গত শীতে ঊঠানে দঁড়িয়ে পেয়ারা গাছে বসে থাকা নাম না জানা একটি সুন্দর পাখির দেখছিলাম, এমনি দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে পিছু ছুটলাম। এগাছ – ওগাছ পেড়িয়ে শেষে বাঁশ ঝাড়ে গিয়ে বসলো আমি ও পিছু নিয়েছি হঠাৎ কোথায় জানি মিলিয়ে গেলো। বিষন্ন মন নিয়ে বাঁশ ঝাড় ছেড়ে ধান ক্ষেতের আইল ধরে হাটছিলাম । ঠিক এমন সময় সেই অতিপরিচিত রুপবতী উচ্ছল হয়ে কেবল তাকিয়ে রইলো। তখনো আমি তার নাম জানি না, গেলো বইমেলায় ভাইয়া আমাকে ( বাংলার বনফুল, নওয়াজেশ আহমদ) একটি বই উপহার দিলো আর বললো এটা তোর কাজে লাগবে। অনেক গুলো বনফুল নিয়ে বইটা, লিখার সাথে ছবিও আছে । হঠাৎ দেখলাম – এইতো সেই ফুল যার ভালো নামটা আমি খুঁজে ফিরছি বহুদিন ধরে। অবশেষে জানতে পারলাম ওর নাম রক্তদ্রোণ ।
এবার বাকীটা তার মুখ থেকেই শুনুনঃ-
তোমরা যে রকম যথেচ্ছ রাস্তাঘাট বানাচ্ছো, সেখানে সেখানে বাড়িঘর দোর তৈরী করছো, এতে আমাদের মতো গোবেচারিদের জীবণ-মরন সমস্যা – আমরা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমি জানি, তোমাদের নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগই আমাকে চিনতে পারবে না। পারবে কি করে? আমাকে তো আজকাল খুব একটা দেখা যায়না। আমার নাম রক্তদ্রোণ। আরও কয়েকটা আঞ্চলিক নাম আছে – গোমা, জুমা, জাজুরা । সমলঙ্কিত নামও আছে বেশ কয়েকটা। যেমন- দীর্ঘপত্রা, সুপুষ্পা, চিত্র পত্রিকা, কুরুম্বা, দেবপূর্বকা, দিব্যিপুষ্পী, দেবদ্রোণী। রাস্তার পাশে, বাড়ির ভিটের আশপাশেই বেশি জন্মে থাকি। আমি আবার বন্যার পানি বড় একটা সহ্য করতে পারি না। তাই একটু উঁচু জায়গা খুঁজে বেড়াই। ভেষজ পন্ডিতবর্গো আমার দিকে নজর দিয়েছেন।
রাজনিঘন্টুতে আছেঃ
দেবদ্রোণী কটুস্তিক্তা মেধ্যা বাতাত্তিভূতনুৎ
কফমান্দ্যপহা চৈব যুক্তা পারদশোধনে ।।
মানে দেবদ্রোনী, কটুস্তিক্তা স্মৃতিশক্তিবর্ধক, বায়ুরোগ ও ভূতদোষনাশক এবং কফ ও অগ্নিমান্দ্যনাশক। অন্য দ্রব্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পারদ শোধনে ব্যবহৃত হয়। নব্যের সমীক্ষায় আমার পাতার টাটকা রস জীবানুনাশক শক্তিসম্পন্ন। নানা ধরনের ঘা ও খোস-পাঁচড়ায় পাতার রস ব্যবহার করা হয়। ইদানিং স্ত্রীলোকের ঋতুজনিত জটিলতায় আমার পাতা ও শিকড় ব্যবহৃত হয়।
আমার পাতার রসে আছে এলকালয়েড, গ্লুকোসাইড, ফ্যাটি এলকোহল ও গন্ধযুক্ত তৈলাক্ত পদার্থ। আমার এক সহোদর আছে যাকে হয়তো তোমরা সবাই চিনতে পারবে, তার নাম শ্বেতদ্রোণ বা দন্ডকোলস। এর ফুলে মধু পাওয়া যায়। ছেলে মেয়েদের কাছে অনেক পরিচিত। আসলে দন্ডকলস আমার চেয়ে অনেক বেশী ডানপিটে। তাই এদের দেখা পাওয়া যায় এখনো অনেক জায়গায়। বিশেষ করে ধানি জমি চারপাশে। সেদিক থেকে আমি বেশি নমনীয়-গ্রীষ্মের প্রখরতা সহ্য করতে পারিনা – সে সময় আমাকে খুঁজে পাবে না। এক পশলা বৃষ্টির পর আবার গজিয়ে উঠে হেমন্ত ও শীতকালে আমার গোলাপী ও লাল ফুলের উচ্ছাসে উচ্চকিত হয়ে উঠি। তখন কিন্তু দূর থেকেও আমার লম্বা ডাঁটির ওপর থাকে পুষ্পস্তবক বেশ মনোহর দেখায়।
You must log in to post a comment.