উনিশ শতক – এডিনবরা , স্কটল্যান্ড ।
এখানকার ছোট্ট এক শহরে রাত্রি কালীন পুলিস চৌকীদার হিসেবে নিয়োগ পেলেন জন গ্রে সাহেব , তার একমাত্র সঙ্গী বলতে আদরের দু বছরের একটা কুকুর নাম “ববী”। দিন ভালোই কাটছিল ববী আর জন গ্রে সাহেবের , ভদ্রলোক প্রতিদিনই ‘ ববী’ কে নিয়ে একটা পরিচিত রেস্টুরেণ্টে খেতে যান , অল্প কিছু দিনের মধ্যে ই রেস্টুরেণ্টের সবার কাছে ‘ ববী’ খুব প্রিয় হয়ে ঊঠলো । এতো প্রিয় যে ‘ ববী ‘ মালিক ছাড়া একা একা গেলেও রেস্টুরেণ্টের লোকজন তার খাবার তাকে দিয়ে দিত, সবাই তার সাথে খূব মজা করত, খেলতো , অবশ্য ববী’র মালিক পরে খাবারের বিল পরিশোধ করে দিত । এমনি করে খূব সুখেই কাটছিল দিনগুলো ববী’র আর জন গ্রে সাহেবের । কপালে সবার নাকি সুখ সয়না তেমনি ববী’র ও সইলোনা – এক দিন রেস্টুরেণ্টের কর্মচারীরা খেয়াল করলো আজ ববী কিংবা ববী’র মালিক কেউই খাবার খেতে আসেনি । দু এক দিন সবাই মনে করল হয়তোবা ওরা অন্য কোনও রেস্টুরেণ্টে গিয়েছে । একটা কুকুরের কথা কেইবা অত মনে রাখে? বেশ কিছুদিন গেল কিন্তু ববী’ আর জন গ্রে সাহেব এর কোন দেখা মিলল না ।
হটাৎ খূব ঠাণ্ডা পড়ল, সাথে স্নো, এই কনকণে ঠাণ্ডার মধ্যে হটাৎ একদিন ববী’র দেখা । একা, ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছে জীর্ণ ,শীর্ণ্ , রোগা , শুকীয়ে কাঠ , না খেতে পেয়ে পাঁজরের হাড্ডী বেরিয়ে গেছে, পিপাসায় জিহ্বাটা বেরিয়ে আছে, চোখ দুটো দিয়ে টপ টপ করে অবিরাম পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। সবাই তো খূব অবাক ববী’র এই অবস্থা কেন , জন গ্রে সাহেব ই বা কোথায় ? ববী কে খাবার দেয়া হল ববী শুধু পানি টাই চুক চুক করে চেটে শেষ করল, কিন্তু খাবার আর গলা দিয়ে নামে না , ববী কোন দিকে না তাকিয়ে পাঊরুটিটা দাঁতে চেপে আবার ফিরে চলল যে পথে দিয়ে এসেছিলো। কি যেন কি ভেবে দোকানী পিছু নিলো। যেতে যেতে দেখে “ববী একটা কবর স্থানে ঢূকে পড়ল দোকানীও পিছু নিল কয়টা কবর লাফ দিয়ে পার হয়ে “ববী একটা নতুন কবরের পাশে গিয়ে কবরটা জড়িয়ে ধরে পরে রইল। দোকানী আর একটু কাছে যেতেই এপিটাফে খোদাই করা নাম টা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো John Gray Died : 8February 1858 । কঠিন হৃদয়ের রেস্টুরেন্টের মালিক নিজের কান্না সামলাতে না পেরে নিজেই অবাক হল, কান্নার ঝাপটা সামলে চোখ মুছতে মুছতে কবরের পাড়ে গিয়ে “ববীকে” জড়িয়ে ধরে আবার কান্নায় ভেংগে পরল সে।
সুনশান কবরস্থানে ববী আর দোকানী কাঁদছে , দোকানী এই প্রথম দেখল একটা মরা মানুষের জন্য কুকুর মানুষের চাইতেও বেশি কাঁদে। দোকানী ‘ববী’কে নিয়ে ফিরতে চাইল, পারলনা, ববী কবর জড়িয়ে পড়ে আছে নিশ্চল, নিথর । নিরুপায় হয়ে দোকানী ফিরে গেল । এমনি করে দিন, মাস, বছর পেরিয়ে গেল খুব বেশি স্নো সহ ঠাণ্ডা পরলে আর খুব বেশি খিদেয় কাহিল হয়ে পড়লে ববী মাঝে মাঝে ঐ দোকানে চলে আসতো। এভাবে বেশ কয়েক বছর গড়িয়ে গেল, দুনিয়া শুদ্ধ জানা জানি হল ববী’র কাহিনী , ” মালিক বিহীন পাগলা কুকুর ” বলে অনেকে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ওকে মেরে ফেলতে চাইল । এক সময় , ববী’র পাশে এশে দাঁড়ালো স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা , তারা টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে চাঁদা তুলে সিটি কর্পোরেশন থেকে ববী’র জন্য বিশেষ পারমিট ইস্যু করিয়ে নিল , ” মালিক বিহীন নিরাপদ কুকুর” হিসেবে ।
১৮৭২ সনের জানুয়ারী’ র ১৪ তারিখ এডিনবরা সিটি ‘র নিরাপত্তা কর্মীরা জন গ্রে সাহেরের কবরের ওপর থেকে ববী’কে তুলে আনতে গিয়ে দেখলো – ববী’ আর নেই, তার নিরব, নিস্তব্ধ দেহটা ওখানে পড়ে আছে । ববী’কে জন গ্রে সাহেবের কবরের পাশেই সমাহিত করা হলো , ববী’র কবর আর সেই রেস্টুরেণ্টাই এখন একটা বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক। well known as ” Greyfriars Bobby “– পোষ্টটি সংগ্রহিত