কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলাটির আয়তন ২১৯.২২বর্গ কি.মি.যার উত্তরে কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিনে বেলাব ও মনোহরদী উপজেলা; পূর্বে নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলা আর পশ্চিমে পাকুন্দিয়া উপজেলা।

নামকরণঃ  কটিয়াদী নামকরণের ব্যাপারে বিভিন্ন জনশ্রুতি রয়েছে। কেউ বলেন, প্রাচীন আমলে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে আসন গড়েছিলেন ‘কটি ফকির’ নামে এক কামেল দরবেশ। কথিত আছে এই ‘কটি ফকির’ আধ্যাত্মিক সাধনের মাধ্যমে মানুষের উপকার করতেন। এই কটি ফকিরের নামানুসারেই কটিয়াদী নামের উৎপত্তি হয়।

আবার কেউ বলেন, কটিয়াদী ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইংরেজ সাহেবদের অনেকগুলো নীলকুঠি ছিল। নীলকুঠির নীলকর সাহেবদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কেনা-কাটার জন্য আড়িয়াল খাঁ নদের উত্তর পাড়ে গড়ে ওঠে ছোট্ট একটি বাজার। এই নীল কুঠির কুঠি থেকে কুঠিয়াদী এবং পরবর্তীতে কটিয়াদী নামে পরিচিত।

আবার কেউ কটিয়াদী নামকরণের ব্যাপারে অন্য মত পোষণ করেছেন। কটিয়াদীর ইতিহাস গ্রন্থের লেখক সারোয়ার হোসেন শাহীন উলেস্নখ করেছেন আজ হতে আটশত বৎসর পূর্বে এগারসিন্দুরের প্রাচীন ইতিহাসে সামন্ত কোচ রাজাদের মধ্যে বেবোধী নামে এক রাজার নাম রয়েছে। তিনি অত্যন্ত সম্মানিত রাজা ছিলেন। আমরা লক্ষ্য করছি যে, বেবোধী শব্দটির শেষ অংশটা ‘ধী’ দ্বারা পূর্ণ। আর এই ‘ধী’ বা ‘দি’ শব্দটির বহুল প্রচলন দেখা যায় বিভিন্ন স্থান ও নামের পাশে। যেমন- নরসিংদী, মাধবদী, পুরাদী, মনোহরদী, হোসেন্দী, তারাকান্দি, বিন্নাদী, গেলাপদী, নারান্দী, পাকুন্দী, রামদী, আজলদী, চরফরাদী, মানিকদী, মান্দারকান্দি, সাগরী এবং কটিয়াদী। এমন অনেক নামের সঙ্গে এই ‘দী’র বহুল প্রচলন আছে তাহলে নিশ্চিত যে এ ‘দী’ টি অতি সম্মানসূচক বা বিশেষ অর্থবোধক। কারণ এ সব নাম সাধারণত অর্থবোধক হয়। আমরা যদি বেবোধী রাজার ‘দী’র দিকে তাকাই তাহলে ঐ ‘দী’ টিকে সম্মানসূচক বলে ধরে নিতে পারি।

যেমন- আজকে বাবুজী, নেতাজী, শেখজী ইত্যাদির ‘জী’গুলি সম্মানসূচক। সেকালে ও সম্মানসূচক অর্থে এই দী’র ব্যবস্থা ছিল। কিংবা সুন্দরের প্রতীক ছিল। তাই ধারণা করা হচ্ছে যে, বেবোধী রাজার উত্তরসুরীগণ ‘দী’ শব্দগুলোর স্থানে বসবাস করলে তাদের নামানুসারেই নামকরণ হয়। তাই কটিয়াদী নামকরণের দিকেও এই যুক্তি প্রমাণ রয়েছে। এমনও হতে পারে কটি ফকির বেবোধী রাজার আত্মীয় বা উত্তরসুরী হিসাবে তার নামের প্রথম শব্দ কটি এবং রাজার ‘দী’ উপাধি সংযুক্ত করে কটিধী থেকে পরবর্তী সময়ে কটিয়াদী নামকরণ হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রাচীন মধ্য ও আধুনিক যুগকে ধারণ করে উজ্জ্বল উপস্থিতি আজ ঘোষণা করছে কটিয়াদী উপজেলা। বৃহত্তর ময়মনসিংহের সর্ব দক্ষিণ -পশ্চিম শায়িত রয়েছে দীর্ঘাঙ্গী জনপদ কটিয়াদী। কটিয়াদী উপজেলা বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত।

কটিয়াদী উপজেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর, পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ও নিকলী, দক্ষিণে ও দক্ষিণ পশ্চিমে নরসিংদী জেলার মনোহরদী, দক্ষিণ পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর এবং পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। কটিয়াদী উপজেলায় বর্তমানে ১৫৫টি গ্রাম এবং ৯৭টি মৌজা রয়েছে। ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার আয়তন ২২১.৮৮ কি:মি:।

প্রধান জলাশয়ঃ
পুরুশবাধিয়া, দোবা, রেক্সা বিল।

কটিয়াদী শহরঃ

শহরটিতে মৌজা আছে ৩টি। এর লোকসংখা ১২২০৮ জন; পুরুষ ৫২.৭৫%,মহিলা ৪৭.২৫%। জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৪৭২/বর্গ কিমি।শহরের স্বাক্ষরতার হার ৪৫.২৫%।

