সারা বিশ্ব জুড়ে সভ্যতার যে ইতিহাস পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই ধর্ম কেন্দ্রিক। ভারত বর্ষে তো বটেই বিশ্বের প্রাচিন ধর্ম গুলোর একটি সনাতন হিন্দু ধর্ম। তার পরে জৈন, বৌদ্ধ আর সবশেষে শিখ ধর্ম। আরবে প্রধানত ইহুদি, খৃষ্টান আর সবশেষে ইসলাম। আমি ধার্মিক নই, নাস্তিকও নই ; আবার ধর্ম নিয়ে খুব বেশি পড়িও নি। ছোটবেলা থেকে দেখা কিছু ধর্মাচরন আমার মনে যে ভাবে প্রতিভাত হয়েছে, অকৃত্তিম ভাবে সামান্যও না বাড়িয়ে আমি এখানে তা তুলে ধরবো। কাজেই এটা কোন বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন বা অভিমত নাও হতে পারে, কিন্তু ধর্মগুলো সম্পর্কে সাধারন্যে লালিত ধারনার প্রামান্য এক বয়ান হবে নি:সন্দেহে। আমি শুধু এই উপমহাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠদের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, শিখ আর খৃষ্টান ধর্ম নিয়ে আলোচনা করবো।

উতপত্তি কাল অনুযায়ি হিন্দু ধর্ম থেকে শুরু করছি। এই ধর্মে ব্রম্মার জগত সৃষ্টি, বিষ্ণুর প্রতিপালন আর শিবের তা ধংসের কথা শুনেছি। লক্ষ করুন ৩ ভাগের ১ ভাগই ধংস বিষয়ক। রাবনের সিতা হরন, রাম-লক্ষনের রাবন বধ ইত্যাদি সবই যুদ্ধ বিগ্রহের কাহিনি। ছোট বেলা থেকেই পুজা মন্ডপে যাই; সুযোগ পেলে ঢাকের বাদ্যে নাচানাচিও করি। প্রধান প্রধান দেব দেবি গুলোর চেহারা এবং সাজসজ্জা দেখেছি বহুভাবে। মা দুর্গা দেখতে সুশ্রি, কিন্তু ১০ হাতের বেশ ক’টা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। আর পায়ের নিচেও বিভৎস রক্তাক্ত মহিষাসুর। মা কালির চেহারা ভয়ঙ্কর, লাল জিভ ঝুলে আছে; গলায় আবার নরমুন্ডের মালা। আর পায়ের নিচে বধকৃত তারই স্বামি পরাক্রমশালি স্বয়ং শিব; কি সাংঘাতিক ! গনেষকে দেখে দারুন বিস্ময়কর এক অবতার মনে হবে। কিন্তু তার মাথা নাকি শিব রাগের চোটে এক কোপে কেটে ফেলেছিলেন; পরে হাতির বাচ্চার মাথা এনে উদ্ধার করেছেন। এখানে একেবারে ডবল নৃসংসতা। প্রথমে নিজ পুত্রের মুন্ডুপাত, তার পরে আবার অবলা প্রানি হাতির। আপনি যদি একটু এড়িয়ে না গিয়ে সবিস্তারে কাহিনিটি বলেন, তাহলে আনেক বাচ্চাই প্রশ্ন করে বসবে, গনেষের তো মাথা হলো, কিন্তু হাতির বাচ্চাটার কি হলো ? কারন বা ব্যাখ্যা যাই হোক, বিষয়গুলোতে নৃসংসতা স্পষ্ট। এসব থেকে প্রতিয়মান, মানবতাবাদি নির্যাস নয়, ঐ সব হানাহানির বিষয় গুলোই হিন্দু ধর্মে বেশি চর্চিত। অথচ বেদের মহান বানি স্কুল-কলেজ-মন্দির-আস্তানা-ইন্টার্নেট কোথাও এত চোখে পরবে না। দেখতে-জানতে হলে আপনাকে স্ব-উদ্যোগি হতে হবে।

