বিজয়ের ৪০ বছর! আনন্দ এবং বিষাদের অনুভূতি মেশানো ক্ষন। আনন্দের এই জন্যে যে হাজার বছরের বাঙালির সংগ্রামমুখর ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জল দিন হচ্ছে ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর। স্বাধীন দেশ এবং জাতি হিসেবে আমাদের অর্জন নেহায়েৎ কম নয়। ভৌগলিক স্বাধীনতার বাইরেও বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় এবং আয়ু বেড়েছে, নিরক্ষরতার হার এবং শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্র প্রশারিত হয়েছে অনেক। আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়ে গেছে ভাবতেই বিষাদে মন ভরে উঠে, কারন ৪০ বছর তো একটি ক্ষুদ্র মানবজীবনের তুলনায় অনেক সময়। সামনে এগুতে হলে মানুষকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়। অর্জিত সাফল্য এবং ব্যর্থতার হিসেব নিকেষ করেই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে মানুষ। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিগত ৪০ বছরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির এবং জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা কতদূর পূরন হয়েছে সেটা মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।
নীবিভক্ত একটি সমাজে প্রাপ্তী আর ব্যর্থতার হিসেব করা সহজ নয়, কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এবং উৎপাদন কাঠামোর সিঁড়িতে কার অবস্থানকোথায় তার উপরই নির্ভর করে আশা পুরন আর ব্যর্থতার যোগফল। গত চল্লিশ বছরে যারা শাসন ক্ষমতার অধিকারীহিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তাদের অনুকূলে ব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের কাছে বাংলাদেশের চেয়ে উৎকৃষ্ট কোন স্থান যেমন পৃথিবীতে নেই, তেমনি যারা শুধুই রাষ্ট্রযন্ত্রের যাতাকলে নিস্পেষিত হয়েছে তাদের জীবনে প্রাপ্তির চেয়ে স্বপ্নভঙ্গের পরিমাণ যে অনেক বেশী সেকথা বলাই বাহুল্য। তাহলে প্রশ্ন উঠবে নিরপেক্ষভাবে একটি সমাজের অর্জন এবং ব্যর্থতার হিসেব মেলানো আদৌ কি সম্ভব? এ দেশ আমার, আর এর ভালোমন্দ বিচার করার দায়িত্বও আমারই। ১৯৭১ এ আমি হাই স্কুলে পড়া এক কিশোর, কিন্তু দেশ মায়ের মহাদুর্্যোগের সময় জীবনের মায়া তুচ্ছ করে কলম ছেড়ে রাইফেল হাতে তুলে নিয়েছিলাম এবং আমার প্রানপ্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মামা মিসবাহউদ্দিন আহমেদ মিজুর ছায়া হয়ে যুদ্ধের মাঠে আর প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। সেই মুক্তিযোদ্ধা মিজু মামা ১৯৭১ এর ২২ নভেম্বর শহীদ হন। শহীদ সেই মুক্তিযোদ্ধা মামার রক্তে লাল আমাদের প্রিয় পতাকার দিকে তাকালেই গর্বে আমার বুক ভরে উঠে আর চোখ ভরে উঠে জলে।
বাংলাদেশের মতো শ্রেণীবিভক্ত সমাজে কোন সংবিধান, আইন, নীতিমালা, এবং পরিকল্পনাই শ্রেণী-নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। অনুরুপভাবে, শ্রেণীবিভক্ত সমাজের কোন মানুষই শ্রেণীস্বার্থের উর্দ্ধে থাকতে পারেনা, কারণ রাষ্ট্রীয় সমস্ত সিদ্ধান্তই প্রত্যেকটি মানুষের শ্রেণীস্বার্থের অনুকূলে অথবা প্রতিকূলে যায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি মানুষই তাঁর নিজ নিজ শ্রেণীর অবস্থান থেকেই সমস্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাখা প্রদান করে। তবে, কখনো কখনো নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে কোন কোন মানুষ তার নিজ শ্রেণীর বিপরীতেও অবস্থান নেয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমার নিজেরও অবশ্যই একটা শ্রেণী অবস্থান আছে, যা কিনা বাংলাদেশের উচ্চমধ্যবিত্ত; কিন্তু আমি নিজেকে সমাজের বৃহত্তম অংশের, যাদের শ্রমে আর ঘামে উৎপাদনের চাকা এবং অর্থনীতি প্রবহমান, অর্থ্যাৎ কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষাকারী মানুষদের একজন ভাবতে বেশী পছন্দ বোধ করি। এবং স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বিগত চার দশকের মূল্যায়নে সে দৃষ্টিভঙ্গীরই প্রকাশ পাবে।