প্রশাসনঃ

কটিয়াদী থানাটি উপজেলা হয় ১৯৮৩ সালে। এতে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ,৯৫টি মৌজা,১৫১টি গ্রাম আছে।

উল্লেখ্যযোগ্য স্থান বা স্থাপনাঃ কুড়িখাই (শাহ শামসুদ্দিনের মাজার), গোপিনাথ বাড়ী, মসুয়া সত্যজিৎ রায়ের বাড়ী, বনগ্রাম শিতলী মায়ের মন্দির, চান্দপুর মিয়া চান্দ শাহ মাজার, জালালপুরের ‘নীল চুল্লী’

জনসংখ্যাঃ ২৬৪৫০১; পরুষ ৫০.২৪%, মহিলা ৪৯.৭৬%;  মুসলিম ৯৪.২৬%, হিন্দু ৪.৬০%, বৌদ্ধ০.২৫%, খ্রীষ্টান০.৩২%;  অন্যান্য ০.৫৭%; পৌত্তলিক পরিবার ২৭ পরিবার।

ধর্মীয় প্রতিস্ঠানঃ মসজিদ ৩৫৯টি,মাজার ২টি, মন্দির ৫টি।

স্বাক্ষরতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ গড় স্বাক্ষরতা ২০.৩%; পুরুষ ২৪.৯%, মহিলা ১৫.৬%।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ

কলেজ ৩টি, উচ্চ বিদ্যালয় ১৯টি, মাদ্রাসা ৩৬টি,কারিগরী প্রশিক্ষন কেদ্র ১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮১টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২টি। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান নবগ্রাম আনন্দ কিশোর হাই স্কুল(১৯২২)।

আঞ্চলিকভাবে প্রকাশিত সাময়িকীঃ মাসিক উন্মেষ।

সাংস্কৃতিক সংগঠনঃ

সাংস্কৃতিক সংঘটন ক্লাব ১১টি, সিনেমা হল ৩টি, নাট্য মঞ্চ ১টি।

প্রধান পেশাসমূহঃ

কৃষি ৪৬.৯১%,কৃষি মজদুরি ২২.১৭%,দিনমজুর ৩.৬৪%, ব্যবসায় ১১.০৫%, মাছ ধরা ১.০৩%, চাকুরী ৩.৫৫%, যানবাহন ১.২২%, অন্যান্য ১০.৪৩%।

জমির ব্যবহার

মোট চাষ উপযোগী জমির পরিমান ১৬২৪৮.৪৮ হেক্টর,পতিত জমি ৪৩০.৫৯ হেক্টর; এক-ফসলী ১১.৬৮%,দ্বি-ফসলী ৫৫.৩৫%, ত্রিফসলী ৩২.৯৭%। সেচেঁর আওতাভূক্ত চাষের জমি ২৩.২%।

জমির মূল্যঃ প্রথম মানের ০.০১ হেক্টর জমির মূল্য প্রায় ১০০০টাকা।

কৃষকের মাঝে জমির নিয়ন্ত্রন ৪৯.৪৫%ছোট, ৩০.৪৭%মাঝারী, ১০.০৮%ধনী চাষী।

প্রধান শস্য ধান,পাট,গম,সরিষা, রসুন,বাদাম,পেঁয়াজ,টমেটো,মরিচ,আলু।আখ,সব্জি।

বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত শস্য তিল,তিসি,তুলা,কাউন,বার্লি,মৌরি ও কালজিরা।

প্রধান ফল আম,কলা,কাঁঠাল,পেঁপে,লিচু।

মাছ চাষ,পশুপালন,পোল্ট্রিঃ

মাছের খামার ৬টি,পোল্ট্রি ১৬৯টি,পশুর খামার ৪০টি।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ পাঁকা রাস্তা ৪৭কিমি,আধাপাঁকা ৮কিমি এবং মাটির রাস্তা ১৭৩কিমি;রেলওয়ে ১২.১৪কিমি।

ঐতিহ্যবাহী যানবাহন পাল্কি(বিলুপ্ত),গরুর গাড়ি,ঘোড়ার গাড়ি(প্রায় বিলুপ্ত),নৌকা।

শিল্পকারখানাঃস’মিল ২০টি,রাইস মিল ৫টি,তেলের ঘানি ৪৩টি।

কুটির শিল্পঃতাঁত ২৮১টি, বাঁশের কারিগর ৩৪৮জন, কাঁঠের কাজ ২৭৬,কামার৬২জন, কুমোর ৫৭,পাট ও তুলার কাজ ৫৪, অন্যান্য ১৫০৭।

হাট, বাজার, মেলাঃ মোট হাট বাজার ২০টি,তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কটিয়াদী বাজার,ধুলদিয়া বাজার এবং কারগাওন বাজার, মেলা ৮টি, উল্ল্যেখযোগ্য গোপিনাথ গিওর মন্দিরের রথমেলা।

প্রধান রপ্তানীজাত পণ্য পাট।

এন.জি.ও কার্যক্রমঃ কার্যত গরুত্তপূর্ন এন.জি.ও গুলো হচ্ছে ব্র্যাক, প্রত্যাশা,মসজিদ মিশন,গ্রামীন ব্যাংক,আহসানিয়া মিশন,পল্লী বিকাশ,প্রশিকা এবং গ্লোবাল ভিলেজ।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি,গ্রাম্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র ২টি ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮টি।