ছাত্রলীগের অপকর্মের দায় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, টেন্ডারবাজি বন্ধ করতে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে গেছে। আর এ অবস্থায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নেই এই যুক্তি তুলে  দলের নেতারা বলছেন- ‘ছাত্রলীগ একটি স্বতন্ত্র সংগঠন’। তাই ছাত্রলীগের অপকর্মের দায় তাদের নয়।

সর্বশেষ সোমবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, ‘ছাত্রলীগের নামে যে যাই করুক তাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ আমি আগেই দিয়েছি। এমন নির্দেশের পরও কিছু ঘটে গেলে কী করার আছে!’

নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণের গণতান্ত্রিক অধিকার আওয়ামী লীগের নেই বলেও দাবি করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠে। সারাদেশেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে মেতে ওঠে আর জড়িয়ে পড়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ-সংঘাতে। এসব ঘটনার কারণে সরকার এবং আওয়ামী লীগকে বার বার বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

এক পর্যায়ে খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে দলের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএম মোজাম্মেল হক এবং আহমেদ হোসেনকে দায়িত্ব দেন তিনি। তারা ছাত্রলীগের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকও করেন। কিন্তু তবুও থামেনি ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ।

সূত্র জানায়, এই তিন নেতা ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়াসহ সংগঠনের সব পর্যায়ে দ্রুত সম্মেলনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা এই বিষয়টি শেখ হাসিনাকেও জানান। কিন্তু পরে এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন এই তিন নেতাও আর ছাত্রলীগের কোনো দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না।

দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও প্রকাশ্যেই ছাত্রলীগের দায় এড়িয়ে গেছেন।

তিনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ স্বাধীন সংগঠন, আমরা তাদের পরামর্শ দিতে পারি, চাপ দিতে পারি না।’

সর্বশেষ গত ২৭ জুন বিএনপির হরতাল চলাকালে একজন সাংসদের উপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না।’

সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ত ঝরার পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা ছাত্রলীগকে পরামর্শ দিতে পারি। তারা স্বাধীন সংগঠন।  জোর করে তো আর তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারি না!’