জীবনানন্দ দাস ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই ফেব্রুয়ারী বরিশাল-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সত্যানন্দ দাস বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন এবং তার মাতা কুসুমকুমারী কবিতা লিখতেন।

১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বি এম কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন তিনি।এরপর ১৯১৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজীতে বিএ এবং একই কলেজ থেকে ১৯১৯ সালে তিনি এমএ পাস করেন। জীবনানন্দ দাস বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে তার চাকুরী জীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ১৯২২ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষকত করেন। এরপর তিনি অল্প সময়ের জন্য মাত্র প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ এ শিক্ষকতা করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি বরিশালের বিএম কলেজে যোগদান করেন এবং ১৯৪৭ সালের দেশ ভঙ্গের আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। এরপর তিনি কলকাতায় চলে যান।

জীবনানন্দ দাস খুব অল্প বয়স থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। ছাত্র থাকাবস্থায় তার কবিতা “বর্যা আবাহন” “ব্রহ্মবাদী”-তে ছাপা হয়। তার অনেক কবিতাই বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তার অসংখ্য কবিতার মধ্যে কিছুর নাম হলঃ ঝরা পালক, ধুসর পান্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, রূপসী বাংলা এবং বেলা অবেলা কালবেলা।

জীবনানন্দ সেই সকল কবিদের মধ্যে ছিলেন যারা  বাংলার সাহিত্য-কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কাব্যের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। এই সকল কবি তাদের কবিতায় গ্রামীন বাংলার আসল চিত্র তুলে ধরেছেন। যদিও তার প্রথম দিকের কবিতায় নজরুল ইসলাম, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এবং মোহিতলাল মজুমদারের কবিতার প্রভাব লক্ষ্য করা যেত, কিন্তু তিনি এই প্রভাব কাঁটিয়ে উঠে পরবর্তীতে বাংলার কবিতার এক বিশিষ্ট ব্যাক্তিতে পরিনত হতে সক্ষম হোন। জীবনানন্দ-এর মাঝে রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতির প্রতি গভীর মমতাবোধ পরিলক্ষিত হয় ‘রূপসী বাংলা” কবিতায়। এই কবিতা তাকে রূপসী বাংলার কবির মর্যাদা এনে দেয়। এছাড়া জীবনানন্দ দাস আধুনিক শহুরে জীবনের হতাশাগ্রস্থতা একাকীত্ব এর ছবিও তার কবিতার মধ্যে ফুঁটিয়ে তুলেন।

জীবনানন্দ দাসের কবিতা বাঙ্গালীদের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক জীবনে অনেক প্রভাব ফেলেছে। তার কবিতা বাংলার অনেক মানুষের মাঝে দেশপ্রেম গড়ে তুলেছে। তার অনেক কবিতাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হতাশাগ্রস্থ মানুষের মাজঝে বল প্রদান করেছে।
যদিও তিনি মূলত একজন কবি ছিলেন, তারপরও তিনি অনেক ছোট গল্প এবং উপন্যাস লিখেছেন। কিন্তু দুখের বিষয় হল তার মৃত্যুর পরই কেবল গল্পকার আর ঔপন্যাসিক হিসেবে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তার কিছু উপন্যাসঃ মাল্যবন, সুতীর্থ, জলপাইহাতি, জীবনপ্রনালী ও বাসমতীর উপখ্যান। তিনি প্রায় ২০০ এর অধিক গল্প লিখেছেন। জীবনানন্দ দাসের গল্প গ্রন্থে তার অনেক গল্প পাওয়া যাবে। তিনি কবিতা নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন যা “কবিতার কথা”-তে পাওয়া যাবে। জীবনানন্দ দাস-এর সমগ্র লেখা নিয়ে ১২ ভলিউমের “জীবনানন্দ সমগ্র” কলকাতা থেকে বের হয়েছে।

জীবনানন্দ দাস ট্রাম এক্সিডেন্টে ১৯৫৪ সালের ২২এ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার মৃত্যু নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়ে গেছে।

উল্লেখযোগ্য লেখাঃ

ক্লিক করে ডাঊনলোড করুনঃ-
১। রুপসী বাংলা
২।  বনলতা সেন
৩। ঝড়া পালক
৪। ধূসর পান্ডুলিপি

জীবনানন্দ দাসের কবিতা পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুনঃ ক্লিক

সৌজন্যেঃ উইকিপিডিয়া, কিশোরগঞ্জ ডট কম, বাংলা কবিতা ডট কম, বাংলাবুকস ডট টি কে