মহান বুদ্ধের মুর্তিগুলোর দিকে তাকালে এক ধরনের প্রশান্তি বোধ হয়। সম্ভবত ওগুলো গ্রিক শিল্পকলায় প্রভাবিত ভারতিয় গান্ধারি সভ্যতার অবদান। কিন্তু হিন্দুরা বা তান্ত্রিকরা বুদ্ধকে দেবতা মানার পর বুদ্ধের প্রশান্তির সেই চেহারা হারিয়েছে। কারন তান্ত্রিকদের পুজা করা মুর্তিগুলো কিছুটা বিকট বা বিসদৃশ চেহারার; কিন্তু বহির্বিশ্বের মুর্তিগুলো এখনো প্রশান্তিকর। বুদ্ধ ধন-সম্পদের আকাঙ্খা ত্যাগ করতে বলেছেন; অথচ অনেক বুদ্ধ মুর্তি বা ছবিতে আর মন্দিরও সোনা-রুপায় তৈরি বা দামি বর্ন-পোষাকে সজ্জিত। এই জৌলুস ত্যাগি বুদ্ধকে মানায় না। আমি জানি না সঠিক বুঝেছি কিনা, গৌতম বুদ্ধের আদর্শকে আমার ধর্ম নয় বরং নির্বান লাভের উদ্দেশ্যে বোধিজ্ঞান অর্জনের প্রকৃয়া, মনে হয়েছে। কিন্তু মহান সেই জিবনাদর্শ ধর্ম হিসেবেই বেশি পালিত হচ্ছে। এছাড়া আরো কিছু খাপছাড়া নগন্য বিষয় বৌদ্ধ দর্শনকেও পলিউট করছে বলে, আমার ধারনা।

খৃষ্টানদের প্রধান ধর্মিয় উপকরন ক্রসে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ মৃত্যুর নৃসংস অংশটা রয়েছে, যা খৃষ্টানরা সর্বদা স্মরন করছে। ছোটবেলায় দন্দে লিপ্ত মুসলমান-খৃষ্টান ক’জনের মহানুভবতার ইতিহাস-উপাখ্যান ভালো লাগতো। পাশাপাশি ইহুদি-খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের জিহাদের কথাও শুনেছি। মনে দুটোই দাগ কেটেছে ; মহানুভবতার আবার সশস্ত্র যুদ্ধেরও। তাতে আমার মনে হয়, ঐসব ইতিহাস অপরিপক্ক মানসিকতার ইহুদি-খৃষ্টান-মুসলমানদের পরস্পরের শত্রু করতেই বরং বেশি আবদান রাখছে। এমন কি শিক্ষিতরাও ধর্মিয় এই ভেদাভেদ থেকে বেরোতে পারছে না। কিভাবে পারবে ! অধিবাসিদের ধর্মিয় পরিচয়কে সারা বিশ্ব জুরে রাষ্ট্রি্য় ভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে এতো দিন পরেও বিশ্ব রাজনিতিতে ধর্ম ভিত্তিক রেষারেষি কমছে না। পাঠক দয়া করে, এক্ষেত্রে ধর্ম আর মানুষের ধর্মিয় পরিচয়কে গুলিয়ে ফেলবেন না।

ছোটবেলায় জিশুর ক্রুশ বিদ্ধ হত্যাকান্ডের কথা শুনে, আমার ভেতরে প্রচন্ড ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছিলো। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি ভাবতাম ওদের উপরও একই ভাবে প্রতিশোধ নেয়া উচিত। মহান জিশু কিন্তু ওদের ক্ষমা করেছেন; আমাদেরও ক্ষমাশিল হতে বলেছেন। কিন্তু আমার শিশু মনে ক্ষমাশিলতার আহবান নয়, একই রকম প্রতিহিংসাই প্রাধান্য পেয়েছিলো। দেখুন – কিভাবে এমন প্রতিনিয়ত স্মরন করা ধর্মিয় একটা ঘটনা একজন ভিন্ন ধর্মির মনেও জিঘাংসার জন্ম দিয়েছিলো !

