‘ছাত্রীনিবাসের সামনে কলেজের বিশাল মাঠ। মাঠের পাশে শহীদ মিনার, গাছগাছালি সব মিলিয়ে চমৎকার পরিবেশ। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বখাটে ও মাদকাসক্তদের আনাগোনার কারণে ছাত্রীনিবাস থেকে বের হয়ে সেখানে যেতে পারি না।’ কথাগুলো কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তাসলিমা আক্তারের।
শুধু তাসলিমা নন, ছাত্রীনিবাসের অনেক ছাত্রীর একই অভিযোগ। মাত্র ২৪-২৫ জন বখাটে-মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে কলেজের তিনটি আবাসিক হলের দুই হাজার শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কলেজসংলগ্ন হারুয়া, কুর্টিগীদি এলাকার মাত্র ২৪-২৫ জন বখাটে-সন্ত্রাসী কলেজের শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছে। গত ছয় মাসে বখাটেদের হাতে দুই ছাত্র খুন হয়েছে। খুনের ঘটনায় মামলার পর আসামিরা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি ২৪-২৫ জন নতুন করে সংগঠিত হয়ে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছে।
১০-১৫ জন বখাটে কলেজের দুটি ছাত্রাবাসে অবাধে যাতায়াত করে। কোনো ছাত্র প্রতিবাদ করলে তাকে বখাটেদের হামলার শিকার হতে হয়। ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ থেকে মুঠোফোন, টাকা ও ঘড়িসহ প্রায়ই কাপড়-চোপড় চুরি হয়। এসব চুরির সঙ্গে বখাটে-মাদকাসক্তরা জড়িত বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ওয়াসিমুদ্দিন মুসলিম ছাত্রাবাসের সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাজীবুল আলম জানান, মাদকাসক্ত ও বখাটেরা যেকোনো সময় ছাত্রাবাসে ঢুকে যা ইচ্ছা তাই করে। এসব বিষয়ে হোস্টেল সুপারকে বলেও কোনো কাজ হয় না। একই বর্ষের ছাত্র মাহবুবুল হক জানান, গত এক বছরে হোস্টেল থেকে শতাধিক মোবাইল চুরি হয়েছে। ড. এম ওসমান গণি ছাত্রাবাসের চতুর্ষ বর্ষ সম্মানের ছাত্র মাজহারুল ইসলাম ও সারোয়ার হোসেন বলেন, এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বখাটেদের পেছনে রয়েছেন। বখাটেদের গ্রেপ্তার করলে কলেজে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে।
বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রী নিবাসের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বখাটেদের উৎপাতে বিকেলে তাঁরা হোস্টেল থেকে বের হতে পারেন না। এ জন্য ছাত্রীনিবাসকে এক ধরনের জেলখানা মনে হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হারুয়া ও কুর্টিগীদি এলাকার কয়েকটি পরিবারের যুবকেরা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তারা সেই দলের নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নির্বিঘ্নে অপকর্ম করে বেড়ায়।
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মো. সাইদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ওয়াসিমুদ্দিন ছাত্রাবাসের মূল ফটকটি বখাটে- মাদকাসক্তদের কারণে তিন বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ ও পৌরসভাসংলগ্ন রাস্তা দিয়ে ছাত্রাবাসে যেতে হয়। রাতে খেলার মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, যেসব বখাটে-মাদকাসক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করছে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক উল্লাহ বলেন, যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ক্যাম্পাস অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় ধরনের অভিযান ছাড়া বখাটে-সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করা যাবে না।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. আরজ আলী জানান, লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বখাটে-মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকাবাসীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
-সাইফুল হক মোল্লা, কিশোরগঞ্জ