কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজের রায় লিখতে সমস্যা হওয়ায় গত সোমবার রাতে তিনি বাসার পাশের স্টেডিয়ামে আয়োজিত মাদকবিরোধী উন্মুক্ত কনসার্ট বন্ধের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে পুলিশ হঠাৎ কনসার্ট বন্ধ করে দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ক্ষুব্ধ দর্শক-শ্রোতারা। এতে পুলিশের ১০ জন সদস্যসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

উদ্যোক্তা সংগঠন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শহরের মাদকবিরোধী সংগঠন ‘উড়ন্ত পায়রা’র ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে আলোচনা সভা ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আলোচনা সভা শুরু হয়। শিক্ষক সুধেন্দু বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে রাত আটটার দিকে কনসার্ট শুরু হয়। সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় ও ঢাকা থেকে আসা শিল্পীরা। রাত পৌনে নয়টার দিকে গান শুরু করেন ঢাকার শিল্পী পথিক নবী। ওই সময় জেলা ও দায়রা জজ আ ম ম সাঈদ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের নাজির মো. নূরুল ইসলামকে দিয়ে কনসার্ট বন্ধের মৌখিক নির্দেশ পাঠান। দ্বিতীয় গানের আগেই আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপে পুলিশ কনসার্ট বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দর্শক-শ্রোতারা পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ও ভাঙচুর শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দর্শকদের ওপর লাঠিপেটা করে পুলিশ। ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে পুলিশের ১০ জন সদস্যসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন।

জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘জেলা জজ সাহেব তাঁর অসুবিধার কথা জানালে উদ্যোক্তাদের কম আওয়াজে রাত ১১টার মধ্যে কনসার্ট শেষ করতে বলা হয়েছিল। আলোচনা সভার পর আমরা চলে আসার পর কী হয়েছে, বিস্তারিত জানা নেই।’আইনজীবী মো. এমদাদ হোসেনসহ একাধিক আইনজীবী বলেন, প্রশাসন ও জেলা পুলিশের অনুমতি নিয়ে বিশাল কনসার্ট হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ার এখতিয়ার জেলা জজের নেই।

উড়ন্ত পায়রার সভাপতি রায়হান কায়সার বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কনসার্টের আয়োজন করেছিলাম। এভাবে কনসার্ট বন্ধ করে দেওয়াটা দুঃখজনক।’কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, ‘রাত ১১টা পর্যন্ত কনসার্ট অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি থাকলেও জেলা ও দায়রা জজের নির্দেশে রাত ১০টার দিকে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

জেলা ও দায়রা জজ বলেন, ‘বাসায় মামলার রায় লিখতে বসেছিলাম। কনসার্টের উচ্চ শব্দের কারণে লিখতে পারছিলাম না। জেলা প্রশাসককে জানানোর পরও কনসার্ট বন্ধ না হওয়ায় বিচারিক হাকিম আদালতের নাজিরকে মৌখিক নির্দেশ দিয়ে স্টেডিয়ামে পাঠানো হয়।’

-prothm alo