রাসুল (সাঃ) এর দাদা আঃ মুত্তালিবের সময়,
ঐতিহাসিক এক মস্ত বড় আপতন ঘটে যায়।
যাকে আজো স্মরনীয় করে রেখেছে কুরআন,
সেটি হচ্ছে হাতি ও হাতি ওয়ালার উপাখ্যান।
‘আবরাহা আল-হাবশী’ নামে ছিল এক রাজা,
তৈরি করেন তিনি ১ “আল-কুল্লায়েস” গির্জা।
এটি তৈরি করার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল তাঁর,
হাজীগণ যেন গির্জায় যায় পরিবর্তে কা’বার।
যার কারণে আরবের লোকেরা খুব কুপিত হয়ে,
জনৈক ব্যক্তি মল ত্যাগ করে ঐ গির্জায় গিয়ে।
মল ত্যাগের খবর যখন আবরাহা জানতে পারে,
অতিশয় রাগান্বিত হয়ে এই বলে কসম করে,
তিনি অবশ্যই এসে কাবাকে করবেন ধ্বংস,
হাতী সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা কর হাবশী বংশ।
যখন তারা তায়েফে মুগাম্মাস নামক স্থানে যায়,
আল-আসওয়াদ বিন মাকসুদকে মক্কাতে পাঠায়।
সে তাহামা এলাকায় কুরাইশদের মাল করে লুট,
এমনকি নিয়ে যায় আব্দুল মুত্তালিবের দু’শত উট।
কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র তারা করতে চায় প্রহত,
প্রবীণ আ: মুত্তালিবের কুরাইশ বংশে ছিল নেতৃত্ব।
যখন তারা জানতে পারে তার প্রতিরোধ সম্ভব না।
তখন তারা পরিবর্তন করে তাদের ঐ পরিকল্পনা।
পরে ‘আবরাহা’ মক্কায় পাঠালেন  হুনাতাকে,
নেতাদের সাথে সাক্ষাত করে বল তাদেরকে,
আবরাহা, আসেনি তোমাদের সাথে করতে সমর,
তিনি ধ্বংস করতে এসেছে কেবল আল্লাহর ঘর।
তোমরা যদি সৃষ্টি না কর ধ্বংসে প্রতিবন্ধকতা,
তাহলে নেই কোন রক্তপাতের প্রয়োজনীয়তা।
যদি তারা না করতে চায় কোন সশস্ত্র লড়াই,
তাহলে তাদেরকে আমার সামনে দেখতে চাই।
আদেশ মতে হুনাতা মক্কায় প্রবেশ করে,
কুরাইশদের নেতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে।
প্রশ্নের প্রতি উত্তরে বলা হয় শোন হুনতা,
আব্দুল মুতালিব হাসেম আমাদের নেতা।
শুনে হুনতা আঃ মোতালিবের কাছে এসে বলে
আবরাহার প্রস্তাবিত সমস্ত বিবরন ধরছে তুলে
কসম করে আঃ মুতালিব বলে যুদ্ধের ইচ্ছা নাই,
তার সাথে মোকাবেলার শক্তিও আমাদের নাই।
এটি আল্লাহ ও তার খলীফার সম্মানিত ঘর।
এই ঘরকে সুরক্ষার দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহর।
আল্লাহ্‌যদি বাধা না দেয় তোমাদের এ সমরে,
তোমাদের সাথে আমরা প্রতিরোধ করব কি করে?
পরে হুনাতা তাকে বলে, তুমি সঙ্গে চল আমার,
কারণ আবরাহা তোমাকে আদেশ দিয়েছে যাবার।
আঃ মুত্তালিব সুন্দর সুঠাম এবং লম্বা মানুষ ছিলেন,
আবরাহা তাকে নিচে বসানো অনুচিত মনে করেন।
অন্য দিকে বাদশাহের গদিতে তাকে বসতে দেয়া,
এতেও আবরাহা চিন্তা করলেন অমঙ্গলের ছায়া।
সেই জন্য আবরাহা নিজ আসন থেকে নেমে এসে
আঃ মুত্তালিব ও আবরাহা চটের উপর পাশাপাশি বসে,
অনুবাদককে বললেন, আব্দুল মুত্তালিবকে জিগাও,
হে আব্দুল মুতালিব বল এখন তুমি কি চাও ?
প্রত্যুত্তরে আব্দুল মুতালিব বলেন, শোন হে বাদশা,
আমার দু’শ উট ফেরত চাই, নেই তো কোন আশা।
একথা যখন আবরাহাকে অনুবাদ করে শুনান হল,
তখন তিনি অনুবাদককে বলেন, তুমি তাঁকে বল,
আমি মনে করি তোমাকে অনেক বিচক্ষন ও জ্ঞানী,
আমি আবরাহা, তোমার মুখে একি তুচ্ছ কথা শুনি।
তুমি, দু’শ উটের কথা ভাবছ, একি আসলেই সত্যি
ধ্বংস আমি করব তোমার বাপ-দাদার দ্বীনের ভিত্তি।
তুমি, এ সম্পর্কে আমাকে যে কোন কথা বলছ না ?
