নীল চাষের নির্মম ইতিহাস বিজড়িত হোসেনপুরের ঐতিহাসিক নীলকুঠি বাড়ির ধবংসাবশেষ আজও কালের সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার (সাহেবের গাঁও) এলাকায় নীলকরদের বাড়ি এবং টান সিদলা গ্রামে নীলকুঠির কার্যালয় ও পুরাতন পুকুরটি নীলকর সাহেবদের নানা স্মৃতি আজও বহন করে চলেছে। বাংলার তদানীন্তন সুলতান আলা উদ্দিন হোসেন শাহের নামানুসারে হোসেনপুর পরগনার ব্রহ্মপুত্র নদের পুর্ব তীরে গড়ে উঠেছিল নীলকুঠি। আনুমানিক ১৭৩০ থেকে ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নীলকুঠি প্রতিষ্ঠা করে নীলের আবাদ শুরু করে। এক সময় এখান থেকে ইংল্যান্ডে প্রচুর নীল রপ্তানি করা হতো। প্রথম দিকে ইংরেজরা নীলের ব্যবসায় লাভ করলেও পরে ব্যবসায় ধস নেমে আসে।

নীলকর ওয়াইজস্টিফেন্স ছিলেন এর মালিক ও ব্যবসায়ী। প্রাচীন ঢাকার আরমানিটোলার আর্মানিয়ান ইংরেজ খ্রিষ্টান আর্মোনিয়ান আরাতুন দুই কন্যা ও তার আত্বীয়-স্বজনদের নিয়েই হোসেনপুরে নীলকুঠির ব্যবসা চালু করেন। তখনকার সময়ে এ অঞ্চলে বাধ্যতামূলকভাবে চাষিদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো নীল চাষ। জানা যায়, ইংরেজ আমলে ফ্রান্সের অধিবাসী মাইকেল প্যাটেল হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার (সাহেবের গাঁও) এলাকায় কারুকার্যময় একটি বাড়ি তৈরি এবং এলেনবেথ হেনসন জমিদার আমলে এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রন করতেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর এ বাড়িটি কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক সমবায় অফিসার মরহুম উম্মেদ আলী খরিদ সূত্রে মালিকানা লাভ করেন। বাড়িটি দেখতে খুবই সুন্দর। বর্তমান বাড়িটি আমেনা মঞ্জিল হিসেবে পরিচিত। টান সিদলা বাবুর বাজার এলাকায় নীলকর কার্যালয়ের ধংসাবশেষ ও কার্যালয়ের পূর্ব দিকে সে আমলের একটি পুকুর রয়েছে। সে সময় এ অঞ্চলে শুকনা মওসূমে পানির সংকট থাকায় নীল চাষের সুবিধার্থে বিরাট পুকুর খনন করা হয়। এলাকাটি আজও নীলের কুঠি হিসেবেপরিচিত। হোসেনপুরের সিদলা, পিতলগঞ্জ, হারেঞ্জা, চৌদার, রানী খামার, সাহেবেরচর এলাকায় আজও ইংরেজ পাদ্রী, পিতল বা পিতল সহ অন্যান্য খ্রিষ্টান নীলকরদের কিংবদন্তি কাহিনী এ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। – পোষ্টটি সংগ্রহিত