কিশোরগঞ্জ পৌ্রসভার কিছু বাইরে মারিয়া ইউনিয়নের কিতিয়ার চরে নিজাম শাহ’র মাজার এবং এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি সুন্দর মসজিদ রয়েছে। এই সাধক সম্পর্কে অসংখ্য কাহিনী কিংবদন্তী ছড়িয়ে আছে ।যে কাহিনীটি বহুল প্রচলিত তা হলঃ হয়বৎনগর দেওয়ান বাড়ীর একজন বিশিষ্ট দেওয়ান (কারো মতে মানোয়ার দাদ খান মতান্তরে জুলকদর খান ) খিজিরের ভক্ত ছিলেন ।তিনি এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন মহা  খিজির তাঁকে বলছেন যে,তুমি যদি সাধনায় পূ্র্ণতা লাভ করতে চাও,তবে হারুয়ার পার্শ্ববর্তী নরসুন্দার বাঁকে একটি বিন্নাগাছ আছে,তার নিচে প্রতিদিন সন্ধায় চল্লিশদিন পর্যন্ত একবার করে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে আসতে হবে ।

স্বপ্নাদেশের পর দেওয়ান সে জায়গাটি খুঁজে বের করেন এবং সেদিন সন্ধ্যা থেকেই স্হানটিতে নিজে যেয়ে আলো জ্বালান। এইভাবে ৩৯ সন্ধ্যা পার হয়ে ৪০তম দিনে দেখা গেল সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া। সন্ধ্যার পূর্বক্ষণেও সে ঝড়-বৃষ্টি না থামায় দেওয়ান সাহেব নিজাম নামে দেওয়ান বাড়ীর লাকড়ি কাটার একজন কর্মচারীকে ডেকে বলেন যে, এই আবহাওয়ার জন্য তিনি যেতে পারছেন না, তাঁকে আলো জ্বালিয়ে আসতে হবে ।

নিজাম সাথে সাথে রাজী হলেন এবং একটি কুপি জ্বালিয়ে বাঁশের চাটাই (স্হানীয় নাম “কাতিয়া”) মুড়ি দিয়ে বের হন ও নির্ধারিত স্হানে গিয়ে আলো জ্বালান ।

কিন্তু এই আবহাওয়ার মধ্যেও আলো নিভলো না, বরং দেখা গেল,নরসুন্দা থেকে এক সৌ্ম্যশান্ত শ্বশ্রুমণ্ডিত সাদা আলখেল্লাধারী এক পুরুষ উঠে এসে বল্লেন, ‘নিজাম’ প্রকৃত সাধনায় তুমিই কামিয়াব হয়েছ, এখন বলো তুমি কি চাও?নিজাম ভয়ে ভয়ে উওর দিলেন,আমি কিছুই চাই না,বরং যদি কিছু দিতে হয় আমার মনিবকেই দিবেন ।কিন্তু সে মহাত্মা বল্লেন,না তুমিই কামালিয়াত প্রাপ্তির যোগ্য সাধক ।

আজ থেকে তোমার অন্তদৃষ্টি খুলে যাবে।এ বলে সাধক পুরুষ অদৃশ্য হয়ে গেলেন এবং নিজামও বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে সেখানে পড়ে থাকেন ।রাত্রে ও পরদিন সকালেও নিজামের সাক্ষাৎ না পেয়ে দেওয়ান সাহেব ছুটে যান নির্ধারিত স্হানে এবং দেখেন যে,নিজাম বিন্নাগাছের একটি চিকন ডালে শয়ন করে ঘুমিয়ে আছেন ।এতে দেওয়ান সাহেবের আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না ।সেদিন থেকেও তিনি উন্মাদের মত হয়ে যান এবং আজীবন ‘পাগলা দেওয়ান’ নামে পরিচিত হয়েছিলেন ।আর দেওয়ান পরিবারের কাঠ কাটা কামলা নিজাম খিজিরের আশীর্বাদে কামালিয়াত লাভ করে নিজাম শাহ আউলিয়া নামে বিখ্যাত সাধক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন ।

আধ্যাত্মক সাধনায় নিমগ্ন থাকা অবস্হায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং বর্তমান স্হানেই তাঁকে সমাহিত করা হয় ।পরবর্তীকালে দেওয়ান বাড়ীর দেওয়ানদের প্রচেষ্টায় একটি দরগা ও একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় ।মসজিদটি খুব সুন্দর ও একটি শিলালিপিও রয়েছে ।কালের আর্বতে উক্ত মসজিদ ও মাজার ‘নিজাম শাহ আওলিয়ার’ মসজিদ ও মাজার নামে আজো ভক্তজনের হৃদয় পরশ বুলিয়ে যায়। এই মাজারটি পরবর্তী সময়ে আরো সংস্কার করে হয়েছে ।নিজাম শাহর মূল মাজারের আশেপাশে আরো কিছু মাজার রয়েছে। মসজিদটিও সম্প্রসারিত করা হয়েছে ।