দেশের মিডিয়াতে হাওরের খবর পেয়ে থাকবেন অনেকেই। শেষ খবরটি হচ্ছে হাওরের পানিতে মাছ ভেসে উঠছে। এমনকি হাওরের পানিতে হাঁসও মারা যাচ্ছে। এর আগের খবর হচ্ছে পুরো হাওর এলাকার দুয়েকটি হাওর বাদে সমগ্র এলাকার। বোরো ধান সব তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো পত্রিকায় দুই হাজার কোটি টাকার শস্য বিনষ্ট হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। আবার কোনো কোনো পত্রিকায় ৪ হাজার কোটি টাকার ধান নষ্ট হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল ১৭ ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত হাওর এডভোকেসি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে যে তিনটি জেলায় বিপুল পরিমাণ শস্য নষ্ট হয়েছে। এরই মাঝে রাষ্ট্রপতি হাওর এলাকা সফর করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তার কথাও বলা হয়েছে। মিডিয়ার খবরগুলো পড়ে প্রধানত এমন ধারণা হতে পারে যে কেবল সুনামগঞ্জেই হাওর আছে। বাস্তবতা হচ্ছে সুনামগঞ্জ ছাড়াও নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হাওর আছে। কান্নার আওয়াজ তাই সাত জেলাতেই রয়েছে। হাওর এডভোকেসি প্লাটফরমের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ছিল এরকম :

‘এবারের বাঁধ বিপর্যয়ের কারণে (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে) গত ৫ এপ্রিল ২০১৭ বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার ২,২৩,০৮২ হেক্টর আবাদকৃত জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১,১৩,০০০ হেক্টর, এছাড়া নেত্রকোনার মাত্র একটি বাঁধ এখন পর্যন্ত টিকে আছে বাকি সব বাঁধ ভেসে গেছে। এতে নেত্রকোনার ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৩৮,১১৫ হেক্টর, কিশোরগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২০,০০০ হেক্টর। এই তিন জেলায় পানিতে ডুবে গেছে ১,৭১,১১৫ হেক্টর জমির ধান। এতে ২ কোটি ৫ লাখ মণ ধান কৃষকের ঘরে উঠছে না। প্রতি মণ ধানের দাম যদি ১,০০০ টাকা হয় তাহলে মোট ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।’

সংবাদ সম্মেলনে দেয়া খবরটি পূর্ণাঙ্গ নয়, এজন্য যে, এই হিসাবে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হিসাব নেই। যদিও প্রধান হাওরগুলো সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জেই রয়েছে তথাপি বাকি চারটি জেলার ক্ষতির পরিমাণটা একেবারেই কম নয়। বিভিন্ন জেলায় হাওর অঞ্চলে যে পরিমাণ জমি রয়েছে তা দেখে আন্দাজ করা যাবে যে অবস্থা কত ভয়াবহ।

