imageযে কোন নারীরই নারী জীবনের পূর্ণতার স্বাদ খুঁজে পায় মা হওয়ার মাধ্যমে।সেক্ষেত্রে অবশ্য আমি আমার জন্মের সময় আমার মায়ের জঠর যন্ত্রণা দেখি নি।দেখার কথাও না।কবি পুলক বন্দোপাধ্যায়ের কথায় বলতে গেলে-‘মা হওয়া নয় মুখের কথা,মাকে দেখেই বুঝি’। কিন্তু পেশাগত কারণে অসংখ্য মা কে জঠর যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছি, দেখেছি অজ্ঞানতার মাঝেও মা হওয়া,দেখেছি প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়া ও প্রতিকূলতাকে মাথায় রেখে মা হওয়ায় যন্ত্রণা ও নিদারুণ কষ্ট। চোখের সামনে ভুমিষ্ঠ শিশুর মৃত্যু। কিন্তু এসব মৃত্যুতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোহায় দেওয়া হয় বিধাতাকে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দায়ী আমাদেরই অসচেতনতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু সম্প্রতি ২৮ অক্টোবর রাতে ফেনীর সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা জেলেপাড়ার হিন্দুবাড়িতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ঘটনায় প্রসূতি তুলসী রাণী দাস(১৮)এর উপর অমানবিক আচরণ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারা যায় না।নির্মম হামলায় তুলসী রানী মৃত সন্তান প্রসব করেন।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাত মাসের প্রসূতি তুলসীর জীবন এমনিতেই সংঙ্কটাপন্ন এবং আর কোনওদিন মা হতে পারবেন না তিনি। এই নির্মম মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করবো? কি দোষ ছিলো অনাগত অপরিণত শিশুটির? কি দোষ ছিলো তুলসী রানীর? একটি নববিবাহিতা মায়ের মাতৃত্বের অপূর্ণতার কষ্ট কি দিয়ে পূরণ হবে?

একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে শুনেছি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ড ও বিভীষিকাময় নির্যাতনের কথা।শুনেছি মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যুর কথা।বাবার সামনে কন্যার সম্ভ্রম হারানোর বেদনাদায়ক কষ্টগাঁথা।গলিত লাশের গন্ধ আর খন্ডিত লাশের বিকৃত অংশগুলোর কথা। যেটা ছিল বাঙালী ও বাংলাদেশের জন্য একটা কালো অধ্যায়। কিন্তু সে অশুভ শক্তিকে তো বাংলার মুক্তিকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাড়িয়ে ছিল প্রায় চুয়াল্লিশ বছর হলো। কিন্তু এ বাংলাদেশ তো আমরা কখনো প্রত্যাশাও করিনি!তাহলে কি বলবো এই অশুভ শক্তি বিতারিত হয়নি? নাকি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ভূতের কান্ড এগুলো?

এই জঘন্য অপরাধের কি বিচার হবে না? দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমরা কি সবাই মিলে এই ঘৃন্য অপকর্মের বিচার চাইতে পারি না? আমরা সবাই মিলে কি তুলসী রানীর জীবনে স্বাভাবিক সুখ ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সহযোগিতার হাতটুকু বাড়িয়ে দিতে পারি না? হয়তো সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে তুলসীর জীবন কিছুটা হলেও বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।তবে সর্বোপরি এ অক্ষমতা তোমার নয় তুলসী!এ অক্ষমতা জাতির!কারণ আমরা কোন না কোন মায়ের সন্তান হয়েও আমাদের মধ্যে সেই মানবিকতাবোধটুকু জাগ্রত হয়নি।তোমার মাতৃত্বের ক্ষমতা যারা নষ্ট করেছে,তারা প্রমাণ করেছে মানুষ হিসেবে আমরা কতটুকু পশুত্ব অর্জন করেছি ও মানবিকতার স্খলনে প্রতিবাদে কতটুকু অক্ষম হয়েছি !

সত্যি নিজেদেরকে মানুষ ভাবতে কষ্ট হয়।কি করে মানুষ এতটা অমানবিক হয়? তবু আশায় বুক বেঁধে আছি,মানবিকবোধ সম্পন্ন গণমানুষের ভালবাসায় তুলসী রানী ফিরে পারে নতুন একটি জীবন।নাকি এইটুকুও আশা করতে পারি না, রাষ্ট্র বা বিবেকবান মানুষের কাছে?

সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী, ঢাকা।