আরবে ইহুদি-খৃষ্টানদের সাথে জেহাদ আর ভারতবর্ষে হিন্দু-বৌদ্ধদের হঠিয়ে ইসলাম প্রচারের কথা শুনেছি। কেউ কেউ বলেন, সেই সময় প্রতিরোধ ছাড়া নতুন ঐ ধর্মকে প্রতিপক্ষরা টিকতে দিতো না। নিরস্ত্র-অহিংস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যেমন হিন্দু-মুসলমানদের অত্যাচারে পালিয়ে নেপাল-তিব্বতে চলে গিয়েছিলো । বা এখন যেমন আহমেদিয়ারা মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে কারন যাই হোক, ঐ সব ধর্মযুদ্ধ আজও সাধারন মানুষের মনে বিদ্বেষ-হিংসা ছড়াচ্ছে। লক্ষ্য করুন, আমরা হযরত শাহজালালের সিলেটের হিন্দু রাজা গৌর গোভিন্দার অত্যাচার থেকে বোরহানুদ্দিনের মত সমাজের নিম্ন শ্রেনির মুসলমানদের রক্ষার ন্যায় যুদ্ধের কথা তেমন শুনি না। কিন্তু বাংলায় মুসলমান দখলদার প্রাচিন বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় নালান্দা ধংসকারি বখতিয়ার খিলজির বিজয় গর্ব বেশি করি। আমরা তার নিরিহ বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাযজ্ঞের সেই অপরাধকে গ্রাহ্য করি না। কিন্তু একই নৃসংসতায় স্ব-ধর্মাবলম্বিদের দ্বারা আবার ‘৭১ সালে নিজেরাই আক্রান্ত হই। ইতিহাসের কি নিদারন প্রতিশোধ !

আমরা যতই ইব্রাহিম (আ:) এর পুত্র ইসমাইল (আ:)কে কোরবানি দেবার মধ্যে ত্যাগের মহিমাটি তুলে ধরি, এর আরেক পাশে কিন্তু নৃসংসতাও রয়েছে। আমি অনেককেই কোরবানির পশু জবাই করার সময়ে দুরে সরে থাকতে দেখেছি। যদি স্বাভাবিক ব্যাপারই হতো, তাহলে তো তারা ওটা দেখে কষ্ট পেতোনা। তবে শুধু কোরবানি নয়, যে কোন কারনেই জিব হত্যা নৃসংস। মুহররমে শিয়াদের নিজের শরিরকে আঘাত করার মাঝেও এক ধরনের নৃসংসতা লালিত হয়। একদিকে হাসান-হোসেনের নির্মম হত্যাকান্ডকে স্মরন করে আমরা এজিদ বাহিনির প্রতি প্রতিশোধ পরায়ন হই, আর অন্যদিকে নিজেদের আঘাত করে অপরকেও আঘাত করার জিঘাংসা আমরা অর্জন করি। কারন চাইলেই হুট করে কেউ জিব-জানোয়ার বা মানুষকে আঘাত করতে পারে না। পারে, যখন কোন ভাবে সেটার প্র‍্যাক্টিস হয়। ডোম, সার্জন বা কষাইরা জিবদেহ যেভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে; আমরা সাধারনরা তা পারবো না। ইন্টার্নির সময় কত ডাক্তার মানব দেহ কাটাছেড়া করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে !

ইন্দিরা গান্ধিকে তার শিখ দেহরক্ষিরা ধর্মিয় কারনে হত্যা করেছে, এটা ছোটবেলা থেকেই মনে গেথেছিলো। উইকি ঘেটে দেখেছি সেনাবাহিনি তার নির্দেশেই পবিত্র হরমন্দিরে অভিযান চালায়। আর তাতে বহু ভক্ত আর সেনা সহ শিখ ধর্ম গুরু জারনাইল সিং নিহত হন। ঐ অভিযানের কামানের গোলায় ক্ষতিগ্রস্থ মহান ঐ মন্দিরের ছবি আমাকেও ক্ষুব্ধ করেছে। আবার ঐ উইকি থেকেই জেনেছি পরিশুদ্ধ শিখদের যে ৫ টি উপকরন সাথে রাখার নিয়ম আছে, তাতে ‘কৃপান’ নামের ছোট এক প্রকার তরবারিও আছে। কেন রে বাপু, ধর্মের সাথে হন্তারক ঐ সোর্ডের কি সম্পর্ক! এখানেও উপকরন যোগে অন্য কে আঘাত করার মনোভাব রয়েছে। আর জৈন ধর্ম সম্পর্কে শুধু জানি যে, এটা খানিকটা বৌদ্ধ ধর্মের মতো; বুদ্ধের জন্মের আগে প্রবর্তন হয়েছিলো। এ ধর্মটির ক্রিয়া কলাপের কোন নেতিবাচক দিক দেখার-জানার সুযোগ আমার হয়নি।

