কিছু কিছু বিষয়ে লিখা বেশ বিব্রতকর। এগুলুর মধ্যে এটী একটি। কেনো বিব্রতকর! এটা লিখা আরো বিব্রতকর। অনেক কিছু লিখার দুর্দম্য বাসনাটা চেপে রেখেছি বেশ কিছুদিন- ভাবনা পিছে কোথা হতে কই সীমা লঙ্ঘিত হয়। কা’কে অপমানিত করা হয়, কাকে রাগান্বিত করা হয়, কা’কে আবার কষ্ট দেয়া হয় নিজের অজান্তে। আবার এটাও ভাবনাতে চপেটাঘাত করেছে- এ নিয়ে লিখতে গিয়ে যদি নিজ ভাষাতে নোংরা, অস্রাব্য শব্দ সমুহের অনুপ্রবেশ ঘটে! লিস্টে থাকা বয়ঃজ্যাষ্ঠ্য গনের ইতর সম্বোধন বা অনূজ দের জিহ্বকামড়ে লজ্জার কারন হই, এই আশঙ্কায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত সমালোচিত বিষটি আবর্তিত আন্দোলিত হচ্ছে। আমি আখ্যায়িত করেছি “বনানী বলৎকার” বলে।
পুলিশ পরিবারে জন্মের সুবাদে শব্দটির সাথে পরিচয় অনেক ছোটবেলায়। অর্থ জানতাম না, কিন্তু ফুপাজী (ও,সি)যখন জেলা সদর থেকে ফিরতেন ফুপু আম্মার জিজ্ঞাসাতে ফুপার উত্তর ছিলো “বলৎকার রিপোর্ট’ এর স্বাক্ষী ছিল কোর্টে। ফুপু বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের পাঠানো হতো অন্য ঘরে। নারী পুরুষের আকাম কুকাম বলে আমাদের রক্ষনশীল সমাজে অনেক বিশয়গুলুর মধ্যে এটাও ছিলো “ট্যাবু’ড”। যদদূর যতসামান্য জেনেছিলাম নবম শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষায় “স্বামীর প্রতি স্ত্রী’র কর্তব্য” “হায়েজ কালে মেয়েদের রোজা-নামাজের বিধি নিষেধ” ইত্যাদি। কারন সেসময়ে আমাদের বয়ঃস্বন্ধী কালে নানা কারনে সমাজ এবং পরিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (ক্যারিকুলাম) আমাদেরকে অতি প্রয়োজনীয় নারী পুরষের দৈহিকত্বত্ত, মেলামেশা, জানা অজানা, বিধি নিষেধ (লিমিটেড এডিশনে) অবহিত করনে ব্যর্থ হয়েছে।
আমরা অকাল পক্ক কিশোর কিশোরী গন বাংলা হিন্দি সিনেমার ভিলেন/হিরোদের নায়িকা অঙ্গের যত্রতত্র হস্তচালনা কে জায়েজ ধরে বালিকা বিদ্যালয়ে স্কুল কলেজ গামী মেয়েদের ঊত্যক্ত করে রেহাই পেয়েছি। কালক্রমে পশ্চিমা আকাশ সংস্কৃতি বিশেষ করে ভারতীয় টিভি আর মোবাইল ফোন অনুপ্রবেশের সাথে সাথে আমরা এ বিষয়গুলুতে রাতারাতি বুজ্জর্গ বনে গিয়েছি। আমাদের শব্দ সম্ভারে ঢুকে গিয়েছে “ বি,এফ” “জি-এফ” “ ডেটিং” “সেক্স করা” প্রায় সাথে সাথে সমাজের বিভিন্ন স্তরে চালু হয়েছে জ্ঞানলব্ধ এগুলুর “ পরীক্ষা মূলক সম্প্রচার”। যেটির সরাসরি প্রতিফলন অতি সাম্প্রতিক বনানী বলৎকার।
আমি সমাজ বিজ্ঞানী নই, তবে পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্য, অসভ্য, উন্নত, অনুন্নত দেশের সমাজে চলাফেরাতে মানব রিপু সংক্রান্ত এই ঝামেলা গুলু নিয়ে ব্যক্তিগত অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়েছি। জেনেছি দৈহিক বলৎকার এবং চোখের বলৎকারের পার্থক্য। তবে এটা বুঝেছি যে সমাজ যত “রক্ষনশীল” সে সমাজে এ বিষয়গুলু বেশী জটিল ভাবে গভীরে রন্ধ্রায়িত। ব্যক্তিগত উদাহরনের শেষ নেই।
কোন এক জায়গায় পড়লাম – ধর্ষিতা বোন টি বলেছে – “আমি বলেছি – “না” তবুও ও শোনে নি”। আজকে জানলাম আটক হওয়া এক অপরাধী পুলিশ কে জানালো- মেয়ে’দের উপরে বলপূর্বক সওয়ার হওয়া (বলৎকার) কোন অপরাধ বলে এই কুলাংগারটির জানা নেই বলে স্বীকার করতে পারলো যার অপরাধ বোধটিই নেই সে কি করে হারাম ছহব্বত মজেজা বা “নো কন্সেন্ট” অথবা “না” এর মর্যাদা বুঝবে!
