বিমানের দরজা ফুঁড়ে সবার আগে বেরোলেন দলের সবচেয়ে ঢ্যাঙ্গা লোকটাই। পিটার ক্রাউচ। সাড়ে ছয় ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই স্ট্রাইকারকে অনুসরণ করে একে একে নেমে এলেন ওয়েইন রুনি, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, জন টেরিরাও। কোচিং স্টাফদের সঙ্গে নিয়ে নামলেন ফ্যাবিও ক্যাপেলো। ডেভিড বেকহামও!
পরনে আকাশি শার্ট, কালো টাই। এর ওপর চাপানো ধূসর রঙা স্যুট। কাল ইংল্যান্ড দল কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছে ৪৪ বছরের শিরোপা-খরা ঘোচানোর স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন বয়ে নিয়ে যাওয়া বিশেষ বিমানটি কাল সকালে ছুঁয়েছে জোহানেসবার্গের পাশে ওআর টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে।
‘আমার বিশ্বাস, এই বিশ্বকাপ বিরাট সাফল্য এনে দেবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এবং আমার দলের জন্যও। ধন্যবাদ। এখানে এসে ভালো লাগছে’—বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেছেন ইংল্যান্ডের ইতালিয়ান কোচ। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কড়া নিরাপত্তায় বিলাসবহুল বাসে করে ইংল্যান্ড দলকে নিয়ে যাওয়া হয় রাস্টেনবার্গে। প্লাটিনাম-সমৃদ্ধ এই শহরই ১৯৬৬-এর চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপ-ঠিকানা।
বরাবরের মতো এবারও বিশালসংখ্যক ইংলিশ সমর্থক দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবে দলকে সমর্থন দিতে। পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যেও ভালো সমর্থন পাবে ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খুবই জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, বিদেশি দলগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকানদের পছন্দের তালিকায় ব্রাজিলের পরই অবস্থান ইংল্যান্ডের।
এবার অন্যতম ফেবারিটও ধরা হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে ক্যাপেলোর হাত ধরে ইংলিশ দলটার খোলনলচেই যেন পাল্টে গেছে। বাছাইপর্বে দুর্দান্ত দাপটের পর ইংলিশ সমর্থকদের আশা, গত দশ আসরের ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা নাকি এবারই পুড়িয়ে ফেলবে ‘থ্রি লায়ন্স’।
সেই আশাবাদীদের তালিকায় আছেন ’৬৬-এর বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য স্যার ববি চার্লটনও। প্রতিভার দিক দিয়ে ইংল্যান্ডের এই দলটা সর্বকালের সেরা না হলেও ক্যাপেলোর প্রজ্ঞা সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেবে বলে মনে করছেন এই সাবেক তারকা। ৭২ বছর বয়সী চার্লটন ক্যাপেলোর মধ্যে ছায়া খুঁজে পান ইংল্যান্ডের একমাত্র শিরোপাজয়ী কোচ আলফ র‌্যামসেরও, ‘ইংল্যান্ডের কোচ কেমন হওয়া উচিত—এ নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল, তখন আমার ভাবনায় ছিল, এমন একজনকে দরকার যিনি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবে, ভিন্ন পদ্ধতিতে খেলা ফুটবলারদের একই ছাতার নিচে নিয়ে আসতে পারবেন। আলফ ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন। এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে, ইংল্যান্ড সঠিক লোকটাকেই কোচ হিসেবে পেয়েছে।’
ইংল্যান্ডের শিরোপার পথে বাধা হিসেবে তিনটি দলকে দেখছেন চার্লটন—আর্জেন্টিনা, স্পেন আর জার্মানি। ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনার ফুটবলীয় বৈরিতার শুরু ১৯৬৬ বিশ্বকাপ থেকেই। চার্লটন জানালেন, তার পরও তিনি আর্জেন্টাইন ফুটবলের ভক্ত। ‘আর্জেন্টিনা এবার বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। আমি অবশ্য এটা প্রতি চার বছর পরপরই বলি। কারণ সব সময়ই ওদের দলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকে’—বলেছেন চার্লটন।
মাঝখানে ক্যাপেলোর ইন্টার মিলানের কোচ হওয়া না-হওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা দলের মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে বিশ্বকাপে যেন সেটির প্রভাব না পড়ে, সেই বন্দোবস্তও করে ফেলেছেন এই ইতালিয়ান। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ২০১২ পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন তাঁর চুক্তি।