অত্যন্ত লাভজনক ফসল সরিষা। অল্প খরচে এবং অল্প পরিশ্রমে কৃষক লাভবান হতে পারেন। সে কারণেই কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন সরিষা আবাদে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
ভৈরব : স্বল্প খরচ ও পরিশ্রমে অধিক ফলন এবং ফসল বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় সরিষা আবাদে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন ভৈরবের কৃষকরা। ফলে এখানে বছর বছর আশাব্যঞ্জকভাবে বাড়ছে সরিষার আবাদ।

কৃষকরা জানান, বীজ বোনার দুই মাসের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। ফলে পরবর্তী ফসল বোরো ধান আবাদে কোনো সমস্যা হয় না। অল্প পরিমাণ ইউরিয়া ছাড়া আর কোনো সারের প্রয়োজন হয় না সরিষা আবাদে। অন্যদিকে চারা গজানোর পরপর আগাছা পরিষ্কার ছাড়া তেমন কোনো শ্রমেরও দরকার হয় না। তাই প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার বেশি খরচ পড়ে না। অথচ ফলন পাওয়া যায় বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ।

প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে। ফলে খরচ বাদে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা মুনাফা হয় প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে। অল্প সময়ে কম খরচ ও পরিশ্রমে অন্য যে কোনো ফসল আবাদে এমন মুনাফা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে ভৈরবের কৃষকরা সরিষা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
ভৈরবের অবস্থান মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় হওয়ায় প্রতি বছর এখানকার জমিগুলোতে প্রচুর পরিমাণ পলি জমে। ফলে সরিষা আবাদের জন্য এখানকার জমিগুলো খুবই উপযোগী। এছাড়া সাধারণ দেশীয় জাতের সরিষা আবাদে কৃষক আগে যেখানে প্রতি হেক্টরে ফলন পেতেন এক টনেরও কম, সেখানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কৃত ‘বারী-৯’ জাতের বীজ চাষ করে ফলন পাচ্ছেন দেড় থেকে দুই টন। বারী-৯ জাত আবাদে ফলনও ওঠে খুব অল্প সময়ে। তাই সরিষার আবাদ শেষে বোরো ধান আবাদে কোনো সমস্যা হয় না। ফলে অল্প সময়, কম খরচ আর শ্রমে অধিক ফলনপ্রাপ্তি এবং বিক্রি করে বেশি মুনাফা পাওয়ায় দিন দিন সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে ভৈরবে। এসব অভিমত ভৈরব উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল খালেকের।

কিশোরগঞ্জ : জেলার গ্রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ।
সাধারণত নিচু জমিতেই সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। রোপণের মাত্র ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে পাকা সরিষা ঘরে তোলা হয়। চলতি রবি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলাতেই সরিষার আবাদ হয়েছে। জেলায় মোট আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১০০ হেক্টর। উপজেলাওয়ারি জমির পরিমাণ কিশোরগঞ্জ সদরে ২৫ হেক্টর, হোসেনপুরে ০৭ হেক্টর, পাকুন্দিয়ায় ৪০ হেক্টর, কটিয়াদীতে ১৪৪ হেক্টর, করিমগঞ্জে ১২০০ হেক্টর, তাড়াইলে ১৪৯০ হেক্টর, মিঠামইনে ৫০ হেক্টর, নিকলীতে ৫৮০ হেক্টর, অষ্টগ্রামে ২০০ হেক্টর, ইটনাতে ৭৬০ হেক্টর, বাজিতপুরে ৫৫০ হেক্টর, কুলিয়ারচরে ২৫৪ হেক্টর ও ভৈরবে ১৮০০ হেক্টর। উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন। কৃষকরা জানান, সরিষা কাটা ও মাড়াই শুরু হতে আরও ক’দিন বাকি। স্থানীয় তেলকলের মালিকরাই সরিষার প্রধান ক্রেতা। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের খপ্পরে পড়ে কৃষকরা বেশিরভাগ সময় ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল ৬ হাজার ৩৪২ হেক্টর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার অধিক পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

আমার দেশ –