কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা খুব একটা প্রাচীন জনপদ না হলেও ঐতিহ্য-কৃষ্টি, সংস্কৃতির দিক থেকে এ উপজেলার সমৃদ্ধি অনেক প্রাচীন জনপদ থেকে কোন অংশে কম নয়। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি প্রণয়োপাখ্যানের ট্র্যাজিক নায়িকা চন্দ্রাবতী এ সদর উপজেলারই এক কীর্তিময়ী নারী।

মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মরহুম সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম এ উপজেলাধীন যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন তথা লবণ আন্দোলনের এক জ্যোতির্ময়ী নারী হেমাঙ্গিনী রায়, গণজাগরণমূলক সংগীতের অন্যতম পুরোধা নিবারণ পন্ডিত, বিখ্যাত ফার্সি মহাকাব্য ‘শাহনামা’র অনুবাদক মনিরউদ্দিন ইউসুফ, বাউল সাধক অখিল ঠাকুরসহ অগণিত কীর্তিমান পুরম্নষের জন্মতীর্থ এ কিশোরগঞ্জ। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও কিশোরগঞ্জ এক রত্মগর্ভা জনপদ।

উপজেলার নামকরণঃ 

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ প্রামেত্মও কিশোরগঞ্জ এলাকাটি কাটাখালী নামে সমধিক পরিচিল ছিল। এ থেকে ধারণা করা হয় উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই কিশোরগঞ্জ এর নামকরণটি হয়েছে। তাছাড়াও জনশ্রম্নতি রয়েছে কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ মেলাবাজার এলাকার বিখ্যাত প্রামাণিক পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণ দাস প্রামাণিকের ৬ষ্ঠ পুত্র ব্রজ কিশোর প্রামাণিক নরসুন্দা নদীর দুই তীরে ‘গঞ্জ’ বা হাট প্রতিষ্ঠা করেন। সে থেকে ব্রজ কিশোর প্রামাণিকের ‘কিশোর’ এবং প্রতিষ্ঠিত ‘গঞ্জ’ এ দুইয়ের সমন্বয়ে জনপদটির নাম কিশোরগঞ্জ হয়েছে।

উপজেলার ভৌগলিক অবস্থানঃ

ভৌগলিকভাবে ২৪ ২১/ এবং ২৪ ৩২/ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০ ৪২/ ও ৯০ ৫২/ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার অবস্থান। উপজেলাটির আয়তন ১৯৩.৭৩ বর্গ কি.মি.। উপজেলাটির উত্তরে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলা, দক্ষিণে পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদী উপজেলা, পূর্বে করিমগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে হোসেনপুর উপজেলার অবস্থান।

উপজেলার ইতিহাসঃ

অনেক চেষ্টার পরও কিশোরগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠার তারিখ জানা সম্ভব হয়নি। তবে এটুকু জানা যায়, ১৮৬০ খ্রিঃ কিশোরগঞ্জ মহুকুমা প্রতিষ্ঠার সময় এর ০৩টি থানার নাম ছিল কিশোরগঞ্জ, নিকলী, বাজিতপুর। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১৮৪৫ খ্রিঃ থেকে ১৮৬০ খ্রিঃ এ ১৫ বছরের যে কোনো এক সময় কিশোরগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ৮০’র দশকে প্রথম দিকে এ উপজেলাটি প্রথমে মানোন্নীত থানা এবং পরে ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রম্নয়ারী তারিখে উপজেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। 

উপজেলার ইতিহাসঃ

অনেক চেষ্টার পরও কিশোরগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠার তারিখ জানা সম্ভব হয়নি। তবে এটুকু জানা যায়, ১৮৬০ খ্রিঃ কিশোরগঞ্জ মহুকুমা প্রতিষ্ঠার সময় এর ০৩টি থানার নাম ছিল কিশোরগঞ্জ, নিকলী, বাজিতপুর। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১৮৪৫ খ্রিঃ থেকে ১৮৬০ খ্রিঃ এ ১৫ বছরের যে কোনো এক সময় কিশোরগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ৮০র দশকে প্রথম দিকে এ উপজেলাটি প্রথমে মানোন্নীত থানা এবং পরে ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রম্নয়ারী তারিখে উপজেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