উত্তরে বলে আমি উটের মালিক, কা’বার মালিক না।
যিনি কাবা শরীফের মালিক তিনিই নিবেন পদক্ষেপ,
আমি, কাবা ধংসে করতে চাই না কোন হস্তক্ষেপ।
প্রতি উত্তরে আবরাহা আব্দুল মুতালিবকে ডেকে কয়,
আমার ক্রাঁতি থেকে তিনি করতে পারবে না সঁচয়।
পরে আবরাহা, আঃ মুত্তালিবকে তার উট ফেরত দেন,
উট নিয়ে আঃ মুত্তালিব কুরাইশদের নিকট ফিরে যান।
ফিরে এসে কুরাইশদের মক্কা ত্যাগে আদেশ করে দান,
যাতে তারা সেনাদের আক্রমন হতে পায় পরিত্রান।
এই বলে সরদার আব্দুল  মুত্তালিব উঠে চলে যায়,
উঠে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে কাবা শরীফের দরজায়।
কুরাইশ বংশের আরো কিছু লোক সঙ্গে ছিল তার,
সকল লোক মিলে মহিপতির নিকট হাত তুলে এবার,
ওগো দয়াময়-মহামহিম, ওগো নিখিল সৃষ্টের স্বামী,
আবরাহার আক্রমণ হতে আমাদের রক্ষা করো তুমি।
আব্দুল মুত্তালিব কা’বার দরজা ধরে এ দোয়াও করে,
হে রক্ষী সকল মানুষ যেমন নিজ নিজ ঘর রক্ষা করে,
তেমনি করে করো তুমি তোমার ঘরের হেফাজত,
তোমার তরে এ মিনতি করছি মোরা তুলে দুই হাত।
পরের দিন সকালে আব্রাহা যুদ্ধের তরে প্রস্তুত হন,
মক্কায় প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে সেনাদলকে সাজান।
‘মাহমুদ’ নামে হাতি ছিল আবরাহার মগ্নচড়ে,
সেনারা, হাতিকে মক্কার দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে।
মক্কার দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলে হাতি বসে যায়,
বিশ্ব কর্তার অপার লীলা বুঝি মাতঙ্গ বুঝতে পায়।
হাতিকে উঠানোর জন্য সেনারা মারপিট শুরু করে,
শত আঘাতের পরও হাতি উঠতে অস্বীকার করে।
যখন সেনারা হাতিকে ইয়েমেনের দিকে ফিরায়,
তখন মাতঙ্গ ইয়েমেনের দিকে ছুটে নির্দ্বিধায়।
অনুরূপ যখন শ্যাম ও পূর্ব দিকে রওয়ানা করে,
হাতি তখন মন আনন্দে শ্যাম দেশে যাত্রা করে।
ষাট হাজার সৈন্য সহ, সঙ্গে হাতি কয়েক হাজার
ক্বাবাশরীফ ধংসে এগিয়ে যাচ্ছে আবরাহার অনুচর,
যখন তারা মসজিদুল হারামের কাছাকাছি আসে,
ছোট্ট ছোট্ট পাখি আসে প্রতিপালকের নির্দেশে।
আবাবিল নামে পাখি আসে হাজারে হাজার,
প্রতিটি পাখি বহন করে তিনটি করে পাথর।
আবাবিল বাহিত পাথর, নয় তো বড়-বিশাল,
দেখতে যেন ঠিক,এক-একেটি মুশুরির ডাল।
পাখিরা যখন পাথর গুলি করছিল নিক্ষেপণ,
যার শরীরে ছোঁয়া লাগে সেই হয় নির্বাপণ।
কেউবা মরে পানিতে পরে কেউবা রাস্তায়,
একই পাথর আঘাত করে আব্রাহার গায়।
তার লোকেরা তাকে ‘সান’আয়’ নিয়ে যায়,
যাবার পথে আঙ্গুল্গুলি খসে খসে পরে যায়।
‘সান’আয়’ পৌঁছে আব্রাহা এমন দুর্বল হয়,
পাখির ছানার মত হয়ে প্রাণটি উড়ে যায়।
ভবের লীলা সাঙ্গ হল, খেললেন বিধি খেলা,
বিনা যুদ্ধে দেখালেন তিনি আব্রাহা ধ্বংসলীলা।
ইতিহাসে রয়েছে স্মৃতি বাস্তব এ উপাখ্যান,
যার কারণে বৃদ্ধি পায় কুরাইশদের সম্মান।
আল্লাহ্‌র ঘর, নিজে তিনি করেছেন হেফাজত,
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে আঃ মুতালিবের ইজ্জত।
চিনল যাকে তরুলতা, চিনল বনের পাখি,
মানুষ হয়ে অন্ধ মোরা, বন্ধ মোদের আঁখি।
থাকতে অনুপল করো নির্মল মনের পঙ্কিলতা,
নইলে, জীবন মানে পাবে তুমি শুধুই শূন্যতা।

মোহাম্মদ সাহিদুল ইসলাম ( সিঙ্গাপুর প্রবাসী )