ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। টিকিটের জন্য প্রথম দিনেই ভোর থেকে ছিল যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। রাজশাহী, খুলনা, লালমনিরহাট প্রভৃতি জেলার যাত্রীদের ভিড় ছিল বেশি। সে তুলনায় চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুরের ট্রেনগুলোর টিকিটের জন্য লাইন ছিল ছোট।

প্রথম দিনে দেওয়া হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ১৬টি ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম চলবে আরও চার দিন। আজ বুধবার দেওয়া হবে ৬ সেপ্টেম্বরের টিকিট, কাল বৃহস্পতিবার ৭ সেপ্টেম্বরের, শুক্রবার দেওয়া হবে ৮ সেপ্টেম্বরের এবং শনিবার দেওয়া হবে ৯ সেপ্টেম্বরের টিকিট।

গতকাল টিকিট দিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ ছিল কম। টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য নিয়েও শোনা যায়নি অভিযোগ। টিকিট বিক্রির শৃঙ্খলা রক্ষার্থে র‌্যাবের একটি দল গত সোমবার রাত থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ছিল। যাত্রীদের নাম, মোবাইল ফোন নম্বর ও কয়টি টিকিট প্রয়োজন—তা লিখে দেওয়ার জন্য টিকিট কিনতে আসা ব্যক্তিদের একটি করে টোকেন দেওয়া হয়।

কমলাপুরে উপস্থিত র‌্যাবের দলটির প্রধান মেজর এম এম শফিকুর রহমান বলেন, ‘ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে এখানে ভিড় ছিল। যাত্রীরা ছোটখাটো দু-একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগগুলো নিয়ে সন্ধ্যায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করব।’ অভিযোগের ধরন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক যাত্রী অভিযোগ করেছেন যে তিনি ৫০০ টাকার নোট মনে করে এক হাজার টাকার নোট দিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি আবার গেলেও টিকিট মাস্টার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। আরেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, লাইনে দাঁড়িয়েও তিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট পাননি।

ভোর থেকে লাইন: মাহমুদুল হাসান ও আরও চার বন্ধু যাবেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে। থাকেন তাঁরা খিলগাঁওয়ে। টিকিটের জন্য ভোর সাড়ে চারটায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ছয় ঘণ্টার বেশি লাইনে দাঁড়ানোর পর হাতে পেলেন কাঙ্ক্ষিত টিকিট। টিকিট পেয়ে খুব খুশি মাহমুদুল। মুগদাপাড়া দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র আবুল হাসান ময়মনসিংহের টিকিট পেলেন বেলা পৌনে ১১টার দিকে। তিনি বললেন, ‘সেহরি খায়া লাইনে আইছি। বইস্যা বইস্যাই ঘুমাইছি।’

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রানা ইসলাম ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু। বাসে তো এর চেয়ে কম সময়ে উল্লাপাড়া যাওয়া যায়—এ মন্তব্যের জবাবে রানা বলেন, ‘আমি থাকি খিলগাঁওয়ে। ঈদের আগে এখান থেকে মহাখালী যেতেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যাবে। আবার মহাখালী থেকে উত্তরা, আশুলিয়ায় যানজটে আটকে থাকতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা। ট্রেনে গেলে ততক্ষণে বাড়ি গিয়ে বসে থাকব।’

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন নারীরাও। চানখারপুল থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটায় এসেছিলেন শায়রা বানু। তিনি চট্টগ্রামের তিনটি টিকিট কিনেছেন ছয় ঘণ্টারও বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে। অনেকে পেপার কিনে টিকিট কাউন্টারের সামনের ফাঁকা জায়গায় বিছিয়ে বসে ছিলেন কয়েক ঘণ্টা। কেউ কেউ শুয়েও ছিলেন। সকাল নয়টা থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে সবাই আবারও দাঁড়িয়ে যান লাইনে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও অগ্নিবীণা ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের লাইন শেষ হয়। তখনো অনেক টিকিট অবিক্রীত ছিল। কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য লাইন শেষ হয় সকাল ১০টার দিকে। নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসের লাইন শেষ হয় বেলা পৌনে ১১টার আগে।

এসব ট্রেনের টিকিটের জন্য যাঁরা ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরা বরং কষ্ট বেশি করেছেন। সকাল ১০টার পর যাঁরা এসব ট্রেনের টিকিট কাটতে আসেন, তাঁরা মোটামুটি নির্বিঘ্নে টিকিট কেটেছেন। তবে রাজশাহীগামী পদ্মা, সিল্কসিটি, ধূমকেতু, খুলনাগামী সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য বেলা ১১টার সময়ও ছিল দীর্ঘ লাইন।

চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধূলী, সিলেটগামী জয়ন্তিকা, উপবন, পারাবতের টিকিটের জন্যও প্রথম দিন খুব ভিড় হয়নি। তবে সব ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর টিকিটের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা ছিল বেশি।

–  প্রথম আলো ।