জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তার সরকারের যেসব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে তা বাস্তবায়ন কঠিন নয় বলে আমরা মনে করি। বস্তুত শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি কেবল যথাযথ উদ্যোগের অভাবে। যেমন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের হিসাবে যদিও বলা হয়ে থাকে যে, দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, এর সমর্থনে কোনো বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা পাওয়া কঠিন। সুতরাং সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা খুবই সময়োপযোগী যে সারাদেশে জরিপের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সঠিক সংখ্যা ও প্রতিবন্ধিতার ধরন সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার সৃষ্টি করা হবে। এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা গেলেই কিন্তু প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়ে যাবে। সরকারি সব চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা চালুর যে আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী ব্যক্ত করেছেন, তা বাস্তবায়নেও এমন তথ্যভাণ্ডারের বিকল্প থাকতে পারে না। আমাদের মনে আছে, এপ্রিলের গোড়ায় জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এ সংক্রান্ত কোটা যথাযথভাবে পূরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব জরিপের কাজ শুরু হবে বলে প্রত্যাশা। আমরা আশা করি, জটিল ও কঠিন এ কাজে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠনগুলোও এগিয়ে আসবে। কারণ, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তারা দীর্ঘদিন ধরে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা তাতে গতি সঞ্চার করতে পারে। তবে জরিপ সম্পন্ন হওয়ার জন্য সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণের কাজটি থেমে থাকতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ পাওয়া যায় যে, কোটা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পায় না। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির নির্দেশের পর এ ব্যাপারে আর গড়িমসি হবে না বলেই প্রত্যাশা। একই সঙ্গে জনসাধারণের মানসিকতাতেও পরিবর্তন জরুরি। ঘরে-বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা যদি প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্বশীল হই, তাহলেই তাদের প্রকৃত কল্যাণ সম্ভব।