বাঙ্গালি কালে কালেই শাসক-শোষকের বিভিন্ন কুচক্রান্তে আবর্তিত হয়েছিল। আর যুগে যুগে জন্ম হয়েছিল কিছু নির্লোভ সূর্য সন্তান্তের। যাঁরা মাতৃভূমির মানকে সমুন্নত রাখতে তুচ্ছ করেছিল নিজের জীবনকে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গতে উজ্জ্বীবিত করেছিল পুরো জাতিকে। বিনিময়ে শাসক গোষ্ঠীর চক্রান্তে বরণ করে নিয়েছিল শত বঞ্চণা আর অমানুষিক অত্যাচার। তবুও স্বপ্নকে বিকিয়ে দেয়নি। মাথা নত করেনি পরদেশী শাসকের বর্বর নির্যাতনের কাছে। স্বাধীনতার সোনালী স্বপ্ন তাঁদের মৃত্যু ভয়কেও তুচ্ছ করে দিয়েছিল। কিন্তু এ অর্জনের পেছনে যে নেতৃত্ব বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বাদে উন্মত্ত করেছিল, যে ডাক বাঙালিকে স্বজন ছেড়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে বাধ্য করেছিল, তিনি হলেন গণমানুষের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু যেন তেমনি এক মানবীয় উপাখ্যান। যার পরতে পরতে ছিল নিষ্ঠা, দেশপ্রেম আর আত্মোৎস্বর্গী মানসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম একই সুতোয় গাঁথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনন্য সৃষ্টি, তাঁরই জীবনের ইতিবৃত্ত নিয়ে লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”। যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। আর তিনি যদি এই বইটির রসদ অর্থাৎ ডায়েরীটা না লিখে যেতেন, তাহলে বাঙ্গালি জাতি তথা বর্তমান প্রজন্ম জানতোই না বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ সম্পর্কে। জানতো না উনিশ শতকের শুরু থেকে কেমন ছিল আমাদের মাটি ও মানুষের রাজনীতি, কেমন ছিল এখানকার রাজনৈতিক নেতাদের মানসকাঠমো। কারন এ নিয়ে এ যাবত পর্যন্ত ছিল না কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আমাদের সেই অভাবই কেবল পূরণ করেনি, আমাদের ইতিহাসের আয়নায়ও দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফলে আমরা যেমন আমাদের চিনতে পারছি, একইভাবে আবিষ্কার করতে পারছি সেই কালের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভূগোলও।
দেশের জন্য তাঁর মমত্ববোধ আর অসামান্য আত্মত্যাগের কথা। আমরা খুব সৌভাগ্যবান যে তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সহযোগীরা বিষয়টির অন্তমিল রেখে সুচারুভাবে পাঠোদ্ধার করেছেন। বাঙ্গালি জাতি সুযোগ পেয়েছে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনকের আত্মোপলব্ধি ও জীবনবোধের সাবলীল কথাগুলো জানার। প্রত্যাশা আগামীর রাজনৈতিক কর্ণধাররা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এক জীবনীকে পাথেয় হিসেবে বেঁছে নিবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, যে মানুষের রাজনৈতিক দর্শন সাধারণ মানুষের জীবনের উন্নয়ন ঘটায় না, যে রাজনীতি সাধারণ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে না, সে রাজনৈতিক আদর্শ ও রাজনীতিক তাঁসের ঘর সম। আগামী প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় আরো উদ্যোগী হবে। সুস্থ্য রাজনীতির পথকে আরো প্রসারিত করবে, এ শুভ প্রত্যাশার কান্ডারী হয়েই রইলাম।
সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।