আমার ধার্মিক পাঠকগন দয়া করে মনে করবেন না, আমি নাস্তিকদের মতো ধর্মের বিরোধিতা করার মানসিকতা থেকে এসব বলছি। আমার দৃষ্টিতে এসব ধর্মিয় ক্রিয়া কলাপ বর্তমান জামানায়ও আমাদের জিবন ও সমাজের নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। আজকের মানব সমাজের দায়িত্বশিল অংশিদার হিসেবে আমাদের এসব ভেবে দেখতে হবে। ওগুলো যেনো আমাদের পাশবিকতাকে আর কোনভাবেই উসকে না দিতে পারে, সে চেষ্টা করতে হবে। আশা করি, আমার দৃষ্টি ভঙ্গির সঠিক অর্থ আর উদ্দেশ্য আপনাদের বোঝাতে পেরেছি।

আবার এতো সমালোচিত হবার পরেও সমাজ উন্নয়নে ধর্মের ঐতিহাসিক আর নৈতিক অবদান অনস্বিকার্য। সাধারন ভাবে প্রায় সব ধর্মের আবির্ভাবের পরেই সমাজের বিশৃঙ্খলা অনেক কমে গেছে। এটা সভ্যতার অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। আমাদের এই উপমাহদেশের সনাতন হিন্দু ধর্ম এই অঞ্চলের প্রাচিন সিন্ধু সভ্যতাকে অনেক দুর এগিয়ে এনেছে। যার সুত্রপাত ঘটেছিলো ২২ হাজার বছর আগে শক্তি পুজার মধ্য দিয়ে। শক্তি একটি কোয়ালিটি; তাই এই গুন পুজার সঠিক চর্চা আমাদের জিবন ও জগতের মান বাড়াতে পারে। জৈন ধর্মে মানবতাবাদের চর্চার গুরুত্ব বেশি; এই ধর্ম সম্পর্কে এটুকুই জানি ।

বৌদ্ধ ধর্মের গোড়ামি সবচেয়ে কম; এর সুফল আমরা বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশগুলোর মানব সম্পদ উন্নয়নে স্পষ্ট দেখছি। আর শারিরিক, মানসিক, আর্থিক ভাবে দুর্বল-অসমর্থদের শান্তি লাভের সুযোগও এ ধর্মে বেশি। সারা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের আকাঙ্খাই অপুরনিয়। সেই দুষ্কর আকাঙ্খা পুরন করতে যেয়েই মানুষ নিজে এবং সমাজকে সমস্যায় ফেলে। মহান বুদ্ধ জিবে দয়াশিল হতে আর প্রাকৃতিক ভোগাকাঙ্খা নিয়ন্ত্রন করতে নিরামিষভোজি হবার পরামর্শ দিয়েছেন। আবার ধন সম্পদের আকাঙ্খাও ত্যাগ করতে বলেছেন। কাজেই বিহারগুলি সেই অপুরনিয় আকাঙ্খা নিয়ন্ত্রন করে প্রশান্তির জিবন লাভে আরো সহায়ক হতে পারে।