উল্লেখ্যযোগ্য স্থান বা স্থাপনা: ঐতিহাসিক স্থান বলতে এ উপজেলার পাতুয়াইর গ্রামে কবি চন্দ্রাবতীর বাড়ী, বত্রিশ প্রামাণিকের দিঘী ও বাড়ীর ধ্বংশাবশেষ, হয়বতনগর জমিদার বাড়ী, বৌলাই জমিদার বাড়ী, শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক রথখলার ময়দান, আখড়া বাজারস্থ শ্রী শ্রী শ্যাম সুন্দর লক্ষ্মী নারায়ণ আখড়া, দেশের সর্ববৃহৎ শোলাকিয়া ঈদগাহ্ মাঠ, সর্ব প্রাচীন পাগলা মসজিদ, নিজামশাহ এর মাজার  ও মসজিদ, যশোদলের রাজা গোবর্ধন কালিকাবাড়ী, পুরানথানাস্থ শহীদি মসজিদ, বিংশ শতকের প্রতিষ্ঠিত আলীম দাদ খান লাইব্রেরী (বর্তমান পাবলিক লাইব্রেরী)।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান/সদস্যদের নামঃ

জনাব ডাঃ মোঃ আবদুল হাই

চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, কিশোরগঞ্জ সদর।
স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-ভরাটি, ইউনিয়ন-বৌলাই, কিশোরগঞ্জ সদর।
বর্তমান ঠিকানাঃ অর্চি মেডিকেল হল, পুরাণথানা, কিশোরগঞ্জ।

সদস্যঃ

১। জনাব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কিশোরগঞ্জ সদর।
২। জনাব মোঃ শেখ সেলিম কবীর, ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, কিশোরগঞ্জ সদর।
৩। বেগম কামরুন্নাহার লুনা, ভাইস চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, কিশোরগঞ্জ সদর।
৪। জনাব মোঃ আবু তাহের মিয়া, মেয়র কিশোরগঞ্জ পৌরসভা।
৫। জনাব মোঃ মোশারফ হোসেন, চেয়ারম্যান রশিদাবাদ ইউপি।
৬। জনাব মোঃ আঃ রাজ্জাক, চেয়ারম্যান, লতিবাবাদ ইউপি।
৭। জনাব মোঃ মফিজ উদ্দিন, চেয়ারম্যান, মাইজখাপন ইউপি।
৮। জনাব মোঃ লিয়াকত আলী, চেয়ারম্যান, মহিনন্দ ইউপি।
৯। জনাব মোঃ জাহেদ মিয়া, চেয়ারম্যান, যশোদল ইউপি।
১০। জনাব মোঃ আওলাদ হোসেন, চেয়ারম্যান, বৌলাই ইউপি।
১১। জনাব মোঃ লূৎফুল বারী খোকন, চেয়ারম্যান, বিন্নাটি ইউপি।
১২। জনাব মোঃ ইসমাইল হোসেন বাবুল, চেয়ারম্যান, মারিয়া ইউপি।
১৩। জনাব এ.বি সিদ্দিক খোকা, চেয়ারম্যান, চৌদ্দশত ইউপি।
১৪। জনাব মোঃ মুছলেহ উদ্দিন, চেয়ারম্যান, কর্শাকড়িয়াইল ইউপি।
১৫। জনাব মোঃ ফজলুর রহমান বজলু, চেয়ারম্যান, দানাপাটুলী ইউপি।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলীঃ
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক আর্মি নৃশংসভাবে ৩৬০জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে জশাদলের বরইতলাতে।

উল্লেখ্যযোগ্য স্থান বা স্থাপনাঃ

ঐতিহাসিক স্থান বলতে এ উপজেলার পাতুয়াইর গ্রামে কবি চন্দ্রাবতীর বাড়ী, বত্রিশ প্রামাণিকের দিঘী ও বাড়ীর ধ্বংশাবশেষ, হয়বতনগর জমিদার বাড়ী, বৌলাই জমিদার বাড়ী, শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক রথখলার ময়দান, আখড়া বাজারস্থ শ্রী শ্রী শ্যাম সুন্দর লক্ষ্মী নারায়ণ আখড়া, দেশের সর্ববৃহৎ শোলাকিয়া ঈদগাহ্ মাঠ, সর্ব প্রাচীন পাগলা মসজিদ, নিজামশাহ এর মাজার  ও মসজিদ, যশোদলের রাজা গোবর্ধন কালিকাবাড়ী, পুরানথানাস্থ শহীদি মসজিদ, বিংশ শতকের প্রতিষ্ঠিত আলীম দাদ খান লাইব্রেরী (বর্তমান পাবলিক লাইব্রেরী)।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গনহত্যা স্থানঃ জশাদলের বরইতলা।

