বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় এই কুড়িয়ে পাওয়া শাকটি দন্ডকলস নামেই বেশী পরিচিত।দেশের বিভিন্ন জেলার গ্রামগুলোতে স্থানীয়বাঙালিরা এই শাকটিকে দন্ডকলস, দল কলস, ধুবরি, দোর কলস, কান শিশা, কাউন শিশা, ধুরপ শাক নামে ডাকেন। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ এলাকায় স্থানীয় মানুষেরা একে দুলফি শাক নামে ডাকেন। মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানের মুন্ডা আদিবাসীদের ভেতর এই শাক ডুরপি নামে পরিচিত।
নেত্রকোণার হাজং আদিবাসীরা শাকটিকে ডংক্লাই ও দমকলস নামে ডাকেন।
বৈজ্ঞানিক নাম : Leucas indica (L.) R. Br. Ex Vatke
উদ্ভিদ পরিবার: Lamiaceae
ঔষধী গুন সম্পন্ন, পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন সমতল এলাকার গ্রামে পাওয়া যায়। সাধারণত রবি শস্য (সরিষা) ক্ষেতে এই উদ্ভিদ বেশি জন্মে। এছাড়াও বাড়ির আশেপাশে, রাস্তার ধারেও এই উদ্ভিদ দেখা যায়। যেখানে জন্মে সেখানেই বিস্তৃতি দেখা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই শাকের বিভিন্ন নাম আছে।
বিভিন্ন নামে পরিচিত এই উদ্ভিদ মাটি থেকে সাধারণত একহাত পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। সাধারণত এই গাছের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের এবং কান্ড হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত পরিপক্ক গাছে ধবধবে সাদা রঙের ফুল হয়ে থাকে এবং ফুলের মধু মিষ্টি হয়ে থাকে। ফুল ছোট আকৃতির। তুলসী ফুল এর মত দেখতে এই ফুলের গন্ধ তেমন একটা পাওয়া যায় না। ফুল থেকে সবুজ রঙের ফল হয় এবং এই ফল পাকলে ফলের ভেতরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো রঙের বীজ হয়ে থাকে। এটি Lamiaceae পরিবারের একটি সপুষ্পক বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। বীজের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটে। প্রাকৃতিক পরিবেশে এমনিতেই জন্মানো এই শাক চাষ করার কোনো ঘটনা জানা যায় না।
এই উদ্ভিদ সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে বৃষ্টি মৌসুমের পরবর্তী সময়ে এই উদ্ভিদ বেশি দেখা যায়। সাধারণত বাংলা ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে কচি চারা গাছ পাওয়া যায় না। গাছের উপরের দিকের পাতা, আগার দিকের কচি কান্ড পাতাসহ তোলা হয়। শাক তোলার পর তাজা শাক ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই শাক অন্যান্য শাকের মত তেল, মরিচ, পেয়াজ, লবন দিয়ে ভেজে খাওয়া হয়। এলাকা ভেদে রান্নায় হলুদ-মরিচ বা অন্য মশলা স্বাদ মতো মেশানো যেতে পারে। গর্ভবতী মা ও শিশুদের খিচুরি ও জাও ভাতের সাথে সিদ্ধ দিয়েও এই শাক খাওয়ানো হয়।
উপকারিতা :
স্থানীয় মানুষের মতে ছোট শিশুদের সর্দি, কাশি, পেটে কৃমি হলে এই শাক ভেজে খাওয়ালে তার উপশম হয়।
• শরীরের বাত রোগ জনিত ব্যাথা অনুভব হলে এই শাক ভেজে খেলে সেই ব্যাথা অনেকাংশেই ভালো হয়।
• এই গাছ পাটায় বেটে রস বের করে হালকা গরম করে বাচ্চাদের বুকে মালিশ করে দিলে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যায়।
• গবাদিপশু বিশেষ করে ছাগলের পেটে পীড়া ও মুত্র রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে দলকলস শাকের পাতার রস পিষে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
অন্যান্য :
এই শাক বেশী পরিমানে একটি এলাকা থেকে আহরন করা যায় না বলে অন্য শাকের সাথে মিশিয়েও খাওয়া হয়। গ্রামীণ পর্যায়ে এই শাক মূলত নারী ও শিশুরাই সংগ্রহ করে থাকে। গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য এই শাক যেমন পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটায় একইভাবে তা পুষ্টি চাহিদাও দূর করে। স্থানীয় এলাকার সকল ধর্মের মানুষই এই শাক খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। সিলেট এলাকায় বাঙালি হিন্দুদের ভেতর শ্যামাপূজার সময়ে ‘আটতিতা’ নামের পরবে এই শাক অন্য শাকের সাথে মিলিয়ে খাওয়া হয়।
সতর্কতা :
গাছে ফুল আসলে তখন সেই গাছের শাক খাওয়া হয় না, কেননা ফুল আসলে সেই গাছের শাক খেতে তিতা স্বাদের হয়ে থাকে।
• শাক তোলার পর বেশী সময় রাখা যায় না, তাজা থাকতে থাকতে রান্না করে ফেলতে হয়।
• যেসব জমিতে রাসায়নিক সার এবং রাসায়নিক কীটনাশক দেয়া হয় সেসব জমির শাক এবং রাস্তার পাশে যেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করা হয় সেখানের শাক না খাওয়াই ভাল।
• রান্নার আগে শাক ভাল করে ধুয়ে নেয়া দরকার।
• শাক তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই এর বংশ যাতে একবারেই শেষ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• এই শাকের আরেকটি জাত আছে যাতে লাল রঙের ফুল হয়, রক্তদ্রোন নামে পরিচিত ঐ গাছের গন্ধ এবং আকার আকৃতিও আলাদা। কচি চারা অবস্থায় শাক সনাক্তকরণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।