হাওরের জমির হিসাবটা সরকারিভাবে এরকম : হাওর উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে ৭টি জেলার মোট ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ৯০৭ হেক্টর ভূমির মাঝে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬১ হেক্টর হাওর এলাকা। ৭টি জেলায় মোট ৭০টি উপজেলা থাকলেও এর অনেকগুলো হাওর এলাকা নয়। ৪৮টি উপজেলাকে হাওর বলে চিহ্নিত করা হয়। সাত জেলার জমির হিসাবটা এরকম : ‘সুনামগঞ্জের ৩ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর ভূমির মাঝে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩১ হেক্টর হাওর। হবিগঞ্জের ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমির মাঝে ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৪ হেক্টর হাওর। নেত্রকোনার ২ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমির মাঝে ৭৯ হাজার ৩৪৫ হেক্টর হাওর। কিশোরগঞ্জের ২ লাখ ৭৩ হাজার ১শ হেক্টর ভূমির মাঝে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৩ হেক্টর হাওর। মৌলভীবাজার জেলার ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯শ হেক্টর জমির মাঝে ৪৭ হাজার ৬০২ হেক্টর ভূমি হাওর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১ লাখ ৯২ হাজার ৭শ হেক্টর জমির মাঝে ২৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমি হাওর। হাওর বোর্ডের হিসাব মতে মোট হাওরের সংখ্যা ৩৭৩টি। সুনামগঞ্জে ৮৫, হবিগঞ্জে ১৪, নেত্রকোনায় ৫২, কিশোরগঞ্জে ৯৭, সিলেটে ১০৫, মৌলভীবাজারে ৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭টি হাওর রয়েছে। এই এলাকায় ৩৭৩টি হাওরের মাঝে ৪৭টি বড় হাওর রয়েছে। এই এলাকায় সর্বমোট ৬৩০০ বিলের মাঝে ৩৫০০ স্থায়ী, যাতে শুকনো মৌসুমেও পানি থাকে এবং ২৮০০ অস্থায়ী বিল রয়েছে যা শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায়। এলাকাটি যে কেবল নিচু তা নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি বছর ২০ মিলিমিটার হিসেবে এই এলাকাটি ডেবে যাচ্ছে। গত কয়েকশ বছরে এর কোনো কোনো অংশ ১০ মিটার পর্যন্ত ডেবে গেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাওর অঞ্চলের সাধারণ উচ্চতার তিনটি স্তর আছে। সবচেয়ে নিচু এলাকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ ফুট উঁচু, পরেরটি ১৫ ফুট এবং সবচেয়ে উঁচুটি ২০ ফুট উঁচু। তবে এর গভীর বিল অঞ্চলগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের ২০-৫০ ফুট নিচে অবস্থান করে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের এলাকা ভারতের চেরাপুঞ্জি হাওর এলাকার উত্তরপ্রান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে হাওর এলাকার সবচেয়ে সচল নদীর নাম ধনু। এটি ভৈরবের কাছে এসে মেঘনায় মিশেছে। ভারতের আহু বা বরাক নদী থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসহ শ’খানেক নদী হয়ে হাওরে বিপুল পরিমাণ জলরাশি প্রবেশ করে। এসব পানি ধনু-মেঘনা সাগরে বহন করে। হাওর এলাকায় দেশের শতকরা ১৮ ভাগ চাল উৎপাদিত হয়। দেশের শতকরা ২২ ভাগ গবাদিপশু এই এলাকায় পালিত হয়।


হাওরের জন্ম সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে এরকম –
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অশ্বখুরাকৃতি বা বাটির মতো একটি সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলকে ভাটি অঞ্চল বা হাওর অঞ্চল হিসেবে চেনা হয়। প্রকৌশলী এনামুল হকের মতে, ব্রহ্মপুত্র নদ তার প্রবাহপথ ১৭৮৭ সালের বন্যা ও ভূমিকম্পের পর মধুপুর গড়ের পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে পরিবর্তন করলে পলিমাটি ভরাট হওয়ার অভাবে এ অঞ্চল নিচু থেকে যায়। তাছাড়া মেঘালয় ও বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর সংঘটিত ডাউকি চ্যুতির কারণে অতি প্রাচীনকালে এলাকাটি ৩ থেকে ১০ মিটার বসে যায়।’  (হাওর পৃষ্ঠা ৪২)


