প্রায় ৩৫ বছর আগে আমি ঢাকার কাছেই পুবাইল রেলস্টেশনের দেয়ালে একটা জীর্ণ বিজ্ঞাপন দেখে খুব অবাক হই। সেটা ব্রিটিশ আমল থেকেই ওখানে রয়ে গেছে। তাতে চায়ের উপকারিতা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, চা পান করলে টাইফয়েড, বসন্ত, কলেরা, আমাশয়সহ সব ধরনের রোগের উপশম হয়! সে যুগে ইংরেজরা বিনা পয়সায় চা পান করিয়ে ও নানা রকম বিজ্ঞাপন দিয়ে এই বিশেষ পানীয় পানে মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করত। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কলেরা-টাইফয়েড হয়তো আটকায় না, কিন্তু চা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও দেহের জীবকোষের ক্ষয় রোধ করে।

কোনো কোনো গবেষণা অনুযায়ী, দাঁতে পোকা ধরা রোধ, রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখা এবং সম্ভবত হূৎপিণ্ডে রক্তবাহী ধমনি-শিরার উপকার করার ক্ষেত্রে চা উপকারী। আমরা অনেকেই দুধ মিশিয়ে চা পান করি। সেটা কতটা ভালো? এ নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে বেরিয়েছে। পূর্ণ বয়স্ক ১৬ ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। তাঁদের লাল-চা, দুধ-চা ও শুধু গরম পানি পান করতে দেওয়া হয়। দেখা গেছে, লাল চায়ে ধমনির কার্যক্রম তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু দুধ মেশালে চায়ের সুফল একেবারে ভোঁতা হয়ে যায়। গবেষকেরা বলছেন, রক্ত পরিবহনতন্ত্রের জন্য চায়ের উপকারিতার বিপরীতে কাজ করে দুধ। এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক টাইমস-এর বিজ্ঞান ক্রোড়পত্রের (১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২) মন্তব্য হলো, ‘গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী দুধ মেশালে চায়ের স্বাস্থ্যকর কিছু গুণ কমে যেতে পারে।’

এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, কয়েক বছর আগে অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে ট্যানিন নামের যে উপাদান রয়েছে, তা খাদ্যনালির (গলার) ক্যানসারের একটি কারণ হতে পারে। আর চুলায় চা পাতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিলে চায়ের ট্যানিন বেশি বের হয়। সাধারণ চায়ের দোকানে এ রকম করা হয়। এই চায়ে কিছু দুধ দরকার। কারণ, দুধ চায়ের ট্যানিনকে আঁকড়ে ধরে এবং তাকে শরীরে মিশতে দেয় না। এ জন্য বেশি জ্বালের চায়ের ক্ষেত্রে দুধ মেশালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। আর সাম্প্রতিক গবেষণার ফল অনুযায়ী, হালকা জ্বালের রং চা-ই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

– ছুটির দিনে