কিশোরগঞ্জ পৌরসভার প্রায় দেড় কোটি টাকার উন্নয়নকাজ ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চক্রের বাধার মুখে দরপত্র জমা দিতে পারেননি সাধারণ ঠিকাদারেরা। দরপত্র জমা দেওয়ার সময় গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশের সামনে একাধিক ঠিকাদারের দরপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে ওই চক্র।

পৌরসভা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণ করতে গত ১৯ জুলাই দরপত্র আহ্বান করে পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার ছিল এক কোটি ৪০ লাখ টাকার এই প্রকল্পের দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। ঠিকাদারেরা দরপত্র জমা দিতে প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরা পৌরসভার আশপাশে ব্যারিকেড তৈরি করেন। খবর পেয়ে থানার পুলিশ পৌরসভায় অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার দিকে ঢাকার দেশ ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. খায়রুল মোমেন উজ্জ্বল দরপত্র জমা দিতে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিএনপি-সমর্থিত যুবকেরা পুলিশের সামনে তাঁর দরপত্র ছিনিয়ে নেন।

উজ্জ্বল অভিযোগ করেন, বেলা ১১টার দিকে তিনি কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় দরপত্র দাখিল করতে যান। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী ও বিএনপি-সমর্থিত যুবকেরা আওয়ামী লীগের এক নেতার নির্দেশে তাঁকে দরপত্র দাখিলে বাধা দেন। একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনে দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রদলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা নিজেদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি করে নেন। তাই ১৫টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়েছে মাত্র তিনটি। একজন ঠিকাদার জানান, ‘শনিবার গভীর রাতে প্রভাবশালী ঠিকাদারেরা বৈঠক করেন। বৈঠকে ছাত্রলীগের এক নেতার নামে সর্বোচ্চ দর উল্লেখ করে দরপত্র জমা দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতকাল স্থানীয় এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র দাখিল করেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সালাম জানান, ‘আমার সামনে কিছু ঘটেনি। তবে দরপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তোজাম্মেল হক জানান, ‘লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে জমাকৃত দরপত্র খোলার পর সঠিক বিষয়টি জানা যাবে। তারপর বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

-প্রথম আলো