১৭৬২ সালের ২ এপ্রিলের একটি ভূমিকম্পের বিবরণে বলা হয় যে, সেই ভূমিকম্পে ২০০ মানুষ মারা যায় এবং চট্টগ্রামের ১৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে যায়। ভূমিকম্পটি মিয়ানমারের ব্যাপক পরিবর্তন করে এবং তৎকালে বেঙ্গলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ৮.৮ মাত্রার সেই ভূমিকম্পটির পরে সুনামিও আঘাত হানে। সেই ভূমিকম্পেই মধুপুরের গড় এবং হাওর এলাকার জন্ম হয়। এর পরের ১৭৮৭ সালের ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা তার গতিপথ বদলায়। ১৮৯১ সালের ভূমিকম্পে হাওরের ওজানে খাসিয়া পাহাড়ের ৪০ হাজার বর্গমাইল এলাকা নষ্ট হয় বলেও জানা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই এলাকাটি ডেবে গিয়েই মধুপুরের গড় সৃষ্টি হয়। গারো ও খাসিয়া পাহাড়ের অববাহিকায় ছিল বলে সেই অঞ্চলটি অনাবাদি বনাঞ্চল ছিল। হাওরের অধিবাসীরা জানান যে, ১৯৩৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপরে রেল সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর হাওর এলাকায় বন্যায় বিপুল পরিমাণ পানি জমতে থাকে। এর আগে বর্ষাকালেও ওই অঞ্চলে তেমন প্লাবন হতো না। তারা মনে করেন ভৈরব সেতু নির্মাণের জন্য মেঘনার পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং সেতুটির জন্য উজানের পানি নামার পথে বাধাগ্রস্ত হয়।

যদি আমরা ১৭৬২ সালকে হাওর এলাকার জন্ম সময় হিসেবে গণ্য করি তবে এই এলাকাটির বর্তমান রূপের বয়স আড়াইশ বছর অতিক্রম করেছে মাত্র। খুব সঙ্গত কারণেই এই এলাকার আবাদি জনবসতিকে এর চাইতে প্রাচীন মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে হাওর হিসেবে জন্ম নেয়ার আগে সেখানে বসতি থেকে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।

পুরো দেশের আর কোনো অঞ্চলের সঙ্গে এর ভৌগোলিক সমতা নেই। তবে বাংলাদেশের এই অঞ্চলের সংলগ্ন এলাকার বাইরেও পুরো দেশজুড়েই নানা ধরনের বিল, হাওর বা জলাভূমি রয়েছে। তবে দেশের সংলগ্ন যে এলাকাটিকে হাওর বলে চেনা হয় সেটি সাতটি জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক উপজেলার পুরো বা আংশিক অঞ্চল নিয়েই গড়ে উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় এই ফসলহানির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে অবিলম্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘হাওরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সঠিক সময়ে এবং টেকসই কায়দায় ফসল রক্ষাবাঁধ তৈরি এবং মেরামত না করা। এ কাজটি না করায় ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আটবার হাওরের কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। অথচ এই একফসলি বোরো ধানের ওপরে হাওরবাসী নির্ভরশীল। অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বোরো ফসল বিরাট ভূমিকা পালন করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমাদের প্লাটফর্মের পক্ষ থেকে হাওরের বাঁধ নির্মাণকালীন পর্যবেক্ষণের জন্য গত ১১-১৩ মার্চ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করেছে। তাছাড়া কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজের বিষয়ে নানা মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাঁধ বিপর্যয়ের পর প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে, অনেক জেলায় দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ার ফলে অনেক বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমাদের পরিদর্শনকালীন বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর অর্ধেক কাজ অসম্পূর্ণ দেখতে পেয়েছে। বাঁধ নির্মাণের শেষ সময় ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি কিন্তু মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহেও অনেক বাঁধের নির্মাণ কাজই শুরু হয়নি। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে জেনেছিলাম ১৩ মার্চ সুনামগঞ্জে প্রায় ১২টি বাঁধের কোনো কাজ-ই শুরু হয়নি। পিআইসির তুলনায় ঠিকাদারের মাধ্যমে বাঁধের কাজ করাতে উৎসাহ বেশি এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পিআইসিকে নিয়োগ করা। নিম্নমানের কাজ, কিছু প্রয়োজনীয় জায়গায় বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারের উদ্যোগ নেই, আবার অপ্রয়োজনীয় জায়গায় বাঁধের নির্মাণ কাজ লক্ষ করা গেছে। পিআইসির মাধ্যমে যারা কাজ করছেন তারা প্রয়োজনীয় তহবিল পাননি। আবার অনেক পিআইসি আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় তারা অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেয়েছেন। পিআইসিরা কোথাও কোথাও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বাঁধের কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবারের বাঁধ বিপর্যয়ের কারণে (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে) গত ৫ এপ্রিল ২০১৭ বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার ২,২৩,০৮২ হেক্টর আবাদকৃত জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১,১৩,০০০ হেক্টর, এছাড়া নেত্রকোনার মাত্র একটি বাঁধ এখন পর্যন্ত টিকে আছে বাকি সব বাঁধ ভেসে গেছে। এতে নেত্রকোনার ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৩৮,১১৫ হেক্টর, কিশোরগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২০,০০০ হেক্টর। এই তিন জেলায় পানিতে ডুবে গেছে ১,৭১,১১৫ হেক্টর জমির ধান। এতে ২ কোটি ৫ লাখ মণ ধান কৃষকের ঘরে উঠছে না।

