ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসমের শীর্ষ স্থানীয় নেতা রঞ্জন চৌধুরী ওরফে মেজর রঞ্জন চৌধুরী ও তার বাংলাদেশী সহযোগী প্রদীপ মারাককে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেফতার করেছে RAB।
শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে RAB সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স উইং ও RAB-৯ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভৈরব থানাধীন লক্ষ্মীপুর এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে বাংলাদেশী নাগরিক প্রদীপ মারাককে (৫৭) গ্রেফতার করে। তার বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানাধীন বাঁকাকুড়া এলাকায়। তার কাছ থেকে ১টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলিসহ ১টি রিভলভার, হাতে তৈরি ৪টি শক্তিশালী বোমা ও অস্ত্র, গোলাবারুদ তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। অপরজন উলফা নেতা রঞ্জন চৌধুরী ওরফে মেজর রঞ্জনের (৪৬) পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা।

তার বাড়ি ভারতের অসম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার গৌরীপুর থানাধীন সাংগুমধু শোলমারী এলাকায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছদ্মবেশে বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানাধীন গজনী এলাকায় বসবাস করছিলেন। ছদ্মবেশে অবস্থানকালে তিনি নিজেকে রঞ্জন সিসিম ওরফে রঞ্জন চৌধুরী ওরফে মেজর রঞ্জন ওরফে প্রদীপ রায় ওরফে দ্বীপ জ্যোতি ওরফে রঞ্জু বাড়ৈ ওরফে মাসুদ চৌধুরী নামে পরিচয় দিতেন।
পরে র্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া এ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েলসহ র্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। RAB জানায়, ১৯৮৮ সালে রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে উলফা নেতা অবিনাশ অধিকারী (মৃত), দিগন্ত দাসের (মৃত) পরিচয় হয়। এরপর থেকেই উলফার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরম্ন করেন। ১৯৯০ সালের শেষদিকে অসম রাজ্যের গোয়ালপাড়া ও মেঘালয় এলাকায় ৩ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণকালে তাকে দলীয় কাঠামো, দলীয় নিয়মনীতি, শারীরিক কসরত, অস্ত্র চালানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে শিৰা দেয়া হয়। তিনি হাল্কা ও ভারি আগ্নেয়াস্ত্র এবং গ্রেনেড চালনায় বিশেষ পারদর্শী।

পরবর্তীতে ভারতীয় সরকার উলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে রঞ্জন চৌধুরী ভারতের অসম রাজ্যের ভঙ্গাইগাঁও জেলায় আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন ১৯৯২ হতে ১৯৯৪ সাল পর্যনত্ম তিনি অসমের বিভিন্ন জেলায় উলফার সক্রিয় সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজকর্ম চালাতে থাকেন। এরপর তিনি ১৯৯৫ সালে উলফার অসমের ধুবড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯৫ সালের জুনে তিনি উলফার শীর্ষ নেতা পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে সাৰাত করতে ভুটানে যান। ওই সময় পরেশ বড়ুয়া তাঁকে বাংলাদেশে অবস্থানরত উলফার সেক্রেটারি জেনারেল অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের নির্দেশ দেন। এরপর রঞ্জন চৌধুরী ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে ভুটান থেকে ভারতে ফেরার চেষ্টা করেন। আসার পথে রঞ্জন চৌধুরী ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। প্রায় এক বছর ভারতের গোহাটি জেলে কারাবন্দী থাকার পর ১৯৯৬ সালের শেষদিকে ছাড়া পান।

এরপর ১৯৯৭ সালে তিনি পুনরায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিৰণ গ্রহণ করেন। প্রশিৰণ শেষে সেপ্টেম্বরে তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত উলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে ভারত থেকে সড়ক পথে কুড়িগ্রাম জেলা হয়ে এদেশে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে আসার পর মিন্টু ও সেলিম নামে দু’ব্যক্তি তাঁকে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে সাৰাত করিয়ে দেয়। পরেশ বড়ুয়া তাঁকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে মানিক কোর্চ নামক এক উলফা সদস্যের তত্ত্বাবধানে শেরপুরে পাঠিয়ে দেন। তারপর থেকেই তিনি উলফার কর্মকা- পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ও অসমে যাতায়াত করছিলেন। পরবর্তীতে গ্রেফতার এড়িয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখতে কৌশল গ্রহণ করেন। কৌশলের অংশ হিসাবে ২০০১ সালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় জনৈক মনীন্দ্র হাগিদরের মেয়ে সাবিত্রী ভ্রম্নমকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের অনুষ্ঠানে উলফার শীর্ষ নেতা পরেশ বড়ুয়া ও শশধর চৌধুরীসহ শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন উলফা নেতা উপস্থিত ছিলেন। এরপর শেরপুর সীমানত্ম এলাকার কোন গ্রামে সস্ত্রীক বসবাসের পাশাপাশি উলফার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

প্রসঙ্গত, রঞ্জন চৌধুরীর সহযোগী প্রদীপ মারাক ১৯৯১ সালে একটি এনজিও’তে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের পর চাকরি ছেড়ে উলফার হয়ে কাজ করছিলেন।