কালাগলা মানিকজোড়, Black-necked Stork, Ephippiorhynchus asiaticus, বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিযায়ী পাখি। কালাগলা মানিকজোড় প্রবাল লাল-পা ও কালো ঠোঁটের জলচর পাখি। দৈর্ঘ্য ১৩৫ সেমি, ডানা ৬০ সেমি, ঠোঁট ৩১ সেমি,পা ৩২ সেমি, লেজ ২৭ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক কালো-ও-সাদা; দেহের নিচের দিক সাদা; মাথা, ঘাড়, ডানা-ঢাকনি ও লেজ নীল, বেগুনি এবং সবুজের উজ্জ্বলতাসহ কালো; কাঁধ-ঢাকনি ও দেহের পিছনের অংশ একদম সাদা; সাদা ডানার উভয়পৃষ্ঠে প্রশস্ত কালো ফিতা; বুক, পেট ও লেজতল-ঢাকনি সাদা; লম্বা কালো ঠোঁটের নিচের অংশ উলটো বাঁকানো; গলথলি ও চোখের পাতা অনুজ্জ্বল বেগুনি; এবং লম্বা পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল। চোখের রঙ ছাড়া ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। চেলের চোখের রঙ বাদামি ও মেয়ের হলুদ।

স্বভাবঃ কালাগলা মানিকজোড় নিচু এলাকার জলাভূমি, ন্দী, বিল ও প্যারাবনের জলায় বিচরণ করে; সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় থাকে। অগভীর পানিতে জলজ উদ্ভিদে খোলা ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ ও চিঙড়ি জাতীয় প্রাণি। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্রজননকালে ভারতে পতিত বা আবাদি জমির মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা বড় গাছের ডালে ডালপালা, খড় ও পাতা দিয়ে বড় বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৫ টি, মাপ ৭.২×৫.৩ সেমি।

বৈজ্ঞানিক নামঃ Ephippiorhynchus asiaticus (Latham, 1790)
সমনামঃ Myctaria asiatica Latham, 1790
বাংলা নামঃ কালাগলা মানিকজোড়,
ইংরেজি নামঃ Black-necked Stork.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্যঃ Animalia
বিভাগঃ Chordata
শ্রেণীঃ Aves
পরিবারঃ Ciconiidae
গণঃ Ephippiorhynchus;
প্রজাতিঃ Ephippiorhynchus asiaticus (Latham, 1790)

বিস্তৃতিঃ কালাগলা মানিকজোড়কে ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিযায়ীপাখি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অবস্থাঃ কালাগলা মানিকজোড় বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্যশ্রেণিতে রয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিযায়ী পাখি। উনিশ শতকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ছিল; এখন নেই । অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও ইন্দোচিনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

বাংলাদেশে কালাগলা মানিকজোড়ের ইতিহাসঃ প্রাণিবিজ্ঞানী সিমসন ১৮৯০ সালে ঢাকা নগরে এ পাখি দেখেছিলেন এবং ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাখিটির অস্তিত্ব ছিল। তার ৬২ বছর পর ২০১০ সালের এপ্রিলে হাকালুকি হাওরের নাগোয়া-ধলিয়া বিলে এক জোড়া কালাগলা মানিকজোড় দেখা গেছে। একই সময়ে সুন্দরবনে এ প্রজাতির আরও একটি পাখি দেখা গেছে। এছাড়া হাওরে ধৃত একটি কালাগলা মানিকজোড় পাখি এলাকাবাসীর কবল থেকে উদ্ধার করে বন বিভাগ সেইসময়ে সাফারি পার্কে স্থানান্তরিত করেছে।

বিবিধঃ মানিকজোড় (Ciconiidae) পরিবারে পৃথিবীতে সর্বমোট ২৬ প্রজাতির পাখি আছে, যার আট প্রজাতি একদা বাংলাদেশে দেখা যেত। এর মাত্র দুটি প্রজাতি এখন এ দেশে বাস করে—এশীয় শামখোল (Asian Openbill) ও ছোট মদনটাক (Lesser Adjutant)। সুত্রঃ anupsadi.blogspot.com