এমন একটি ভয়াবহ অবস্থার বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে তেমন কোনো ঢেউ তুলেনি। এমনকি হাওর এলাকা থেকে নির্বাচিত প্রায় ২৫ জন সাংসদকেও তাদের নিজেদের এলাকা সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে শোনা যায়নি। নিজেদের এলাকার মানুষ নিঃস্ব হলেও যদি সাংসদদের সরব বক্তব্য না পাওয়া যায় তবে হতাশা বেড়ে যায়। মিডিয়ায় কিছু কিছু খবর এলেও হাওরের দুই কোটি মানুষের কান্না আমরা রাজধানীতে শুনতে পাইনি। বস্তুত হাওর পাড়ের দুই কোটি মানুষ সামনের ধান কাটার আগে নিরন্নই থেকে যাবে। মহাজনের ঋণ, কামলার বেতন পরিশোধ তো দূরের কথা পরিবারের মানুষের খাবারও তারা জোগাড় করতে পারবে না। অন্যদিকে তাদের ঘরের গরু বাছুর লালন পালনও তারা করতে পারবে না। পশুখাদ্য বা খড় না থাকায় তারা এসব প্রাণীকে বাঁচাতে পারবে না। এখন তারা গরু বাছুর বা জমিও বেচতে পারবে না। কেনার মানুষ পাবে না আশপাশে। দূরে নিয়ে গবাদিপশু বেচা গেলেও জমি বেচা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

সংবাদ সম্মেলনেই এক কৃষক জানালেন যে একটি বাঁধ বাঁধার জন্য বরাদ্দকৃত ৩৫ লাখ টাকার মাঝে মাত্র ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে বাকিটা চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলেছে। আরেক কৃষক জানিয়েছেন ফাল্গুনেও বাঁধের কাজ শুরু হয়নি বলে মাটি ফেলার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ ভেঙে গেছে। হাওরের মানুষের জন্য এটি শত শত বছরের দুর্দশা। এক সময়ে বাঁধগুলো এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বেঁধে রাখতেন। এখন বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা বরাদ্দ হলেও অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো স্থায়ী ব্যবস্থার কথা স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও করতে পারেনি। অন্যদিকে ভারতের পাহাড়ি ঢল এসে বছরের পর বছর হাওরের ফসল নষ্ট করার বিষয়েও কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই। নদী খনন থেকে সুইস গেট তৈরি পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের দক্ষতার প্রমাণ জুটে না, বরং দুর্নীতির বা লুটপাটের কাহিনী হাওরের মানুষের মুখে মুখে রয়েছে।

হাওরের নগণ্য এক সন্তান হিসেবে আমি হাওর এলাকাকে কেবল দুর্গত এলাকা নয় আরেকটি ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত হাওরের মানুষের জন্য সব সহায়তার দাবি জানাই।

– মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট।