন ১৯১২ সাল থেকে মা দিবস পালন করে আসছে এবং অ্যানা জারভিসকে মাদার্স ডে-র প্রবর্তক হিসেবে ঘোষণা দেন।

মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও মাতৃত্ববোধ জানাতে এখন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিভিন্ন দেশে মা দিবস হিসেবে পালিত হলেও শুধু ব্রিটেনে এ দিবস পালিত হয় মার্চ মাসে। কোন কোন দেশ আবার মে মাসের শেষ রবিবার পালন করে থাকে।

এছাড়াও এ দিবসটি নানা দেশে নানা দিনে পালন হয়ে আসছে। নিন্মে তালিকাটি প্রকাশ করলাম –
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রোববার : নরওয়ে

২ ফেব্রুয়ারি : গ্রিস
৩ মার্চ : জর্জিয়া
৮ মার্চ : আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগভিনা, বুলগেরিয়া, লাউস. ম্যাকডনিয়া, মালডোবা, মন্টেনেগ্রো, রোমানিয়া ও সার্বিয়া।
মার্চের চতুর্থ রোববার : আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্য।
২১ মার্চ : বাহরাইন, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, লেবানন, ওমান, ফিলিস্টিৱন, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।
২৫ মার্চ : স্টেনেভানিয়া।
৭ এপ্রিল : আর্মেনিয়া।
মে মাসের প্রথম রোববার : হাঙ্গেরি, লিথুনিয়া, পর্তুগাল ও স্পেন।
৮ মে : আলবেনিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া।
১০ মে : এল সালভাদর, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো;

মে’র দ্বিতীয় রোববার : অ্যাঙ্গোলা, আরোবা, অস্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, বাহামাস, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, বেলিজ, বারমুডা, ব্রাজিল, ব্রুনেই, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, ডোমিনিকা, ইকুয়েডর, ইশোনিয়া, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ঘানা, গ্রিস, গ্রেনাডা, হন্ডুরাস, হংকং, আইসল্যান্ড, ভারত, ইতালি, জ্যামাইকা, জাপান, লাটভিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, পেরু, চীন, ফিলিপাইন, পুয়ের্তো রিকো, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেইন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইন্স, সিন্ট মার্টিন, সিঙ্গাপুর, সুরিনাম, সুইজারল্যান্ড, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, তুরস্ক, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা ও জিম্ব্বাবুয়ে।

১৫ মে : প্যারাগুয়ে
২৬ মে : পোল্যান্ড
২৭ মে : বলিভিয়া
মে মাসের শেষ রোববার : আলজেরিয়া, ডোমিনিকান, ফ্রান্স, হাইতি, মরিশাস, মরক্কো, সুইডেন ও তিউনিশিয়া।
৩০ মে : নিকারাগুয়া
১ জুন : মঙ্গোলিয়া
জুন মাসের দ্বিতীয় রোববার : লুক্সেমার্গ
জুনের শেষ রোববার : কেনিয়া
১২ আগষ্ট : থাইল্যান্ড
১৫ আগষ্ট : কোস্টারিকা
অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সোমবার : মালাই
অক্টোবরের তৃতীয় রোববার : আর্জেন্টিনা
৮ ডিসেম্ব্বর : পানামা
২২ ডিসেম্ব্বর : ইন্দোনেশিয়া

বাংলাদেশ মে’র দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করে থাকে। আগামী ১২ই মে ২০১৩ ইং তারিখে বাংলাদেশে মা দিবস পালিত হবে তাই এই মা দিবস উপলক্ষে বিশ্বের সকল মাতার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

“The World Mother’s Day, I hope the entire Mother’s Health and I have the meek veneration to announce to all Mothers of the world.”__ MOHAMMAD SAHIDUL ISLAM

মা দিবস সম্পর্কে আমার কিছু কথাঃ
আমাদের দেশে এ দিবসটি খুব একটা উপলব্ধির মধ্যে আসেনি। কারণ পাশ্চাত্যের মতো এত নিষ্ঠুর আমরা এখনও হইনি যে, মাকে নিয়ে ওল্ড হোমে রেখে আসবো। তবুও আমাদের মায়েরা যে কিছুটা অবহেলার শিকার সেটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমি বাংলাদেশী, বর্তমানে সিংগাপুরে একটি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করছি। আমি এখানে দেখেছি বাবা-মা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা হয়। ছেলে-মেয়েরা তাদের দেখতে একটু সময়ও পায়না। আবার দেখি মা দিবস বা বাবা দিবসে অথবা অন্য কোন দিবসে তাদের বাবা-মায়ের কবরে দলে দলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যায়। সময় থাকতে যাদের চিনলাম না, তাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে কি লাভ। তাই আমি সবার কাছে অনুরোধ করব সময় থাকতে মাকে চিনুন। তাই তো বলিঃ

মা জননী নাইরে যাহার, ত্রিভুবনে তাহার কেহ নাইরে,
মায়ের মত আপন কেহ নাই রে, মায়ের মত আপন কেহ নাই।

সন্তানের তরে মায়ের দোয়াঃ
ইসলাম ধর্মে আছে “মা বাপ হচ্ছে তোমাদের বেহেশত, মা বাপ হচ্ছে তোমাদের দোজখ।” অর্থ্যাৎ যদি আমরা মা বাবার কথামত চলি, মা বাবার মনে কোন কষ্ট না দেই তাহলেই আমাদের জন্য বেহেশত সোজা হয়ে যাবে। আর যদি মা বাবার মনে কষ্ট দেই মা বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করি তাহলে দোজখ চিরধার্য। সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া অতি দ্রুত এবং ১০০% কবুল হয়। এই দুনিয়াতেই সন্তানের উপর মায়ের দোয়া অতি দ্রুত এবং ১০০% কবুলের দুটি বাস্তব উদাহরণ আমি নিন্মে তুলে ধরছিঃ

০১ নং উদাহরণঃ
হজরত বায়েজিদ বোস্তামি এর ঘটনাঃ একদিন বায়েজীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মায়ের মাথার কাছে সারা রাত দাঁড়িয়ে ছিল। ফজরের আযান হল। মা ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন। তিনি দেখতে পেলেন বায়েজীদ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। মা বললেন হে বায়েজীদ! তুমি এখানে এ অবস্থায় কেন? বায়েজীদ বলল, মা তুমি গভীর রাতে পানি চেয়েছিলে। কিন্তু পানি ঘরে না থাকায় অনেক দূর থেকে পানি এনেছিলাম তোমার জন্য। কিন্তু এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তাই যতক্ষণ না তুমি ঘুম থেকে উঠবে ততক্ষণ আমি এই পানির গ্লাস হাতে নিয়ে তোমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। এ কথা শুনার সাথে সাথে বায়েজীদের মা বায়েজীদকে বিছানায় কম্বল দিয় শুইয়ে দিল। আর ফজরের নামায শেষে মা বায়েজীদের জন্য এই বলে দোয়া করলেন যে, হে আল্লাহ আজকে বায়েজীদ আমার জন্য যা করেছে তার জন্য আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হে আল্লাহ আমি তার মা হয়ে দোয়া করি, তুমি তাকে সুলতানুল আরেফীন বানাইয়া দিও। আর সেই দোয়া শেষ পর্যন্ত মঞ্জুর হয়ে গেল।

০২ নং উদাহরণঃ
মা এর সম্মান নিয়ে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) এর ঘটনাঃ একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু হোরায়রা বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, কেন তুমি কি কোন বেয়াদবী করেছ? আবু হোরায়রা বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আর আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর দরবার ছাড়বি। আমি বললাম, ও আমার মা। তুমি বুড়ি মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না। তখন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার তো এখানে কিছুই করার নেই। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হে রাসূল (সাঃ) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল (সাঃ) বললেন, তাহলে কেন এসেছ? আবু হোরায়রা বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।” রাসুল (সাঃ) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন আবু হোরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও। আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইয়া বাড়িতে গিয়ে দেখতে চাই আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা দরজায় নক করতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি। মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে। হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মাকে সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।

এইরকম আরো অসংখ্য অসংখ্য ঘটনাবলী বিদ্যমান। আসুন আমরা সবাই এসব ঘটনাবলী কোরআন ও হাদীস থেকে অধ্যয়ন করে মা বাবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি এবং তাদের সেবা যত্ন করে বেহেশত লাভ করি।

মা সম্পর্কে মহা-মনীষীদের বানীঃ

মা সম্পর্কে আব্রাহাম লিংকন বলেছেন “আমি যা হয়েছি বা যা হতে চাই তার সবটুকুর জন্যই আমি আমার মায়ের কাছে ঋণি। আমার মায়ের প্রার্থনাগুলো সব সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে ছিল”। এ বিষয়ে বালজাক বলেছেন “ মায়ের হৃদয় হচ্ছে এক গভীর আশ্রয়, সেখানে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন মমতার সুশীতল ছায়া” এবং জন গে বলেছেন, “মা, মা-ই তার অন্য কোন রূপ নেই।” এ সম্পর্কে আল-হাদিসে আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহশত্ এবং আল-কোরআনে আছে, যে গর্ভ তোমাকে ধারণ করেছে সে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি কর্তব্য কর ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর।

