সুভাষ চন্দ্র বোসের জন্ম ১৮৯৩ সালে। জন্ম কলকাতায় হলেও তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল চবি্বশ পরগনার এক গ্রামে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সুভাষ চন্দ্র গান্ধীজীর অহিংস নীতির বিরোধিতা করে ইংরেজ সরকারকে ৬ মাসের মধ্যে স্বাধীনতা প্রদানের জন্য এক চরমপত্র পাঠানোর প্রস্তাব করেন। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেস সহিংস সংগ্রাম শুরু করার পক্ষে ছিলেন না। গান্ধীজী ওই বিপদের সময় ইংরেজ সরকারকে বিব্রত করতে চাননি। এ প্রশ্নে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিলে সুভাষ বোস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামে আরেকটি দল গঠন করে কলকাতায় প্রবল জনমত সৃষ্টি করলে ইংরেজ সরকার ভীত হয়ে তাকে গ্রেফতার করে ১৯৪২ সালের ৪ জুলাই গৃহবন্দী করে। সুভাষ বোস সরকারি গোয়েন্দা নজরদারি এড়ানোর জন্য মৌনব্রত ও নির্জনবাসের ঘোষণা দেন ও তার ভাতিজা অমিয় বোসের অনুমোদন ছাড়া কারো সঙ্গে দেখা করতেন না।
ওই সুযোগে তিনি মৌলভী জিয়াউদ্দীনের মতো দাড়ি রাখেন ও তার মতোই পোশাক পরে গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ পালিয়ে আফগানিস্তান ও মস্কো হয়ে জার্মানির বার্লিন পৌঁছেন। তিনি জার্মান থেকে সাবমেরিনযোগে জাপান পেঁৗছেন। সেখানে বার্মা ফ্রন্টের ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে এর সর্বাধিনায়ক হন ও পরে জেনারেল শাহনেওয়াজকে ফিল্ড কমান্ডার নিযুক্ত করে বার্মা ফ্রন্টে মণিপুরের কোহিমা আক্রমণ করেন। কিন্তু বনজঙ্গল ও বার্মার অস্ত্রশস্ত্র এবং রসদ জোগানোর স্বল্পতার জন্য ওই সেনাদল ব্রিটিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। সিঙ্গাপুর থেকে জাপানি যুদ্ধ বিমানে জাপান ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। ওই বিমানে কর্নেল হাবিবুরও ছিলেন।
তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে আরোগ্য লাভ করেন। পরে জানা যায়, নেতাজীর মৃত্যু সংবাদটি ছিল একটি সাজানো ঘটনা। জাপানিরা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে নেতাজীকে কৌশলে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে। সাইবেরিয়ার এক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের রেকর্ড থেকে জানা যায়, যেখানে তিনি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও অনেক দিন ছিলেন। এদিকে কলকাতায় তার দলের লোকদের সন্দেহ হওয়ায় তারা মস্কোর আর্কাইভের নথি থেকে জানতে পারেন, রাশিয়ানরা তাকে মুক্তি দিয়ে তিব্বতে নির্বাসন দেন। সেখানে তিনি এক মঠে অনেক দিন ছিলেন ও পরে এক লামার ছদ্মবেশে দার্জিলিং হয়ে ভারতে প্রবেশ করে মধ্য প্রদেশের অশোকনগরে সাঁইজি গ্রামের এক আশ্রমে বাস করতে থাকেন। আজাদ হিন্দু ফৌজের এক সেনা ৮২ বছর বয়স্ক অযোধ্যা প্রসাদ গুপ্তা তার বইতে লিখেছেন, ১৯৮৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টায় ৯২ বছর বয়সে নেতাজীর মৃত্যু হয়। তাকে সরযু নদীর তীরে দাহ করে এক সমাধি তৈরি করা হয়। যা এখনো আছে। গুপ্তাসহ মাত্র ৫ জন সেই সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সাঁইজি গ্রামের প্রধান বলেছেন, তার মৃত্যুর আগে তিনি নিজ পরিচয় দিয়ে তাকে কবর দিতে বলেছিলেন। গুপ্ত লিখেছেন, নেহরুর শেষকৃত্যের সময় নেতাজী উপস্থিত ছিলেন। ওই খবর প্রকাশের পর ভারত সরকার নেতাজীর রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়ে আগের দুই কমিটির রিপোর্টসহ আবারও এক তদন্ত কমিটি করে আগের রিপোর্টে উল্লেখিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যুর পর তার চিতাভস্মের পাত্র জাপানের এক মঠে রক্ষিত আছে বলে যে দাবি করা হয় তা সঠিক বলে প্রমাণ করেন।