অনেকেই মনে করতে পারেন আমি বোধহয় বিএনপি করি, বিশেষ করে যারা এই ব্লগে প্রকাশিত আমার আগের লেখাটা (প্রসঙ্গ : শীর্ষ সাতের হঠাৎ ধনী কিশোরগঞ্জ ) পড়েছেন এবং এই লেখাটা পড়বেন কিন্তু আমার কাছের মানুষগুলো, বিশেষ করে আমার বন্ধুবান্ধব সবার ধারনা আমি বোধহয় আওয়ামী লীগ করি। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো এই যে আমি যেকোন দলের ভালো কাজের পক্ষের মানুষ, মূলতঃ আমি কোন দলের মানুষ নই। যদিও রাজনীতির উপর পড়াশুনা করার কারনে আমার নিজস্ব একটা রাজনৈতিক দর্শন আছে। যাহোক প্রাসঙ্গিক কথায় আসি, আজকে আবার প্রসঙ্গ: শীর্ষ সাতের হঠাৎ ধনী কিশোরগঞ্জ সেই পুরনো লেখাটার ফলোআপ লিখতে হচ্ছে।

যুদ্ধের ময়দানে যেমন কোন সৈনিক অস্ত্র হাতে নিরস্ত্র মানুষের মতো দাড়িয়ে থাকতে পারেনা তেমনি কোন কলম সৈনিকও কোন অসঙ্গতিপুর্ণ কিছু দেখলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেনা। বিলেতের এই রুটিন জীবনে সবকিছু ঘরির কাটার সাথে চললেও ভুলে যেতে পারিনা যে আমার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জে কখন কি হচ্ছে। তাই পত্রিকার পাতা খুললে প্রথমেই দেখতে হবে কোথায় কিশোরগঞ্জের খবর আছে। আবার এখন সামাজিক যোগাযোগের এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠা ফেইসবুকের কল্যাণে অনেক কিছুই জানার সুযোগ হয়ে যায় সাংবাদিক বন্ধুদের নিজস্ব সংবাদ আপলোডের ফলে। গত ২০শে জুলাই মানবজমিন পত্রিকার কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধির (আমার খুব কাছের একজন সুহৃদ, ভাটি এলাকার একজন প্রগতিশীল কলম সৈনিক) কিশোরগঞ্জের একমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন এগারসিন্দুর এর বর্তমান অবস্থা নিয়ে লিখা রিপোর্টটি নজর কাড়ে। এগারসিন্দুর নিয়ে সেই শুরু থেকেই অভিযোগের কোন শেষ নেই কিন্তু কে শোনে কার কথা।

এগারসিন্দুর নিয়ে প্রায়শই দেশের জাতীয় সংবাদপত্র গুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও এই ব্যাপারটি যেমন দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টিক তেমনি দেশের শীর্ষ সাতটি পদে বহাল তবিয়তে থাকা আমাদের কিশোরগঞ্জের গর্ব রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, মন্ত্রী, সেনাপ্রধান, উপদেষ্টা প্রমুখের। এমনিতেই এই আন্তঃনগর নামের লোকাল ট্রেনটির ভোগান্তির শেষ নেই তাও আবার মরার উপর খাড়ার ঘা। মন্দের ভালো হিসেবে এতাদিন এই ট্রেনে প্রথম শ্রেণীর দুটি বগি বরাদ্দ ছিলো কিন্তু চলতি মাসের ১২ তারিখে নাকি সেই বগি দুটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতো দেখি কিশোরগঞ্জবাসীর এখন দুই বিঘা জমির মালিক উপেন বাবুর অবস্থা। এর দুটি কারণ থাকতে পারে বলে আমার কাছে মনেহয় ।

১. একটি আন্তঃনগর ট্রেনে যেসব সুযোগ- সুবিধা থাকা উচিৎ তার ন্যুনতমটুকু হয়তো এই বগি দুটিতে ছিলো। আর এই বগি দুটিকে প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে অনানুষ্টানিক ভাবে এগারসিন্দুরকে একটি লোকাল ট্রেন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কাজ টুকুই সারলেন কর্তৃপক্ষ।

২. আবার এমনও হতে পারে দেশের শীর্ষ সাত হেভিওয়েট ব্যাক্তিত্ব আমাদের কিশোরগঞ্জের গর্বের ধন কর্তাব্যাক্তিরা ভাবতে পারেন মাত্র কিছুদিন পূর্বে সরকারের দারিদ্র মানচিত্রে এই জেলা একটি ধনী জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তাই এখানে এরকম আন্তঃনগর নামধারী একটি লোকাল ট্রেন মানায় না। হয়তোবা অতি শীঘ্রই একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আন্তঃনগর হাওর/নরসুন্দা/শীর্ষসাত অথবা ধনী জেলা এক্সপ্রেস নামে কোন নতুন ট্রেন কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য উনারা ব্যবস্থা করছেন।

আর একারনেই বোধহয় এগারসিন্দুরের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। যদি আমার এ আকাশ-কুসুম ধারনা সত্যিই হয় তাহলে সাময়িক এ ভোগান্তি কিশোরগঞ্জের মানুষ মাথা পেতে নেবে বলে আমার বিশ্বাস। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আমাদেও ভারত উপমহাদেশ পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই অনিয়ম হচ্ছে, হবে কিন্তু এর একটা মাত্রা থাকা উচিৎ, যেটা আমাদের দেশে নেই উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। সুযোগ পেলেই রেলষ্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর হয়ে যান বাংলার কোন বার ভুইয়ার বংশধর, আর এ থেকে পিছিয়ে নেই আমাদের কিশোরগঞ্জের ষ্টেশনে কর্তব্যরত দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়,চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীগণ। ইংল্যান্ডে দেখলাম রেলষ্টেশনে সেল্ফ অপারেটিং মেশিন আছে যেখানে একজন লোক চাইলে নিজের টিকেট নিজেই করে নিতে পারেন। আবার অনলাইন টিকেটিং সিষ্টেম তো আছেই। জানি এটা আমাদের মতো গরীব এবং স্বল্প শিক্ষিতের দেশে হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু এটাও সত্যি আমাদের সেই স্বল্প শিক্ষিত লোকগুলো কিন্তু এসব দেশে এসে এই মেশিনগুলো নিজেরাই অপারেট করছে।

আমি বিশ্বাস করি যেখানে কোন অবস্থার সর্বোচ্চ অবনতি ঘটে সেখানেই শুরু হয় উন্নতির নতুন প্লাটফরম। সরকারের হিসেবে হঠাৎ ধনী কিশোরগঞ্জের একমাত্র আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ট্রেনটির ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয় তবেই না এই রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দূর্ভোগের অবসান হতে পারে। বিলেতের হিমশীতল আবহাওয়ায় আশায় বুক বেধে রইলাম কিশোরগঞ্জের সাংবাদিক বন্ধুদের যেন আর এই ধরনের নেগেটিভ সংবাদ না লিখতে হয়, এ ব্যাপারে পরবর্তী সংবাদ যেন হয় অবশেষে সুদিন ফিরলো এগারসিন্দুরের যাত্রীদের। এই পদক্ষেপই নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং কিশোরগঞ্জের শীর্ষ সাত সূর্য সন্তান।

লেখক : গাজী মহিবুর রহমান
সাংবাদিক,
প্রবাসবাংলা (ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা পত্রিকা)