পবিত্র রমজান মাসে প্রতিবছর যে পণ্যটির দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় তার মধ্যে অন্যতম হলো কাঁচা মরিচ। অন্যান্য বছর রজমানের শুরুতে একশো থেকে দুইশ টাকা দরেও কাঁচামরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। কিন্তু এবছরের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।  মানিকগঞ্জের বরংগাইল, ঘিওরের বাঠইমুড়ি ও হরিরামপুরের ঝিটকা হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা দরে। উৎপাদন খরচ, ক্ষেত থেকে তোলা ও হাটে বিক্রির জন্য পরিবহন খরচ মিলে প্রতি কেজি মরিচের দাম পড়ে ৮/১০ টাকা। তাই সারা দেশের মধ্যে কাঁচা মরিচ উৎপাদনের অন্যতম জেলা মানিকগঞ্জের কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঁচা মরিচ।

kachamoris-1 kachamoris-2

গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিন জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার বরংগাইল হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণ কাঁচা মরিচের আমদানী হয়েছে। পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে ৩ – ৫ টাকা কেজি দরে মরিচ ক্রয় করছেন। যা গত সপ্তাহেও ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি।  ঘিওরের বাঠইমুড়ি পাইকারী মরিচ হাটেও একই অবস্থা।  কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে এসে রীতিমত হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন কৃষক মোঃ কৃদ্দুছ মৃধা। ক্ষোভের সাথে জানালেন, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ক্ষেত থেকে তুলতেই খরচ হয় ৩ টাকার ওপরে। এরপর আবার পরিবহন খরচতো আছেই।

জেলা কৃষি সস্ম্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ঘিওর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়। উর্বর জমির কারণে এ অঞ্চলে মরিচের আবাদ হয় বেশি। কৃষকরা প্রতিদিনই ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বাজারে বিক্রি করছে। মরিচ বিক্রির জন্য ঢাকা আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন বরংগাইল ও হরিরামপুর উপজেলায় ঝিটকা এবং ঘিওর উপজেলার বাঠইমুড়ি হাট বিখ্যাত। প্রতিদিন ওই তিনটি হাটে শত শত মণ মরিচ বিক্রি করে কৃষকরা।

পাইকাররা এসব মরিচ অল্প দামে কিনে বাছাই করে ভালমানের মরিচ কাগজের বাক্সে প্যাকেটজাত করে। আর ওই সব প্যাকেটের শত শত মণ মরিচ ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে লন্ডন, দুবাই, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ইতালি, ফ্রান্স, নেপাল, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলে যায়। এছাড়া, মানিকগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীরা মরিচ ক্রয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আরো চড়া দামে বিক্রি করছে। কৃষকরা জানান, বিদেশে এসব মরিচ চড়া দামে বিক্রি হলেও উৎপাদনকারী কৃষকরা এর ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। এক শ্রেণীর মুনাফা লোভী মধ্যস্বত্বভোগী কম দামে কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ কিনে নেয়। আর বিদেশে রপ্তানির বিষয়ে কৃষি বিভাগ কিংবা সরকারের সঠিক কোন নিয়মনীতি নেই।

ঘিওর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের আয়নাল মিয়া জানান, লাভের আশায় প্রতি বছরই মরিচের চাষাবাদ বেশি করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে ফলনও ভাল হচ্ছে। কিন্তু হাটে পাইকাররা সঠিক দাম দিয়ে মরিচ কিনছে না। আজ হাটে তিনি ৪ মণ মরিচ এনেছিলেন। মরিচ তোলা, পরিবহন খরচ না উঠায় রাগে ক্ষোভে তিনি মনখানেক মরিচ হাটেই ফেলে রেখে যান।  বরঙ্গাইল “মরিচ হাট কমিটি”র সাধারন সম্পাদক মো. জহিরুল হক জানান, প্রতিদিন এই হাটে ৮ থেকে ১০ টন মরিচ বেচাকেনা হয়। এর একটা বড় অংশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। স্থানীয় বাজারে মরিচের এই ভয়াবহ দর পতনের কারন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রচুর সরবরাহ এবং বৃষ্টির কারণেই এই দর পতন। তাছাড়া বাজারে ক্রেতা স্বল্পতা এর সাথে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।