যেতে হবে মিঠামইন। আগের দিন ট্রলার ঘাট থেকে বন্ধুরা খোঁজ নিয়ে এসেছিল, প্রথম ট্রলারটি যাত্রা করবে সকাল ৭টায়। এদিকে রাতের বেশীরভাগ সময়-ই কেটে গেছে বাংলোর সামনে নদীর ঘাটে আড্ডা দিয়ে। বলা বাহুল্য আড্ডার বেশীরভাগ অংশ জুড়ে ছিল ‘আদি সামাজিক বিজ্ঞান”  ঘন্টা দু’য়েক স্পীকারের রুমে ঘুমিয়ে ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে উঠি ঘুম থেকে। উঠেই দেখি গতকাল বলে দেয়া রিকশাওয়ালা মামারা এসে দাড়িয়ে আছে আমাদের ট্রলার ঘাটে পৌঁছে দেয়ার জন্যে!!!

অষ্টগ্রামের ট্রলার আর বাংলাদেশের রেলওয়ে এক জিনিস না। ঠিক ৭ টায় ট্রলার যাত্রা শুরু করল। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। অনেক দূরে আবছা আবছা গাছগাছালি দেখা যাচ্ছিল, ট্রলারের মামার কাছে জানতে চাইলাম এগুলো কতদূর হবে? সে বলল- ‘মাইল দশেক তো অইবোই, কম কইরা অইলেও’!!! পানির বিস্তৃতির জন্য এক সময় জনপদগুলো দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেল। আমাদের অবস্থান ট্রলারের ছাদে। যদিও সকালের মেঘহীন সূর্য হুমকি দিচ্ছিল, কিন্তু ঠান্ডা বাতাসের কারণে আমাদের তেমন কোন কষ্ট ই হয়নি।

মাঝেমাঝে কিছু গাংচিল আর ছোট ছোট জেলে নৌকা ছাড়া মাইলের পর মাইল আর কিছুই চোখে পড়েনি। দৃষ্টিসীমার শেষ মাথায় মাঝে মধ্যে উঁকি দিয়ে যায় জলে ভাসা অসহায় গ্রাম, খড়ের গাদা। অস্ফুটে বেরিয়ে আসে- “ওরে নীল দরিয়া,আমায় দে রে দে ছাড়িয়া” ট্রলারের অন্যান্য যাত্রীরাও যে যার স্বরে গেয়ে উঠে বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই গানটি। মায়াময় এক আবহ তৈরি হয় ট্রলারটিতে।

ঘন্টা তিনেক পর আমরা উপস্হিত হই ঘাগড়া নামক ঘাটে। সেখানে রয়েছে অত্যন্ত পরিচিত মাজার এবং একটি আখড়া। এক বন্ধু বলল- ‘আসছি যখন , সবকিছু দেখে যাই’। আখড়া এবং মাজার দেখে আমরা ফিরে আসি ঘাটে।

ঘাট থেকে ট্রলারে করে মিঠামইন (স্পীকার আ:হামিদের বাড়ি)। মিঠামইনে নাস্তা সেরে ওখানকার লোকজনকে জিজ্ঞেস করতেই তারা বলল, মিঠামইন রক্ষা বাঁধ টিই নাকি এই এলাকার সবচাইতে সুন্দর জায়গা। আমরা নৌকা নিয়ে উপস্হিত হলাম বাঁধের সামনে। জায়গাটি আসলেই অসম্ভব সুন্দর, মনোমুগ্ধকর। অসম্ভব শক্তিশালী বাঁধটির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছি আর গর্জন সমৃদ্ধ ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার দৃশ্য দেখছিলাম আর মনে হচ্ছিল রাত ১১টার পর বন্গোপসাগরের গর্জন !!!!!

বাঁধের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি স্পীকার সাহেবের বাড়ি। বাড়িতে তালা দেয়া দেখে উনার সাথে দেখা করতে পারিনি, আমাদের মন খারাপ হয় |

গত ২৪ ঘন্টা পানিতে কাটিয়ে নিজেকে কেমন জানি হাঁস হাঁস মনে হচ্ছিল। আর পানি ভীতি তো উবে গিয়েছে আরো আগেই। এইবার ট্রলার ছেড়ে আমরা ভাড়া করি ছোট ইন্জিন চালিত নৌকা!!!! জার্নি টু চামড়া বন্দর। বোটের মামার কাছ থেকে জানতে পারি তাদের জীবন যাত্রা, সামাজিক অবস্হা। মাঝে মাঝে মাছ ধরার নৌকাগুলোর কাছে গিয়ে বোট ভিড়িয়ে দেখেছি জ্যান্ত মাছ। মামা আমাকে বলল, আগেরদিন নাকি সে বোট চালাচ্ছিল, তখন চার কেজি ওজনের এক বোয়াল মাছ তার বোটে লাফিয়ে চলে আসে

বোট মামাকে বলে আমরা বুক পানি আছে এমন জায়গায় বোট থামিয়ে নেমে পড়ি পানিতে। কিছুক্ষন ধাপাধাপি করে আবার বোটে উঠি। প্রায় তিন ঘন্টা বোটে কাটিয়ে আমরা আসি চামড়া বন্দর। চামড়া থেকে কিশোরগন্জ এবং তারপর ঐতিহাসিক এগারসিন্দুর ।