খৃষ্ট ধর্মে যিশুর ক্ষমাশিলতার মহান দৃষ্টান্ত আমাদের সহনশিলতা শেখায়। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা চার্চ গুলো মানব কল্যানে আরো বেশি অবদান রাখতে পারে। এ উপমহাদেশে ইসলাম ধর্মের সমাজিক অবদান অপরিসিম। আমরা জানি, এই উপমহাদেশের হিন্দু সমাজে বর্ন বা শ্রেনি বৈষম্য প্রকট ছিলো। এ কারনেই এতো বিপুল সংখ্যক ভারতিয় ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলো। পরবর্তিতে হযরত শাহ জালালের মতো বুজুর্গরা এদের প্রটেক্টও করেছেন। কেউ কেউ আবার আধিপত্য-দখলের উদ্দেশ্যে অহেতুক ধংস- যজ্ঞেও লিপ্ত হয়েছে। বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ সংস্কৃতি বিনাশ তেমনই দৃষ্টান্ত। কিন্তু উনিশ শতকে মার্কস-এঙ্গেল্সের সমাজতান্ত্রিক মতবাদ রাশিয়া, চিন সহ বহু দেশে যে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলো; সেই একই মহতি প্রকৃয়ায় মুসলমানরা আজ থেকে ৭/৮ শ বছর আগে ভারতে অনেকটাই সফল হয়েছিলো, বলা যায়।

ধর্ম গুলোর যখন আবির্ভাব ঘটেছিলো তখন জ্ঞান-বিজ্ঞান এতো সমৃদ্ধ ছিলোনা। এখন যেমন চাইলেই, কেউ ধর্ম ছাড়াও মানবতাবাদি উন্নত জিবন যাপন করতে পারবে। তখন তা দুহসাধ্য ছিলো। এখনও সমাজের বেশির ভাগ মানুষই ধর্ম ছাড়া সুশৃঙ্খল ভাবে চলতে পারে না। তাদের সেই জ্ঞান বা সক্ষমতা নেই। কাজেই আমি বলবো, সমাজের সেই শ্রেনির জন্য ধর্ম এখনও বেশ ইতিবাচক ভুমিকা পালন করতে পারে।

বর্তমানে ধর্মের সর্বাধিক যে উপযোগ-প্রয়োজনটা দেখা দিয়েছে, আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি না। আমাদের সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আসহায় হয়ে আত্মহত্যা অথবা নানান ধরনের অবক্ষয়ে পরছে। এছাড়া নেশা আর অপরাধ জগত থেকে ফিরতে ইচ্ছুকরা তো আছেই। অথচ ধর্মিয় ব্যাবস্থা গুলো এসবে একটু এগিয়ে এলে, সামাজিক এই সমস্যা অনেকটা কমানো যাবে। অনেক অল্প বয়েসিদের অভিভাবকরা বখে যাওয়া সন্তানদের ধর্মিয় সতসঙ্গে দিতে চান। কিন্তু আমাদের দেশে সেসব তাদের উপযোগি নয়; উপযোগি করারও কোন উদ্যোগ নেই। সেগুলো শুধু দরিদ্র-এতিমদের কোন মতে খাইয়ে পরিয়ে ধর্ম সংক্রান্ত পেষাতেই সংস্থাপন করছে। কিন্তু সমাজে হঠাত বিপথ গ্রস্থ বা অবস্থান চ্যুতদের জন্য কোন ব্যাবস্থা নেই। তাবলিগ জামাতের ইজতেমা আর চিল্লার মত আয়োজন থাকলেও প্রকৃত পক্ষে তা সমাজের বেশিরভাগ মানুষের সুবিধাজনক বা পছন্দের হতে পারে নি। আরো ভালো এবং দির্ঘ মেয়াদি এবং ধার্মিক নয় এমনদেরও উপযোগি আয়োজন দরকার। বৌদ্ধ বিহার বা হিন্দু মঠ গুলোও লোক চক্ষুর অন্তড়ালের এসব মানুষের আশ্রয় হতে পারে নি। অথচ স্থাপনা এবং ব্যাবস্থাপনা কাঠামো সবারই কম-বেশি রয়েছে। সুষ্ঠু পলিসি করে, সরকার নজরদারি করলে সরকারি-বেসরকারি অনুদানে এগুলো আরো বাড়ানো যাবে, সুন্দরও করা যাবে। পাশাপাশি সহনশিল ধর্মিয় আনুষ্ঠানের আয়োজন করলে, সমাজ বিশেষ ভাবে উপকৃত হবে।