রাত তখন ৯টা। রাজধানীর নিমতলী এলাকার নবাব কাটরায় ৪৩/৩ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় চলছে বিয়ের পান-চিনি অনুষ্ঠান। নিচতলা থেকে পাঁচতলার ছাদ পর্যন্ত ভবনজুড়ে বিয়ের আনন্দ-হুল্লোড়। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন প্রতিবেশীরা। নারী, পুরুষ ও শিশুদের কলগুঞ্জনে মুখর বাড়ির সামনে হঠাৎ বিকট শব্দ। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। এরপরই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করতে থাকে ভবনটিকে। আনন্দঘন পরিবেশ বদলে হয় বিষাদময়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আনন্দের হট্ট যেন রূপ নিল লাশের মিছিলে। একে একে এ বাড়ি থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা বের করে আনে ৩৯টি লাশ। মধ্যরাতে অন্ধকার ঘরে উদ্ধারকর্মীরা খুঁজে ফিরছিলেন আরও লাশ। পার্লারে থাকায় কনে রুনা বেঁচে গেছেন। মারা গেছেন মা, দুই খালা, খালাতো ভাই ও বোন। ভবনটির পাঁচতলায় বসবাস করেন বাড়ির মালিক ফারুক গুলজার। সদ্য এএসসি পাস ছেলের কাগজপত্র নিয়ে তিনি বাসার বাইরে ছিলেন। দুই ছেলে, স্ত্রীসহ পরিবারের ১১ সদস্য বাসায়। সবাই দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি জানান, বাইরে থাকা অবস্থায়ই তিনি আগুনের খবর পান। এলাকায় ফিরে দেখতে পান তার বাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলছে। পরিবারের কাউকেই তিনি জীবিত পাননি। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা জানান, ফারুক গুলজারের বাড়ির ছাদ থেকে মোট ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভবনে আগুন লাগার পর তারা ছাদে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফারুক গুলজারের প্রতিবেশীরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকেই দলবেঁধে অতিথিরা আসতে থাকেন। সন্ধ্যা থেকেই ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে গান-বাজনার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। পাশাপাশি ছিল নারী, পুরুষ ও শিশুদের কোলাহল। রাত ৯টার দিকে বিকট শব্দে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হওয়ার পর ওই বাড়ির নিচতলায় প্রথম আগুন দেখা যায়। ভবনের নিচতলা থেকে দ্রুত উপরের ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওই ভবন থেকে বুকফাটা চিৎকার ভেসে আসে। সাহায্যের আশায় চিৎকার করতে করতেই অনেকের কণ্ঠ থেমে যায়। বাঁচার আশায় অনেকেই সিঁড়ির দিকে দৌড়ালেও তারা ভবন থেকে বের হতে পারেননি। ভবনে বসবাসকারী ১০টি পরিবারের অধিকাংশই ভেতরে অগি্নদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে প্রতিবেশীরা জানান। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, ৪৩/৩ নম্বর ভবনের সিঁড়ি সরু হওয়ার কারণে ভবনের বাসিন্দারা বের হতে পারেননি। অধিকাংশ লোক শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অধিকাংশ লাশ পাওয়া গেছে ভবনের সিঁড়ি এবং ছাদে।