আর ভিক্টিম আপুটির জন্য আমার সহমর্মিতা-আপুনি, আপনি বড়ই অনুন্নত দেশে থেকে বড়ই উন্নত দেশের মানসিকতা নিয়ে “পরীক্ষা মুলক সম্প্রাচারে অংশ নিলেন এবং বলৎকার সতর্কবানী টি ব্যবহার করেলন। কারন, আমরা নারীর মুল্যায়ন, ক্ষমতায়ন বলে জাতিক, বহুজাতিক সম্মলনে, দলিল দস্তাবেজে যতই সই সাবুদ, নাকে খত দেই না কেনো আমরা এখনো জাহেলিয়া’র যুগেই আছি। নতুবা বিশ্ব যখন মানবদেহের খুচরাংশ কলিজা, ফ্যপাস্যা, হৃদযন্ত্র ফার্মেসির বিক্রির জন্য তাকে দেয়ার জন্য চেষ্টারত, আমরা তখন আমাদের নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জন বাহন বাসে পুংলিঙ্গের পশ্চাৎদেশ স্ত্রীলিঙ্গের আসনে প্রতিস্থাপনের জন্য জাতীয় সংসদে তর্ক বিতর্কে আইন প্রনোয়ন ব্যাস্ত।
বলপুর্বক বলৎকার ঘৃনিত এবং দন্ডনীয় অপরাধ। শুধু বলৎকার কেনো, নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রে কারও অনুমতি ব্যাতিরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করাও অপরাধ।
হারাম স্ত্রী তো দূরের কথা এমনকি হালাল স্ত্রী’র সাথে হালাল ছহব্বতেও অনুমতি’র প্রয়োজন। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য যাই থাকুক স্ত্রী যদি একবার উচ্চারন করে “না” স্বামীটি স্ত্রী’র উদ্দেশ্য বাতাসে চুমু দিয়ে অন্যদিকে পাশ ফিরে বাকী রজনি পার করাই উত্তম।
বনানী বলৎকার ঘটনাটি একটি জঘন্য অপরাধ, দেশের প্রচলিত স্বচ্ছ আইনী প্রক্রিয়া অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছি। বলৎকার দেশে কোন নতুন ঘটনা নয়। এর’চে জঘন্য পৈশাচিক বলৎকার ঘটনা আমাদের অনেকের ই জানা। এ নিয়ে অনেক বোন অতীতে লজ্জা ক্ষোভে আত্নাহুতি দিয়েছে, গঙ্গার জলে অথবা তমালের ডালে। কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছি এই ভেবে- আপু’টি অনেক দৃপ্ততা আর সাহসে সমাজের সামনে এসে অপরাধীর বিচার প্রাথনারত। অন্যদিকে লম্পট্টির স্ত্রী ও বানিয়া পরিবারের শাস্তি দাবীতে সোচ্চার।
এখন, রাষ্ট্র এবং সমাজকে ওদের মতো সাহসী হতে হবে, যেন বলৎকারের মতো ব্যাধিটি মহামারী রুপে আমাদের দেশে ছড়িয়ে না পরে। এজন্য দরকার বলৎকার বিরোধী একটি শক্তিশালী সামজিক আন্দোলন। যার পুরোভাগে থাকবে সমাজের বিভিন্ন পেশারজিবী সহ ছাত্র, ছাত্রী শিক্ষক, কৃষক, নারী পুরুষ, যুবক যুবতী, ইমা্ম, মুয়াজ্জিন পূরোহি্ত, পাদ্রী।