চীনের অর্থায়নে পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে মুলিবাঁশ। ফরেস্ট ইনস্টিটিউটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চায়না ব্যাম্বো সোসাইটি পরীক্ষামূলকভাবে মুলিবাঁশ চাষের এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বন বিভাগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেউচিয়া বন গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাইতুল ইজ্জতে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের পাশে প্রায় দুই হেক্টর সমতল ভূমিতে এই মুলিবাঁশের প্রদর্শনী খামার গড়ে তুলেছে। ইতিমধ্যে চায়না ব্যাম্বো সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি জিং জংয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মুলিবাঁশ চাষ প্রকল্প এলাকা ঘুরে গেছে।
কেউচিয়া বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টেশন কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার প্রদীপ কান্তি দাশ জিং জং প্রকল্প এলাকা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং মুলিবাঁশের চাষ আরও বিস্তৃত করার ব্যাপারে চায়না ব্যাম্বো সোসাইটির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রদীপ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, চীনে মুলিবাঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চীনারা মুলিবাঁশ দিয়ে আসবাবপত্র ও টাইলস উৎপাদন করে থাকে। তাছাড়া মুলিবাঁশের কচি ডগা (বাংলাদেশে যা কোরল হিসেবে পরিচিত) দিয়ে তৈরি সুপ চীনাদের উপাদেয় খাদ্য। এই ডগা তারা সবজি হিসেবেও রান্না করে খায়। স্টেশন কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করে বলেন, মুলিবাঁশের এ প্রকল্পে সফলতা পাওয়া গেলে তা বিদেশে রফতানি করে আয় করা যাবে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। এই মুলিবাঁশ রফতানি করার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা সফল করতে আরও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে জানালেন প্রদীপ কান্তি দাশ। অবশ্য আরও কয়েক বছর আগে মুলিবাঁশের বেড়া মালয়েশিয়ায় রফতানি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
চট্টগ্রামের ষোলশহরের বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন কেউচিয়া বন গবেষণা কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, দুই হেক্টরের বিশাল পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে সারি সারি রোপণ করা হয়েছে মুলিবাঁশ। ২০০৮ অর্থবছরে রোপণ করা এ বাঁশবাগান এখন প্রায় পরিপূর্ণতার কাছাকাছি। মুলিবাঁশ বাণিজ্যিকভিত্তিতে উৎপাদনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বপ্নে বিভোর গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের মধ্যে উৎসাহের কোনো কমতিও নেই।
কেউচিয়া বন গবেষণা কেন্দ্রের স্টেশন কর্মকর্তা প্রদীপ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, শুধু চীন নয়_ পৃথিবীর আরও অনেক দেশে বাঁশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বিদেশে রফতানি করা গেলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বন বিভাগ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাঁশের চাষ করতে তেমন পুঁজিরও প্রয়োজন হয় না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। কোনো ধরনের যত্ন-আত্তি ছাড়াই বাঁশগাছ বেড়ে ওঠে। আগামী বছর বাঁশ ও স্যুট (কোরল) চীনে রফতানি করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন স্টেশন কর্মকর্তা।