গ্রামীণ বনের ভেতরে নিরিবিলি একটা বাড়ি। আঙিনার কোণের একটা ঘন ঝোপের ভেতরে যখন বাসা বাঁধতে শুরু করল এক জোড়া রাঙা হালতি, তখন তা নজরে পড়ল ওই বাড়ির মালিক তরুণ আজম ও তাঁর স্ত্রী শারমীন সুলতানার। এই পাখি প্রতিবছরই তাঁদের বাগানে বাসা করে।
নতুন এই পাখি দম্পতিকে মাটি থেকে তিন ফুট উঁচুতে বাসা বাঁধতে দেখে তাঁরা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, এবার বৃষ্টি বেশি হবে; বন-বাগানে হাঁটুপানি জমবে। কেননা, হালতি (হুডেড পিত্তা) ও রাঙা হালতিরা (শ্লেটি-লেগেড ক্রেক) বৃষ্টি সম্পর্কে আগাম ধারণা পায় এবং তা ফলেও যায়। বৃষ্টির পানি জমবে কতটুকু, তা বুঝেই ওরা বাসার উচ্চতা নির্ধারণ করে—এটা গ্রামবাসী জেনে আসছে এবং বাস্তবে দেখে আসছে যুগ যুগ ধরে।
ফকিরহাট ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাবের কর্মকর্তা শিপলু খানকেও নির্দেশনা দিই। ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাবের সদস্যরা প্রতি মৌসুমেই হালতি, রাঙা হালতিসহ নাগরবাটোই পাখির বাসা-ডিম-ছানার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন এবং প্রয়োজনীয় ছবি তুলে রাখেন। পাখিটি সাতটি ডিম দেয়।
রাঙা হালতি। এক অতি সুন্দর পাখি। এদের ছানারা হয় কুচকুচে কালো। ঠোঁটের ডগা হাতির দাঁতের মতো সাদা এবং বেলের কাঁটার মতো ধারালো। মাপ ২৫ সেমি। বুক-পেটে চমৎকার আড়াআড়ি সাদা রেখা টানা। এক নজরে পিঠ-ডানার রঙ লালচে-জলপাই। তার ওপরে যেন পোড়া ইটের লাল গুঁড়ো ছড়ানো।
এদের ইংরেজি নাম Slaty-legged crake. ছানারা বাসা ছাড়ার পর এদের ধাওয়া করে ধরা বা ছবি তোলা অতীব দুরূহ কাজ। ডিম পাড়ার আগে এরা পাড়া কাঁপিয়ে ডেকে ডেকে যেন সবাইকে জানিয়ে দেয় সেই খবর।
যে পাখিটিকে বাসায় বসে থাকা অবস্থায় হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলা যায়, সেই পাখিটিকেই বন-বাগানে ধাওয়া করে ধরা তো দূরের কথা, দেখতে পাওয়াই কষ্টকর। আমার গ্রাম ফকিরহাটের সাতশৈয়ায় (বাগেরহাট) এ বছর ২০ জোড়া রাঙা হালতির (Rallina eurizonoides) বাসা পাওয়া যায়। আমার গ্রাম ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোথাও আজতক এদের বাসা-ডিম-ছানার সন্ধান মেলেনি। আর হ্যাঁ, পুরো বাগেরহাটে এবার প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন-বাগানে এই সেপ্টেম্বরেও জমে আছে পানি। গত বছর হয়েছিল অনাবৃষ্টি। দুই রকম হালতিই সেবার বাসা করেছিল মাটির ওপরে বা মাটির সমান্তরালে।
-Prothom Alo