হাওর-বাঁওর নদ-নদী,খাল বিল,পরিবেষ্টিত কিশোরগঞ্জ জেলা।জেলার প্রায় অর্ধেকাংশই ভাটি এলাকায় তো বটেই তাছাড়া প্রায় সারা বছরই হাওর এলাকায় যোগাযোগের  একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা।তবে এখন চলছে যান্ত্রিক সভ্যতার যুগ।আর পানিতেও লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া।পানিতে চলমান নৌকার শতকরা পচানব্বই ভাগই হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা।যাত্রী কিংবা মালামাল পরিবহনের অপেক্ষায় ঘাটে ঘাটে বাধা থাকে যন্ত্রচালিত নৌকা।সুনশান নদীতে বিকট আওয়াজ করে প্রচন্ড ও ঢেউ তুলে চলাচল করে এসব নৌকা।ইঞ্জিনচালিত নৌকার বিকট আওয়াজে নদী কিংবা হাওরের দুই পাড়ের গ্রামবাসীদের কান ঝালাপালা।

আর নৌকা চলাচলের ফলে সৃষ্ট ঢেউয়ের আঘাতে দু’পারের গ্রামগুলো ভয়াবহ ভাঙনের হুমকির সন্মুখীন।অথচ মাত্র দু’তিন দশক আগেকার কথা।শরৎ কিংবা বর্ষা হেমন্ত কিংবা বসন্ত সব ঋতুতেই জেলা হাওর বাঁওর নদীতে দেখা যেত রঙ বেরং এর পাল তোলা নৌকা।বাতাসের সাহায্যে নৌকার গতিকে বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হতো ছোট বড় নানা আকৃতির নানা বর্ণের পাল।নদীতে কিংবা বর্ষায় হাওরের পানিতে ভাসত শত শত পাল তোলা নৌকা।আর মাঝি মাল্লারা পাল তুলে দিয়ে নৌকার হাল ধরে বসে থাকত।বিভিন্ন আকৃতির এবং বর্ণ বৈচিত্র্যে ভরা সব পাল।বাতাসের অনুকূলে ধেঁয়ে চলত নৌকা।মাঝিদের গলায় বাজত জারি-সারি কিংবা ভাটিয়ালী গানের সুর।সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে কিংবা এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে পৌঁছার প্রধান অবলম্বন ছিল পাল তোলা নৌকা।পালে কাজ না হলে গুন তো ছিলই।শত শত মাঝি তখন এই পেশার উপর নির্ভর করেই তাদের জীবিকা অর্জন করত।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পাল তোলা নৌকার প্রচলন প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে।নদিতে কদাচিৎ পালের নৌকার দেখা মেলে,হাওর ও নদীতে পাল তুলে নৌকা চলাচলের দৃশ্য এখন বিরল।পাল তোলা নৌকা এখন কেবলই স্মৃতি।

লিখেছেনঃ মোঃ মাহতাব উদ্দিন