জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে কিশোরগঞ্জ এসেছিলেন তখন আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, বাবা, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কর, দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে তোল।
তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. নিবু মিয়া। তাঁর বয়স এখন ৭৩। বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার কথায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি, মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা করে সাফল্য অর্জন করেছি, এটাই আমার তৃপ্তি। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে প্রতি বছর আমি বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সাফল্য কামনা করে কোরবানি দিয়ে আসছি। আমার কাছে বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর সেরা মানুষ।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. নিবু মিয়া ৪২ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতি বছর কোরবানির ঈদে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। কোরবানি দিতে গিয়ে তিনি নিজের ৮ শতাংশ জমিও বিক্রি করেছেন।
নিবু মিয়ার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ঘরে রুমু মিয়া, ঝিনু মিয়া নামে দুই ছেলে ও বেগম এবং রিনা নামে দুই মেয়ে রয়েছে। দুই ছেলে তাদের মাকে নিয়ে অন্য গ্রামে বসবাস করেন। আর মেয়ে দু’জনকে বিয়ে দিয়েছেন অনেকদিন আগেই। অন্যদিকে নিবু মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে কোনো সন্তান নেই। তারা চান্দপুর ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন।
নিবু মিয়ার নিজের ভিটেবাড়ি নেই। বর্তমানে তিনি উপজেলার চান্দপুর কোনাপাড়া গ্রামের সুরুজ আলী ভূঁইয়ার ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। অন্যের বাড়িতে থেকে সম্মানি ভাতা বাঁচিয়ে প্রতিবছর কোরবানির ব্যবস্থা করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এমনই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন তিনি।
যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা ভাতা পান তিনি, তা থেকে সঞ্চয় করে তিনি কোরবানি দেন। সরকারি ভাতা পাওয়ার আগে তিনি কাঠুরিয়ার কাজ করতেন। তখন এক বেলা খাবার কম খেয়ে কোরবানির টাকার যোগাড় করতেন বলে জানালেন নিবু মিয়া।
নিবু মিয়া আরো জানান, কোনো স্বীকৃতির আশায় নয়, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থেকেই তিনি কোরবানি দেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার জেনারেল শফিউল্লার অধীনে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধকালীন সময়ে শক্রপক্ষের গুলিতে আহত হয়েছিলেন। এখনও তার ডান পায়ের হাঁটুতে পাক বাহিনীর গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে চান্দপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. গাজী উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, নিবু আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী না, তারপরেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবু মিয়ার অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা থেকেই তিনি প্রতি বছর তার নামে কোরবানি দিয়ে আসছেন।