আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এখন রাষ্ট্রপতি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বাড়িও ছিল এই কিশোরগঞ্জ জেলায়। কিন্তু এই কিশোরগঞ্জ জেলাতেই দলটির সম্মেলন হয় না প্রায় এক যুগ ধরে। দীর্ঘদিন ধরে দলের জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদটি ভারপ্রাপ্তের ভারে ভারাক্রান্ত। বর্তমানে দলের কোন সাংগঠনিক তত্পরতা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে এবার মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নিস্ক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। ক্ষুদ্র আয়োজনে বিশেষ বিশেষ দিন পালন ব্যতীত দলটির তত্পরতা বলতে গেলে কিছুই নেই। প্রায় সারাবছরই জেলা কার্যালয় থাকে কর্মীশূন্য। সাংগঠনিক তত্পরতা না থাকার কারণে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত মূল দল কিংবা অঙ্গ-সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। অপরপক্ষে অন্তর্কলহে বিএনপি’র ঘর পুড়ছে। বিশেষ করে জেলা সদরে এই কোন্দল প্রকাশ্যেই দৃশ্যমান। একই দিবসে বিবদমান গ্রুপ পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের মেয়াদ শেষ হবার তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর তারা বেশ উত্ফুল্ল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা না কাটলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কিন্তু ঘরে বসে নেই। এবারের ঈদে তাদের তত্পরতা ছিল বেশ লক্ষণীয়। বেশিরভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশীই পোস্টার-ব্যানার ছাপিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনসহ জনসাধারণের দোয়াও প্রার্থনা করেছেন। জেলা ও প্রতিটি উপজেলা সদর, এমন কি গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্তও ডিজিটাল পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে। অনেকেই এলাকার গরীব-দুঃখীদের মাঝে খাদ্য ও কাপড়-চোপড় বিলি করেছেন। মসজিদ-মাদ্রাসায় দান-খয়রাত করেছেন। এসবই যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রাক প্রস্তুতি তা বুঝতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয়নি। বলা চলে, ইতিমধ্যেই জেলার সর্বত্র নির্বাচনের মৃদু-মন্দ হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

কিশোরগঞ্জ জেলায় সংসদীয় আসন ৬টি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবকয়টি আসন গিয়েছিল মহাজোটের দখলে। কিশোরগঞ্জকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই গণ্য করা হয়। আসন্ন নির্বাচনেও মহাজোট সবকয়টি সিটই তাদের দখলে রাখার জন্য আঁঁটঘাট বেঁধেই নামবেন বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। অপরদিকে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট অন্তত ৩টি সিট পুনরুদ্ধারে আশাবাদী।

কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর) আসনে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮০ ভোট। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই মনোনয়ন লাভ করবেন। এখানে আওয়ামী লীগের আর অন্য কোন প্রার্থীর নাম শোনা যায় না। এই আসন থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। এদিকে বিএনপি’র হাফ ডজনেরও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের ডিজিটাল ব্যানার-প্ল্যাকার্ড আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে এ আসনের দুই উপজেলার ব্যস্ত সড়ক থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যায় এরা হলেন- সাবেক এমপি মো. মাসুদ হিলালী, সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউল¬াহ রাব্বানী, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব ইসরাইল মিয়া, বিএনপি চেয়ারপার্সনের তথ্য ও গবেষণা সেলের কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অব.) সালাহ উদ্দিন আহমেদ সেলু। এছাড়া এ আসনে ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মো. আবদুস সালাম প্রার্থী হতে পারেন বলেও গুজব রয়েছে। বিকল্পধারা বাংলাদেশ থেকে দলটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে এডভোকেট এনামুল হক সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪২২।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) আসনের বর্তমান এমপি হলেন ডা. এম এ মান্নান। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইদ্রিস আলী ভুঁইয়ার প্রাপ্ত ভোট হলো ৯৮ হাজার ২৩ । ডা. এম এ মান্নান বয়সের ভারে নূব্জ্য হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ এই আসনে এবার নতুন প্রার্থী দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, বিশিষ্ট শিল্পপতি মাঈনুজ্জামান অপু, আয়কর আইনজীবী আবুল ফজল আনার, কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেণু, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ প্রমুখ। তাছাড়া এই আসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হতে পারেন বলেও এলাকায় আলোচনা রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিগত নির্বাচনে দলটির প্রার্থী ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া, বজলুর রহমান, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খোকন, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আশফাক আহমেদ জুন, কটিয়াদী পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খান দীলিপ, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম জানু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী শহীদুজ্জামান কাঁকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আরফান উদ্দিন খান, রুহুল আমিন আকিল প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জনও মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে বদরুল আমিন বাচ্চু ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম শওকত এ আসনে জনসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন। এছাড়া জেলা সিপিবি’র সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৪৭৫।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে বিগত নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৬১ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ড. মিজানুল হক, জেলা কৃষকলীগ নেতা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. এরশাদ উদ্দিন, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ঢাকা বিভাগের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আইটি ব্যবসায়ী শেখ কবির আহম্মেদ, করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শিল্পপতি নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যাপক আসাদুল হক, জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. মাহবুব ইকবাল প্রমুখ। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক এবং জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৭।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ। তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান পান ৯২ হাজার ৫২ ভোট। অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ গত ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবার পর তার শূন্য আসনে গত ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে তার বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের প্রার্থিতা অনেকটা নিশ্চিত। তাছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে এরা হলেন- জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাজাহান, ডা. সাব্বির আহমদ খান প্রেমিক প্রমুখ। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান, জহিরউদ্দিন আহমদ, ফরহাদ আহমদ কাঞ্চন, অধ্যক্ষ হাবীবুর রহমান ভুঁইয়া প্রমুখ। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ৮২৩।

কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মো. আফজাল হোসেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মজিবুর রহমান মঞ্জু পেয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৫৪ ভোট। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থী হিসেবে মো. আফজাল হোসেন ছাড়াও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে এরা হলেন- বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলাউল হক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ সালেহুজ্জামান খান রুনু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, বাজিতপুর পৌরসভার মেয়র এহেসান কুফিয়া, অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন বাদল, প্রকৌশলী গোলাম রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শফিকুল আলম রাজন প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে। তাছাড়াও বিকল্পধারা এই আসনে বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান শিপ্রা রহিমের নাম ঘোষণা করেছে। এই আ%