ইংরেজ কবি রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন যে, (Motherhood: All love begins and ends there.) মাতৃত্বেই সকল ভালোবাসার শুরু এবং শেষ।
কার্ডিনাল মারমিলডও (Cardinal Mermillod) বলেছেন,

“মা হচ্ছেন তিনি, যিনি অন্য সকলের স্থান পূরণ করতে পারেন, কিন্তু তার স্থান কেউ পূরণ করতে পারে না।”
দক্ষিণ আফ্রিকান লেখক অলিভার স্রেইনার (Oliver Schreiner) তার The Story of an African Farm-এ বলেছেন: “এমন কোনো মহান ব্যক্তি ছিলেন না, যার একজন মহান মা না-ছিল।”

আমেরিকান কবি ও লেখক রালফ ওয়ালডো এমারসনও (Ralph Waldo Emerson) বলেছেন: “মানুষ তা-ই যা তার মা তাকে বানায়।”

মা সম্পর্কে কবি সাহিত্যিকদের বানীঃ

কবি হাওয়ার্ড জনসন (Howard Johnson) ইংরেজি ভাষার কবি M-O-T-H-E-R শিরোনামে একটি অসাধারণ কবিতা লিখেছিলেন। ‘মা’-কে কতো সুন্দরভাবেই না তিনি বর্ণনা করেছেন! তিনি লিখেছেন–

‘M’ is for million things she gave me,
‘O’ means only that she’s growing old,
`T’ is for the tears she shed to save me,
‘H’ is for her heart of purest gold;
‘E’ is for her eyes, with love-light shining,
‘R’ means right, and right she will always be,
Put them all together, they spell “MOTHER,”
A word that means the world to me

কবি হাওয়ার্ড জনসন (Howard Johnson) এর কবিতা যদি এক কথায় বলি তাহলে দাড়ায়, মা আমাদের জন্য কি না করে থাকেন? মা জননী সন্তানের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত থাকে।

তারকাদের মা হওয়ার অনুভুতিঃ
মা হওয়াও কষ্ট, না হওয়াও কষ্ট। মা হলেও কষ্ট, না হলেও কষ্ট। মা হতে চাইলেও কষ্ট, না চাইলেও কষ্ট। মায়ের সঙ্গে যদি এত কষ্টই থাকে তবে কেন বলা হয়_ ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’ আসুন আমরা দুজন তারকা মায়ের কাচ হে শুনি তাদের অনুভুতিঃ

ফারজানা চুমকি
“মা হওয়ার সময়ের সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ওই মুহূর্তটা, জন্মানোর পর যখন বাচ্চার গালটা আমার গালে স্পর্শ করালো ডাক্তার। আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল সেই সময়।” বললেন অভিনেত্রী ফারজানা চুমকি। তিনি আরও বলেন, “মা হওয়াটাই স্মরণীয় ঘটনা। তবে বাচ্চার জন্মের সময়টা, প্রথম কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওয়া, আজীবন মনে থাকবে এসব মুহূর্তগুলো।”

শারমীন শিলা
১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মা হন শারমীন শিলা। একমাত্র মেয়ে ঋধিকা তাশনিয়া জিশান। মা হওয়ার সময়টাই এই অভিনেত্রীর কাছে ছিল চরম আনন্দের। তিনি বলেন, “মা হওয়াটাই আনন্দের বিষয়। স্মরণীয় অভিজ্ঞতা বলতে সেটাই।

সমাপনী বক্তব্যঃ
নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, দেশ-বিদেশ কোথাও কারও সঙ্গে ‘মা’-এর কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কোনো বিভেদ নেই। নেই তারতম্য। সবাই সমান, সবই সুন্দর। নারী-পুরুষ ভেদাভেদের বাইরে মা একটি নিজস্ব সত্তা, একটি সত্য। আর তাই মায়ের কাছে ছেলে-মেয়ে সব সন্তানই সমান, মা সর্বজনীন। মা ভালোবাসা। একটি পরম মমতা। মা বুকের কাছে জাপটে ধরে আগলে রাখা একটি ছায়া। মাকে নিয়ে লিখলে আমার মনে হয় কয়েক দিনেও শেষ হবেনা। মা এর সাথে তুলনা হয় বিশ্বে এমন কিছুই নাই। তাই তো আমি আমার এ লেখার শেষে বলব ওগো মা, তুমি শুধুই মা, পৃথিবীতে নাই তোমার তুলনা।