নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের (৩২) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ইউনিয়নের চরকাসিমপুর বোর্ডবাজার এলাকার পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পুলিশ নাজিমের লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গতকাল বিকেলে ইউনিয়নের জালকান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেনের ছেলে আ. মান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আ. করিমকে (৪৫) গত বুধবার রাতে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে।
বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার: পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বছর আগে একটি চুরির ঘটনায় এলাকায় সালিস বৈঠক বসে। ওই সালিসিতে নাজিম চুরির জন্য জালকান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেনের ছেলে আ. মান্নানকে দায়ী করেন এবং প্রকাশ্যে তাঁকে মারধর করেন। এতে মোক্তার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এর পর থেকে ওই পরিবারের সঙ্গে নাজিমের বিরোধ বাড়তে থাকে। জালকান্দা গ্রামের রুস্তম মিয়া গত শুক্রবার তাঁর বাড়িতে নাজিমকে দাওয়াত দেন। নাজিম সপরিবারে রুস্তমের বাড়িতে দাওয়াতে যান। পরদিন একই গ্রামের কাঞ্চন মিয়া নতুন ধান ওঠার খবর জানিয়ে নাজিমকে দাওয়াত দেন। কাঞ্চনের বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে নাজিমসহ কয়েকজন কাঞ্চনের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে টিভি দেখতে যান। এ সময় একই গ্রামের সমাজ মিয়া ও জালাল মিয়া নাজিমের সঙ্গে আলাপ করেন এবং তিনি কখন বাড়ি ফিরবেন, তা জানতে চান। কিছুক্ষণ পর নাজিম ওই বাড়ি থেকে চলে গেলেও নিজ বাড়িতে ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও নাজিমকে না পেয়ে তাঁর বড় ভাই জিল্লুর রহমান বেলাব থানায় অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় জালকান্দা গ্রামের সমাজ মিয়া, মুক্তার মিয়া, মুক্তারের দুই ছেলে আ. হান্নান ও আ. মান্নান, জালাল হোসেন, আ. আওয়াল, রুস্তম আলী ও একই উপজেলার পাহাড় উজিলাব গ্রামের তাহের মিয়াকে আসামি করা হয়।
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয়রা পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদে নাজিমের মৃতদেহ ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে বেলাব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকেলে নাজিমের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে।
গতকাল বিকেলে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের গুশালাকান্দা গ্রামে নাজিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী হাসনা বেগম দুই মেয়ে তমা (৮) ও ঈশিতাকে (৪) জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছেন। জিল্লুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘চুরির ঘটনায় ন্যায়বিচার করায় মুক্তার হোসেন ও তাঁর ছেলেরা আমার ভাই নাজিম উদ্দিনকে হত্যা করেছে।’
বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অসিম উদ্দিন জানান, নাজিম হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে আজ শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে সভা করা হবে।
বেলাব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুরাদুজ্জামান বলেন, নিহত নাজিমের পেটে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ হওয়ার দিনই নাজিমকে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রেপ্তার হওয়া আ. মান্নান বলেন, ‘আমি শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। গতকাল বাড়ি ফেরার পর নাজিমের লোকজন আমাকে ধরে পুলিশে দেয়।’
যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা: পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে যুবলীগের নেতা উপজেলার চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আ. করিম তাঁর বড় ভাই জালালকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় দেওটুকোন বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা করিমকে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হোসেন বলেন, এলাকায় করিমের সঙ্গে অপর একটি পক্ষের দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতা চলছিল। এর জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। করিমের প্রতিবেশী শহীদ মিয়া, জহেদ আলী, আবু চাঁনসহ ৩৪ জনকে আসামি করে দুর্গাপুর থানায় মামলা করা হয়েছে।