একটি দেশের সমস্ত কর্মকাণ্ডকেই মোটামুটি তিনভাগে ভাগ করা যায় : রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের চারটি মুল স্তম্ভ হিসাবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদকে স্থান দেওয়া হয়েছিল; তদুপোরি, জনগনই রাষ্ট্রের সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী এ কথারও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, কথা এবং কাজের ফারাক সেই প্রথম সংবিধানেই নিহিত ছিল, যা কিনা পরবর্তিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভিধানের এক অচ্ছেদ্দ্য অংশই হয়ে উঠেছে। গনতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, এবং স্বার্থরক্ষাকারী সমাজ ব্যবস্থা, যেখানে ভিন্ন মত এবং পথের প্রতি মানুষ শ্রদ্ধাশীল আর সহনশীল থাকবে। অতীতে বাকশাল প্রতিষ্ঠা এই মতবাদের পরিপন্থি ছিল, এবং বর্তমানের পরিবার এবং গোষ্ঠি-ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা গনতন্ত্রের পরিপন্থি। সমাজতন্ত্র হচ্ছে সমাজের সার্বিক কল্যানে, অর্থ্যাৎ ব্যাক্তি স্বার্থের উর্ধে উঠে বৃহত্তর কল্যানে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় দেশ পরিচালনা। একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজের অন্তর্নিহিত কাঠামোতেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠির গনতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা এবং স্বার্থ নিহিত থাকে। অন্যদিকে, সমাজতন মূলসুত্রেই যেখানে সব জাতির, ধর্মের, বর্ণের, লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা আছে, সেখানে আলাদা করে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্বীকৃতি দেওয়া অপ্রয়োজনীয়। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, একটা সমাজতান্ত্রিক সমাজে মানবতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম।
উপরুন্ত, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ হচ্ছে পরস্পর বিরোধী মতবাদ। অন্যদিকে, বাংলাদেশের মত একটি মিশ্রজাতির জনগোষ্ঠিকে শুধুই বাঙালি জাতীয়তাবাদের খাঁচায় বন্দী করার প্রবনণতাও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতি এবং নৃ-গোষ্ঠির কাছে অগ্রহনযোগ্য। চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, ত্রিপুরা, গাড়োসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠিকে সংবিধানে স্বীকৃতি না দেওয়ার ফল যে ভাল হয়নি তা গত চার দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী বিদ্রোহেই স্পষ্ট। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ সময়কালীন সরাসরি এবং প্রচ্ছন্ন সামরিক শাসনামলে সংবিধানের মূল স্তম্ভকে পরিবর্তন করে রাষ্ট্রকে দিয়ে নামাজ রোজা করানোর নিমিত্তে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে, যা কিনা বর্তমানের তথাকথিত সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী রাজনৈতিক দলগুলোও অতিউৎসাহে মাথায় তুলে নিয়েছে। এমনই এক জগাখিচুড়ী রাজনৈতিক দর্শনের দিকনির্দেশনায় জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে (নাকি পিছিয়ে?) যাচ্ছি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো মূলতঃ কৃষিপণ্য নির্ভর, যদিও তাতে তৈরী পোষাক শিল্প এবং প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মূদ্রার যোগানও একটা বড় ভূমিকা রাখছে। বিগত চল্লিশ বছরে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও সার্বিকভাবে কৃষকের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়নি। কোন কোন হিসাব মতে, দেশের প্রায় ৮০% কৃষকরাই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সেই সংখ্যা ছিল ৫০% শতাংশেরও কম। সরকারী তত্বাবধানে কৃষিশিল্প-ভিত্তিক কারখানা বেড়ে না উঠায় এবং ক্রমাগতহারে কৃষি -উৎপাদন সামগ্রী এবং বীজের দাম বেড়ে চলায় কৃষকরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এবং কৃষিজমির মালিকানা ক্রমেই ধনীক শ্রেণী, মহাজন, এবং বেসরকারী সাহায্য সংস্থার হাতে চলে যাওয়ার ফলে ফসল উৎপাদন থেকে সরে গিয়ে কৃষিজমিকে আবাসন এবং মাছ চাষের পুকুরে পরিণত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ধনী এবং গরীবের মধ্যকার আয়ের ব্যাবধান ক্রমেই বেড়ে বর্তমানে বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হয়েছে। অন্যদিকে, ব্যাক্তি মালিকানায় কৃষিশিল্প গড়ে উঠায় কৃষি উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত কৃষকরা লাভের অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ একেবারে কম নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্দোগে (সীমিতহারে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায়) প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়ন এবং উত্তোলন করা হচ্ছিল, কিন্তু বর্তমানে এই নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে অনেক গ্যাস ক্ষেত্রই এককভাবে বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানীর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের অর্ধেকেরও বেশী উত্তোলন করছে বিদেশী কোম্পানীগুলো। যেখানে ৪০ বছর আগেই আমাদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞরা তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদের উন্নয়ন এবং উত্তোলন করতে সক্ষম ছিল, সেখানে সঠিক নীতিমালা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ খাতের আরো উন্নতিই হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। আবার, তৈরী পোষাক শিল্প যেখানে আমাদের অর্থনীতিতে এতবড় অবদান রাখছে, সেখানে শ্রমিকদের বেতন এখনও অবিশ্বাস্যভাবে কম রাখা হয়েছে।