ধর্মীয় প্রতিস্ঠানঃ মসজিদ ২৪৫,মাজার ১টি, মন্দির ২১, গীর্জা ১টি, উল্লেখ্যযোগ্য শহীদি মসজিদ,পাগলা মসজিদ, হাইবাংনগর মসজিদ, কটিয়ারচর নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার ।

জনসংখ্যাঃ ৩০০৩৩৭; পরুষ ৫১.৫২%, মহিলা ৪৮.৪৮%; মুসলিম ৮০%, হিন্দু১৮%, খ্রীস্টান ০.৫%,অন্যান্য ১.৫%।

স্বাক্ষরতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ
গড় স্বাক্ষরতা ২৮.৩০%; পুরুষ ৩৩.৯%, মহিলা২২.৩%

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ
কলেজ ৫টি, উচ্চ বিদ্যালয় ২৯টি, কারিগরী প্রতিষ্ঠান ১টি, মাদ্রাসা ৬৬টি,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯১টি,বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৬;উল্লেখ্যযোগ্য পুরনো প্রতষ্ঠান হল কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ,সরকারি মহিলা কলেজ।

সাংস্কৃতিক সংগঠনঃ
ক্লাব এবং লাইব্রেরী ১৫টি , সাংস্কৃতিক সংগঠন ১৫টি,সিনেমা হল৬টি,শিক্ষা সংঘঠন ১০টি।

প্রধান পেশাসমূহঃ
কৃষি ৩৫.৭৭%,শিল্পকারখানা ১.২২%,কৃষি মজদুরি ১৭.৫৬%,দিনমজুর ৩.৪১%, ব্যবসায় ১৫.২২%, যানবাহন ৪.৯৭%, চাকুরী ৮.৭২%, অন্যান্য১১.৫৬%,স্থাপনা ১.৫৭%।

জমির ব্যবহারঃ

মোট চাষ উপযোগী জমির পরিমান ১৩৭৬৬হেক্টর,খাস জমি ৬৯ হেক্টর; এক-ফসলী ১৭.৬৫%,দ্বি-ফসলী ৬০%, ত্রিফসলী ২২.৩৫%; সেঁচের আওতাভুক্ত জমি ৩২৩৯ হেক্টর।

জমির মূল্যঃ প্রথম মানের ০.০১ হেক্টর জমির মূল্য প্রায় ১২০০০ টাকা।
প্রধান শস্য ধান,পাট,গম,আলু,সরিষা,পেঁয়াজ়,বেগুন,পান,সবজি।
বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত শস্য নীল, তিসি, কাউন, অড়হর।
প্রধান ফল আম,কাঁঠাল,কলা,লিচু,পেয়ার ও কাল জাম।

মাছ চাষ,পশুপালন, পোল্ট্রিঃ

মাছের খামার ৪৩টি, পোল্ট্রি ৬৬টি, হ্যাচারী ১০টি।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ পাঁকা রাস্তা ৯৫ কি.মি., মাটির রাস্তা ৯৮৫কি.মি., রেলওয়ে ১৮কি.মি.;রেল স্টেশন ৩টি,বাস টার্মিনাল ৪টি। ঐতিহ্যবাহী যানবাহন পাল্কি,ঘোড়ার গাড়ি।এই যানবাহনগুলো বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায়।

শিল্পকারখানাঃ টেক্সটাইল মিল ৩টি, রাইস মিল ৩টি, স’মিল ১৫টি, হোমিওপ্যাথি কারখানা ১০টি, বরফ কল ৬টি, ওয়েল্ডিং ৩৫, প্রিন্টিং প্রেস১৮ টি।

কুটির শিল্পঃ কাঁঠের কাজ ২৩৫, স্বর্ণকার ৭৫,কামার ৩০, কুমোর ৪৫।

হাট, বাজার,মেলাঃ  মোট হাট বাজার ৩২টি,তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পুরনো থানা বাজার,কাচারী বাজার,বড় বাজার,সাদুল্লা বাজার,নীলগঞ্জ বাজার,লক্ষীগঞ্জ বাজার,বাউলাই বাজার,জিপ্সাই বাজার; মেলা ৫(ঝুলুন মেলা,বৈশাখী মেলা,কৃষি মেলা,বই মেলা ও শিশু মেলা)।

প্রধান রপ্তানীজাত পণ্য পাট ও চামড়া।

এন.জি.ও কার্যক্রমঃকার্যত গরুত্তপূর্ন এন.জি.ও গুলো হচ্ছে ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, UNDP, গ্লোবাল ভিলেজ।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি, স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল ৫টি,পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০ টি এবং মাতৃত্ব কেন্দ্র ১টি।