অথচ, পোষাক শিল্পের মালিকদের লাভের অংশ দ্রুতহারে বেড়েই চলেছে এবং তাদের প্রায় সবাই এখন বড় বড় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রাজনীতির নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শিল্প মালীকরা তাদের শ্রেণী অবস্থানের কারনেই শ্রমিকদের স্বার্থ দেখার প্রয়োজনবোধ করেনা, কারণ যে আইনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হবে সে আইন তৈরী করার মসনদেও তারাই সমাশীন। তাছাড়া, সুশাসনের অভাব, জীবনের সর্বস্তরে ব্যাপক দূর্নীতি, আর স্বজনপ্রীতি বাংলাদেশকে এক অন্ধকার যুগের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। শিল্পপতিদের ক্ষমতার এতই দৌড়াত্ব যে তারা উৎপাদনের দোহাই দিয়ে দেশের সার্বিক প্রাকৃতিক পরিবেশকে অশোধীত বর্জ্যনিস্কাশনের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। জীববৈচিত্র ধ্বংস করে জলাভূমি এবং নদীনালা দখল করে নিয়ে চলছে বাণিজ্যের এক নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের মাত্রা পৃথিবীর প্রায় সব দেশের তুলনায় বেশী, এবং ঢাকা নগরীকে পৃথিবীর দ্বিতীয় নোংরা, বাসের অনুপযোগী মহানগরী হিসেবে গন্য করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎকে এইভাবেই দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
একটা জাতির শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, নাচ, গান, নাটক, সিনেমা, কলা, প্রযুক্তি, এবং নন্দনতাত্বিক সমগ্র কর্মকাণ্ডের অভিব্যাক্তির সার্বিক প্রকাশকেই সংস্কৃতি বলা হয়। সংস্কৃতিই হচ্ছে সভ্যতার মানদন্ড। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নিজস্ব ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সম্বৃদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্র তৈরী হয়েছিল এবং গুণগত মানে উত্তীর্ণ কিছু সৃষ্টিকর্মও হয়েছিল, কিন্তু সেই মান খুব বেশীদিন ধরে রাখা যায়নি। এক্ষেত্রে শিক্ষা ক্ষেত্রের অধঃপতনটাই সবচেয়ে ক্ষতিকারক। গ্রামের স্কুলগুলিতে এখন যে মানের শিক্ষা প্রদান করা হয় তাতে খুব কম ছেলেমেয়ের পক্ষেই এখন গ্রামের কোন স্কুল-কলেজ থেকে পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রকৌশল, চিকিৎসাবিদ্যা, বা সরকারী প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ভাল ছাত্র ছাত্রীরা গ্রামের স্কুল-কলেজ থেকে অনায়াসে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতো। বর্তমানে স্কুল-কলেজের শিক্ষা মূলতঃ শহরের ব্যয়বহুল কোচিং সেন্টার কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। গ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অন্ধকারে রেখে আর যাই হোক সুস্থ্য, সুন্দর, উন্নত বাংলাদেশ গড়া যাবেনা। সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে এখন চলছে অসুস্থধারার বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন। সামাজিক এবং পারিবারীক মূল্যবোধ বিবর্জিত সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, গানের মনোজাগতিক আগ্রাসন রোধ করা না গেলে আমাদের যা কিছু অর্জন তার সবই অসুস্থ সংস্কৃতির গহবরে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের সর্বত্র এক পদ্ধতির এবং এক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমেই শুধু এই অবক্ষয় কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি? এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, তা নির্ভর করবে আমরা কি ধরনের বাংলাদেশ চাই, এবং কোন শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এই বাংলাদেশের মানুষ কাজ করবে তার উপর। কথায় আছে, জনগণ সবসময় তাদের যোগ্য শাসন ব্যবস্থা এবং শাসকই বেছে নেয়। তাই, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে ইতিহাস-নির্দিষ্ট পথে সংগঠিত হয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শোষনমুক্ত মানবতাবাদী সমাজ গঠনের লক্ষে কাজ করতে হবে। লড়াই সংগ্রাম ছাড়া পৃথিবীতে কেউ কোনদিন কল্যাণকর কিছু অর্জন করেছে বলে মানব ও সভ্যতার ইতিহাসে নেই।
–খালেকুজ্জামান মতিন, অধ্যাপক, ভূ-তত্ত্ব বিভাগ, লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।